থানচিতে হেডম্যান অংসাথুই’র বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

0
96

আকাশ মারমা মংসিং।। বিশেষ প্রতিনিধি।।

বান্দরবানে থানচি উপজেলার দুর্গম ইউনিয়ন তিন্দুতে ৩৬৮ নং মিবাক্ষ্যং মৌজা হেডম্যান অংসাথুই মারমা বিরুদ্ধে নানা অপকর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই মৌজার হেডম্যান এলাকার সাধারণ মানুষকে নানা অত্যাচার করায় হেডম্যানের পদ থেকে অব্যহতি ও প্রতিকার চেয়ে অভিযোগও দাখিল করেছে ১৩টি গ্রাম গ্রামপ্রধান ও সাধারণ মানুষ।

অভিযোগ আছে, তিন্দু ইউনিয়নের ৩৬৮ নং মিবাক্ষ্যং মৌজা হেডম্যান অংসাথুই মারমা ১৩টি গ্রামের মানুষকে বিভিন্নভাবে বর্বরতার অত্যাচার করে আসছিলেন। পাড়াবাসীদের কাছ থেকে জোরপূর্বকভাবে জায়গাজমি দখল অসামাজিক কার্যকলাপ, ক্ষমতা অপব্যবহারের পাশপাশি ও কয়েকটি গ্রামকে ভেঙ্গে খন্দ খন্দ করে গ্রাম নানা অপকর্মে অভিযোগ আছে হেডম্যান বিরুদ্ধ। শুধু তাই নয় বিভিন্ন গ্রামের বসবাসরত পাড়াবাসী মাঝে সম্প্রদায়িক উষ্কানি,অধিপত্য বিস্তার ও পাড়ার প্রধান কারবারী একাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ বানিজ্যসহ নানা অভিযোগ ক্রেছে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, তিন্দুতে ৩৬৮ নং মিবক্যা মৌজা হেডম্যান দ্বায়িত্ব পালন করছেন অংসাথুই মারমা। মৌজা হেডম্যান নিয়োগ হবার পর তিনি গত ১৭ বছর নিজের মৌজায় ১৩টি গ্রামের সাধারণ মানুষকে জিম্মায় রেখে আসছিলেন। দীর্ঘ বছর ধরে পাড়ার গ্রামবাসীদের মাঝে বিবাদ সৃষ্টি, বেপোড়োয়া ভাবে অন্যায়, অত্যাচারসহ মোটা অংকে ঘুষ আদান-প্রদান করে আসছেন তিনি। তার এই অপরাধমূলক অপকর্মে লিপ্ত থাকায় মৌজাবাসী অতিষ্ট হয়ে হেডম্যান অব্যাহতি দাবীও চেয়েছেন গ্রামবাসীরা। তবে সেসব অভিযোগ বিষয়ে মিথ্যা বলে দাবী হেডম্যানের।

অভিযোগ বিষয়ে অস্বীকার করেন তিন্দু ৩৬৮ নং মিবাক্ষ্যং মৌজা হেডম্যান অংসাথুই মারমা। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধের জেলা প্রশাসক কর্তৃক অভিযোগগুলো সম্পূর্ন মিথ্যা বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক করা হয়েছে।

গ্রামবাসীদের জমির দখল, অত্যচার ও মানুষের মাঝে বিবাদ সৃষ্টি বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছুই না বলে এড়িয়ে যান।

অভিযোগকারী গ্রাম হল- ৩৬৮ নং মিবাক্ষ্যং মৌজা অন্তর্ভুক্ত ছাংওডং পাড়া, নাফাকুম পাড়া, কামশিং পাড়া, থাংলং কারবারি পাড়া, হরিশচন্দ্র পাড়া, সত্যমনি কারবারি পাড়া,রুনাজন পাড়া, দেবর্সা পাড়া, অংথোয়াই প্রু পাড়া, সাহ্লা প্রু পাড়া, চিংথোয়াই অং হেডম্যান পাড়া, ছাও ডং নতুন পাড়া ও ওয়ে লাওয়া পাড়া।

