
জেলা প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি :
চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওন্যাল স্টাডিজ বাংলাদেশের (সিসিআরএসবিডি) উদ্যোগে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ মিলনায়তন স্থায়ী ক্যাম্পাস বায়েজিদ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা জোরদারে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী অঙ্গীকার’ বিষয়ক আঞ্চলিক সংলাপের অনুষ্ঠিত হয়।
রবিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা জোরদারে রাজনৈতিক দলগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কেবল একটি আঞ্চলিক অগ্রাধিকার নয় বরং একটি জাতীয় অপরিহার্যতা। রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী বক্তব্যের সীমা অতিক্রম করে বুদ্ধিবৃত্তিক স্বচ্ছতা, কৌশলগত দূরদৃষ্টি এবং নীতিনির্ভর চিন্তার পরিচয় দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ়করণ,গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সংলাপে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কেবল একটি আঞ্চলিক অগ্রাধিকার নয় বরং একটি জাতীয় অপরিহার্যতা। রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনি বক্তব্যের সীমা অতিক্রম করে বুদ্ধিবৃত্তিক স্বচ্ছতা, কৌশলগত দূরদৃষ্টি এবং নীতিনির্ভর চিন্তার পরিচয় দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ়করণ, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন, সিসিআরএসবিডির চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী চৌধুরী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ও সিসিআরএসবিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহফুজ পারভেজ।
সিসিআরএসবিডি ও পরিচালক অধ্যাপক সরওয়ার জাহানের সঞ্চালনায় সংলাপে প্যানেল আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী, সিনিয়র সাংবাদিক কবি ওমর কায়সার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মং রাজা মংপ্রু সাইন বাহাদুর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কুমার সুইচিংপ্রু সাইন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিচালক, চাকসু কেন্দ্র, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান চৌধুরী এবং সংলাপের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন চবির আইকিউএসির পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোশারেফ হোসেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) ড. শরীফ আশাফউজ্জামান, ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহ মুহাম্মদ সুলতান ইকবাল।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. মাহফুজ পারভেজ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম (সিএইচটি) বাংলাদেশের সবচেয়ে সংবেদনশীল এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল গুলোর মধ্যে একটি, জাতিগত বৈচিত্র্য, ঐতিহাসিক অভিযোগ এবং মাঝে মাঝে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ দ্বারা চিহ্নিত। জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, নীতি নির্দেশনা এবং কৌশলগত প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করা সব রাজনৈতিক দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি সত্ত্বেও বেশ কিছু অমীমাংসিত সমস্যা—প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, ভূমি বিরোধ, নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং আন্তঃসাম্প্রদায়িক আস্থার ঘাটতি টেকসই শান্তিকে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে। নির্বাচনি ইশতেহারগুলো প্রায়ই এ বিষয়ে নীরব বা অস্পষ্ট থাকে। এই নীতি নোটটি যুক্তি দেয় যে রাজনৈতিক দলগুলোকে এই অঞ্চলের প্রতি তাদের ভূমিকা এবং দায়িত্ব সংজ্ঞায়িত করার জন্য আরও স্বচ্ছ, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নীতি—চালিত পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পটভূমি, সমস্যা বিবৃতি, নীতির উদ্দেশ্য, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রত্যাশিত প্রতিশ্রুতি, নীতি এবং কৌশলের জন্য গাইডিং নীতিসহ বিভিন্ন সুপারিশমালা তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি নিচের ১৫টি সুপারিশ উপস্থাপন করেন।
১. শান্তিচুক্তির স্পর্শকাতর ও পরস্পরবিরোধী ধারা খ—২৪ এবং ঘ—১৭ ধারা পুনর্মূল্যায়ন করে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সেনাক্যাম্প বহাল রাখা এবং ও পুলিশের নিয়োগে পাহাড়ি—বাঙালি সমতায়ন।
২. ভূমি কমিশন আইন সংশোধন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতার স্থলে কমিশনের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সিদ্ধান্ত প্রতিস্থাপনপূর্বক গণতন্ত্রায়ন করা।
৩. ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির আগে সঠিক জরিপের মাধ্যমে সরকারি খাস, বসবাসকারী বাঙালি ও পাহাড়িদের জমি শনাক্তকরণের কাজ সম্পন্ন করা।
৪. আঞ্চলিক ও জেলা পরিষদ সমূহের নির্বাচন ৫ বছর পর পর করার আইন থাকলেও তা অদ্যাবধি বাস্তবায়িত হয়নি। বিধান নির্বাচনের মাধ্যমে জনমতের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করা।
৫. বাঙালি ও পাহাড়ি উভয় গোষ্ঠীর আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে চিহ্নিত করা।
৬. বৈষম্য দূরীকরণে ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে চাকরি এবং উচ্চশিক্ষায় কোটা-ট্যাক্স বৈষম্য, ব্যবসা ও লাইসেন্স ফি, জমিক্রয় বৈষম্য দূর করা।
৭. সন্ত্রাস, অপহরণ, চাঁদাবাজি, অস্ত্র—মানব—মাদক পাচারে নিয়োজিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসমূহের বিরুদ্ধে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়তে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৮. সংখ্যা—সাম্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন পদ বণ্টন ও উন্নয়ন বরাদ্দের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য বিধান করা।
৯. দেশি—বিদেশি প্ররোচণায় বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধের জন্য রাজনৈতিক সামাজিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা করা।
১০. গোষ্ঠীবাদী—বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনৈতিক মনোভাব ত্যাগ করে সব রাজনৈতিক দল ও নেতাদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা জোরদারে সুস্পষ্ট নির্বাচনি অঙ্গীকার প্রকাশ ও তা বাস্তবায়ন করার দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
১১. সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও গোষ্ঠীগত উত্তেজনা প্রশমনে দল ও নেতাদের রাজনৈতিক উদ্যোগ সংলাপ, আলাপ—আলোচনার মাধ্যমে সক্রিয় হওয়া।
১২. পার্বত্য চট্টগ্রামের নানামুখী সমস্যাকে সামরিক দিকে ঠেলে দেওয়ার প্রবণতা ত্যাগ করে দল ও নেতৃত্বকে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আন্তরিকতা ও দক্ষতায় সব সংস্থা ও জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা।
১৩. শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের প্রতি বিরোধিতামূলক মনোভাবাপন্ন দল ও নেতাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বন্ধ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা।
১৪. সীমান্তে অনুপ্রবেশ ও নাশকতা রোধে নজরদারি বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে তথ্য আদান—প্রদান ও সমন্বয় করার মাধ্যমে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা।
১৫. আর্থিক উন্নতি, মানবসম্পদ বিকাশ, দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ, পর্যটন, হোটেল ম্যানেজমেন্ট খাতকে এগিয়ে নিতে দল ও নেতাদের পক্ষে বিদ্বেষী মনোভাব ত্যাগ করে সহযোগিতামূলক অবস্থান।
