পাহাড়ে জুমের ধান ভালো ফলন না হওয়াই দুশ্চিন্তায় জুমিয়ারা

0
37

।। আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান।।

পাহাড়ের জুমের পাকা ধানের গন্ধ ছড়ালেও এবছরে তেমন জুমের ধান তেমন ভালো হয়নি জেলা বান্দরবানের। চলতি বছরের অনাবরত বৃষ্টি হওয়া ও প্রয়োজন সময়ের খরা রোদ্রে কারণে জুমের ফসল ভালো হয়নি। জুমে সাথী ফসল হিসেবে মারফা,মরিচ, তিল ভুট্টাও একই চিত্র। যার ফলে বছর জুড়ে খাবার নিয়ে আশঙ্কা দিন কাটছে জুমিয়ারদের।

এই বছরে জুমের ধান লাগানো শুরু থেকেই অনাবরত বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। ভারী বৃষ্টি কারণে পাহাড় ধ্বসে জুমের ধান চারা ভেসে গেছে। জুমের সাথী ফলসও একই চিত্র। সেসময় গাছে ধান ধরলেও খরা রোদের কারণে ধানের গাছে চারা শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। সবশেষে যারা জুমের ধান লাগিয়েছিল সেসব জুমিয়াদের একই চিত্র। ভারী বৃষ্টিপাত কারণে ধানগুলো মাটিতে পড়ে নষ্ট গেছে। নির্দিষ্ট সময়ে জুমের ধান রোপনের সময় পরিমানে বৃষ্টি এবং ধান পরিপক্ব হওয়ার সময় রোদ পায়নি। যার কারণে প্রতিটি জুমে ধান ভালো হয়নি। আর সাথী ফসল তেমন ভালো ফলন না হওয়াই ভালো মত বিক্রি করতে পারছে নাহ জুমিয়ারা।

বছরে শেষে দু মাস আগে জুমের জায়গা নির্ধারণ করে থাকে জুমিয়ারা। নতুন বাংলা বছর শুরুতেই বৃষ্টিপাতে জন্য উপেক্ষা করে জুমের ধানের চারা রোপণ করে। কিন্তু রোপনের সময় খরা কারণে অধিকাংশ ধান মাটিতে নষ্ট হয়ে গেছে। যারা আগে জুমে ধান লাগিয়েছিল সেসব জুমিয়ারা এই মাসের মধ্যদিকে প্রথম কাটতে শুরু করেছে। তবে সেসব জুমিয়াদের ভালো ফলন হয়নি। পরে যারা জুমে ধান লাগিয়েছিল তারা অক্টোবর মধ্যখান দিকে কাটা শুরু হবে। তাদেরও ভালো ফলন হয়নি। ফলে ঘরে ঘরে জুম ধানের নবান্ন উৎসব হবে কীনা এই সঞ্চয় কাটেনি জুমিয়াদের।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য, গেল বছরে ৮ হাজার ৫৪০ হেক্টর জায়গায় জুমের ধান চাষ হয়েছে । উৎপাদন হয়েছিল ১০ হাজার ৪৮৯ দশমিক ৭১ মেট্রিকটন। চলতি বছরে ৭ হাজার ৪৬০ হেক্টর জায়গায়তে জুম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ২৬৭ হেক্টর জায়গায়। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৭১ মেট্রিক টন। যা গেল বছরে তুলনায় অনেকটাই কম।

এ বছর বৃষ্টির উপেক্ষা করে জুমিয়ারা নিদ্দিষ্ট সময়ে চেয়ে বেশী জুমের ধান রোপণ করতে হয়েছে। যার কারণে কোন কোন এলাকায় খাবারের অভাবে কাঁচা ধান কাটাতে শুরু করেছে আবার কোথাও জুমের ধান পেকেছে। মাস পরে যারা লাগিয়েছিল জুমের ধান এখনো সবুজ। কেউ কাটছে আবার কয়েকটি জুমে চাষিরা ধান কাটার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। এবছরে আবাহাওয়া প্রতিকুলতা না থাকার কারণে জুমের ধান ভালো ফলন হয়নি বলে জানিয়েছে জুমিয়ারা।

জুমিয়া মিলন ত্রিপুরা বলেন, ‘এ বছর ৫ একর পাহাড়ে ১২ আড়ি ধানের জুম করতে পেরেছি। এ বছর জুমের ধান তেমন ভালো হয়নি। যখন বৃষ্টির দরকার ছিল, তখন বৃষ্টি হয়নি। যখন রোদ দরকার ছিল, তখন অতিবৃষ্টি হয়েছে।

আরেক জুম চাষী দিমুল কুমার তংচঙ্গ্যা বলেন, এভাবে তিন একর জুম চাষ করেছে। জুমের মধ্যে সাথী ফসল হিসেবে ভুট্টা, হলুদ মরিচ লাগিয়েছে। পোকামাকর তেমন ক্ষতি না হলেও বন্যা কারণে জুমের ধান ক্ষতি হয়েছে। এতে বছর নিয়ে চিন্তায় ভাজ পড়েছে।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. হাসান আলী জানান, পার্বত্য অঞ্চল হওয়ার কারণে বৃষ্টির সব জায়গায় সমানভাবে হয় না। ফলে একেক জায়গার ফলন একেক রকম হয়ে থাকে। যে কারণে উৎপাদনে তেমন ভালো হয়নি। বান্দরবানে চলতি বছর প্রায় ৮হাজার ৩০০ হেক্টর জায়গায় জুম আবাদ হয়েছে। তবে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে গেল বছরে তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here