
আকাশ মারমা মংসিং।।বান্দরবান।।
বিদ্যুতের শহরেই তাদের বসবাস, কিন্তু বিদ্যুতের দেখা তারা পান না। বিদ্যুৎ আসছে-আসবে-এই আশায় আশায় দিন, মাস ও বছর কেটে যায়। বিদ্যুতের আলোর জ্বলবে এমন বুক ভরা আশা নিয়ে মারা গেছেন অনেক বয়স্কের মানুষ। তবুও এখনো ফোটেনি বিদ্যুতের আলো। ২০০ বছরেও বিদ্যুতের আলো দেখা পায়নি বান্দরবান সদর উপজেলা কুহালং ইউনিয়নের বাকিছড়া বটতলী পাড়া গ্রামের বাসিন্দারা। এ যেন প্রদীপের নিচেই অন্ধকারের গল্প!
বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে বাকিছড়া বটতলী পাড়া গ্রাম। সেই গ্রামের মারমা সম্প্রদায়ের বসবাস। অধিকাংশ পরিবার জুম ও কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। পাহাড়ের বিস্তৃত জুম চাষ ও পতিত জমিতে কৃষিকাজ করে চলে পরিবারের সংসার। কিন্তু শহরে পাশে থেকেও যুগের পর যুগ ধরে দেখেনি বিদ্যুতের আলো। শুধু হারিকেন ও সোলার আলো দেখে জীবনদশা পাড় করে দিয়েছে সেই গ্রামের মানুষ। সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকলেও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সন্ধ্যায় হলে নেমে আসে ভূতুড়ে পথহীন-দেশ।
গ্রামের শিশুদের শিক্ষার মান নিশ্চিত জন্য রয়েছে একটি পাড়া কেন্দ্র। যেটি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অধীনে টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের ১৯৯৬ সালের তৈরী করা হয়েছে। তবে শিক্ষার আলো পেলেও বিদ্যুতের আলোর জন্য হাহাকার এলাকার বাসিন্দাদের। শহরে পার্শ্ববর্তী হয়েও সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত গ্রামের মানুষ। বিদ্যুতের জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় গরমকালে। গরম থেকে বাঁচতে বাড়ির আঙিনায় নানা গাছপালা ও সৌরবিদ্যু (সোলার) লাগিয়েছেন। আবার অনেক পরিবার আর্থিক অস্বচ্ছলতা কারণে ঘরে জ্বলছে কুপি আলো।
বাকিছড়া মুল ফটক সড়ক বেয়ে চলে গেছে বিদ্যুৎতের খুটি ও লাইন। কিন্তু সেই খুটি লাইনের সংযোগ সড়কের গেলেও গ্রামে এখনো পৌছাতে পারেনি বিদ্যুতের খুটি। জনপ্রতিনিধিরা আশ্বাসের উপর ভরসা রেখে এখনো অন্ধকারে নীচে বসবাস করতে হচ্ছে তাদের। যার কারণে এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ও কৃষি ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। কখন আলোর মুখ দেখতে পাবে এখনো জানেন না ওই গ্রামের বাসিন্দারা।
এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাকিছড়া বটতলী পাড়া গ্রামের বয়স প্রায় দুইশত বছরের। গ্রামের অধিকাংশ পরিবার কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। সেখানে সন্ধ্যা নামার আগেই গভীর রাতের নীরবতা নেমে আসে পুরো গ্রামে। রাতে ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখা করতে হয় কুপি আলোর নীচে। কেননা স্বাধীনতা বছর পর থেকে বিদ্যুবিহীন অন্ধকারে জীবনযাপন করছেন বাকিছড়া বটতলী পাড়া গ্রামে শতাধিক মানুষ। ২০২২ সাল থেকে অদ্যাবধি ঘরে কবে বিদ্যুতের আলো জ্বলবে তার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন এলাকাবাসী।
কুহালং ইউনিয়ন পরিষদ তথ্য মতে, বাকিছড়া বটতলী পাড়া, বুড়ি পাড়া,মাঝের পাড়া, ভরাখালী লাঙ্গে চরসহ আরো কয়েকটি পাড়াতে কয়েক দশক ধরে বিদ্যুৎ পৌছাতে পারেনি। যার ফলে অন্ধকারে জীবনযাপন করতে হচ্ছে সেসব গ্রাম বাসিন্দাদের। কবে নাগাদ বিদ্যু পৌছাবে সে ব্যাপারে জানেন নাহ জনপ্রতিনিধিরাও।
বটতলী পাড়া গ্রামে নবম পড়ুয়া শিক্ষার্থী হ্লামেসিং মারমা বলেন, আমার জন্মের পর থেকে গ্রামে কারেন্ট ছিল না, শুধু সোলারের আলো দেখেছি। আর বিদ্যু না থাকায় আমরা ভালো করে পড়ালেখা করতে পারছি না।
উম্যাসিং মারমা বলেন, অনেক্ষন অপেক্ষা করেছি’ কখন কারেন্ট আসবে,সামনে আসবে’ আগামীতে আসবে’ কয়েক বছর পর আসবে’ এই রকম বুক ভরা আশা নিয়ে অনেকজন মারা গেছে। তবুও কারেন্ট আসেনি। কারেন্ট না আসাতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা ঠিকমত পড়ালেখা করতে পারছে না। তাই কারেন্ট দিলে ভালো হত।
ষাট্ট বছরের বৃদ্ধা খ্যাশৈউ মারমা বলেন, কোরে কারে’ আমি ত খালিয়া মরিব’ আমি জন্মত্তন কারে নদেখিয়ে।
কুহালং ইউপি চেয়ারম্যান মংপু মারমা বলেন, এখনো কয়েকটি পাড়াতে বিদ্যু পৌছাতে পারেনি। বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে তৎকালীন এমপি বীর বাহাদুর কাঁছে দরখাস্ত দেয়া হয়েছিল। মুল ফটক সড়ক ধরে বিদ্যুতের খুটি গেলেও এখনো গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ যায়নি। কবে নাগাদ বিদ্যু পৌছাবে সে ব্যাপারে আমার জানা নাই।
বান্দরবান পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) প্রকল্প বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আমির হোসেন বলেন, এমন কিছু এলাকা আছে শহরে কাছাকাছি হয়েও বিদ্যুতের সরবরাহ পৌছাইনি’ সেসব এলাকাগুলোকে প্রকল্পের অন্তভূক্ত করেছি। যখন প্রকল্প চালু হবে তখন সেসব এলাকাগুলোতে বিদ্যুতায়ন করতে পারবো বলে আশা করছি। পাশাপাশি আমাদের সাধ্যনুসারে যতটূকু ছোটখাট এলাকা দেয়া সম্ভব সেগুলো প্রকল্প চলমান রয়েছে।