স্থানীয়দের অভিযোগ, হেডম্যান অংসাথুই মারমা দীর্ঘ বছর ধরে গ্রামবাসীদের অত্যাচার করে আসছিলেন। জায়গা দখল, টাকা ঘুষসহ নানা অপকর্ম করে গ্রামবাসীদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি তৈরি করেছিল। এসব কর্মকাণ্ড থেকে রক্ষা পেতে তার বিরুদ্ধে সুস্থ তদন্ত, যথাযথ শাস্তি ব্যবস্থা গ্রহন করা পাশাপাশি হেডম্যানের পদ থেকে অব্যহতি ও প্রতিকার চেয়ে সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুর বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন ১৩ গ্রামে গ্রামপ্রধান ( পাড়ার প্রধান)ও ১৮ জন ভূক্তভোগী সাধারণ মৌজাবাসী। পরে মন্ত্রী জেলা প্রশাসক নিকট তদন্ত করার সুপারিশ দেন। অভিযোগ পাওয়ার পর গেল বছর ৭ নভেম্বর অভিযোগ সরজমিন তদন্ত করতে দ্বায়িত্ব দেন থানচি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো: জসিম উদ্দিন একই থানা উপসহকারী পরিদর্শক এসআই মো: আলমগীর হোসেনকে।

এবিষয়ে থানা উপসহকারী পরিদর্শক এসআই মো: আলমগীর হোসেন জানান, পাহাড় পর্বত থাকায় ঘটনাস্থলে যাওয়ার সম্ভব হয়নি। অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের আগামী ৭ই ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তারিখের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু ঘরবাড়ী নির্মানে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সম্ভব হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিন্দু ইউনিয়নের ৩৬৮ নং মিবাক্ষ্যং মৌজায় ১৩টি গ্রামের মধ্যে ৩৩৮টি পরিবার রয়েছেন। সেসব পরিবার জুম আর বিভিন্ন ফলজ বাগানের চাষের উপর নির্ভর করে চলে সংসার। কিন্তু টানা কয়েক বছর ধরে গ্রামের মানুষদের জায়গা দখল, বৈষম্যেতা ও নানা অভিযোগ সহ্য করে আসছিলেন গ্রামবাসীরা। পরে হেডম্যান অত্যাচারের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে হেডম্যান অব্যাহতি দাবী চেয়ে বীর বাহাদুর বরাবর অভিযোগ দেন গ্রামবাসীরা।

অংসাথুই হেডম্যানের ছোট ভাই থোয়াইসিংমং মারমা বলেন, আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মৌজাবাসীদের পাহাড় সমান অভিযোগ থাকায় আমি অল্পভোটের হারতে হয়েছে। নিজেকে বাঁচানোর জন্য ইতিমধ্যে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগের যোগ দিয়েছে। ছাংওডং পাড়া ঘটনার ম্রো সম্প্রদায় ও মারমা সম্প্রদায় মধ্যে এ অবস্থা চলতে থাকলে যে কোন মুহুর্থে বড় ধরনে সংঘর্ষ বাঁধতে পারে। গত মাসের সংঘর্ষ হয়েছিল তখন তিন জন গুরুত্বরো আহত হয়ে হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে হয়েছে। সে হেডম্যান হিসেবে মৌজা পরিচালনা যোগ্যতা দেখছি না।

রুনাজন পাড়া বাসিন্দা হানারাং ত্রিপুরা ৪৫ বলেন, আমি ১৭ বছর পাড়ার কারবারী হিসেবে পাড়ার পরিচালনা করে আসছি। কিন্তু আমাকে না জানিয়ে অন্য একজনকে কারবারী নিয়োগ বানিজ্য করে আমার মান সম্মান নিয়ে ছিনিবিনি খেলছেন হেডম্যান সাহেব।

কামছি পাড়া বাসিন্দা সাবেক তিন্দু ইউপি মেম্বার অংছেন খুমি বলেন, আমাদের পাড়ার থেকে ৪৪ পরিবার থেকে অনেক টাকা দিয়েছি তিন বছর হলো কাউকে বন্দোবস্তি করে দেন নি।

এবিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক উম্মে আক্তার কুলছুম সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কলটি রিসিভ করেননি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here