
।।আকাশ মারমা, বান্দরবান।।
এই যেন ঘুষের আর দালাল চক্রে রাজ্য। কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলেও পাসপোর্ট অফিসে এসে বিভিন্ন দালাল চক্রে মাধ্যমে প্রতিটি ধাপে ধাপে গুনতে হবে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তবেই মিলবে পাসপোর্ট। নয়ত দিনের পর দিন বছরের পর বছর পাড় করলেও হয়রানী ছাড়া কিছুই মিলবে নাহ এসব কার্যালয়ে। প্রায় দীর্ঘ বছর ধরে দালাল চক্রে সিন্ডিকেট, অফিসের কর্মকর্তা ও আনসার সদস্যদের যোগসাজশে ঘুষের ব্যবসার চালিয়ে আসছিল বান্দরবানে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। এমন অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘুষের টাকার নেওয়ার সময় আনসার সদস্য মো: আনিছুর রহমানকে হাতেনাতেই ধরে ফেলেছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বান্দরবানে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস কার্যালয়ের পাসপোর্ট করতে প্রতিদিন আসে শতাধিক মানুষ। প্রতিদিন পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা পড়ে গড়ে ৭০ থেকে ১০০টি। কিন্তু দালাল চক্রে সিন্ডিকেট ও আনসার সদস্য ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঘুষের ব্যবসার চালিয়ে আসছিল দীর্ঘ বছর ধরে। এর মধ্যে অন্যতম পাসপোর্ট অফিসে রেকর্ড কিপার মো: মোশারফ হোসেন এবং সহযোগী আনসার সদস্য আনিছুর রহমান। দূর-দূরান্ত থেকে পাসপোর্ট করতে আসা সেসব মানুষদের চিহ্নিত করত পাসপোর্ট অফিসে আনসার সদস্য মো: আনিছুর রহমান। দীর্ঘদিন ধরে পাসপোর্ট কার্যালয়ে অফিস সহকারী মোশারফ হোসেন ও আনসার সদস্য আনিছুর রহমানে মাধ্যমে গড়ে তোলেন অর্থ লেনদেনের এক সিন্ডিকেট। কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলেও তাদের কাছে পাসপোর্ট করতে গুনতে হবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এছাড়াও সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে বিভিন্ন কথা বলে বিকাশে কিংবা নগদের মাধ্যমে চাইত টাকা। সেসব লেনদেন টাকা যেত পাসপোর্ট অফিসে সহকারী থেকে শুরু করে উর্ধতন কর্মকর্তা কাছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, বান্দরবান আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে পাসপোর্ট করতে এসে পড়তে হয় দালালের চক্রে। দারোয়ান থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে দিতে হবে ঘুষের টাকা। এসব টাকা না দিলে দ্রুত মিলবেই নাহ পাসপোর্ট। যার ফলে হয়রানী থেকে বাঁচতে দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট সম্পূর্ণ হতে গুনতে হবে কয়েক হাজার টাকা। এরপর মিলে সম্পূর্ণ পাসপোর্টের বই। নয়ত বছর পর বছর পাসপোর্ট কার্যালয় ঘোরাঘুরি ছাড়া মিলছে নাহ কোন সুরাহা। তাই দুর্নীতি ও ঘুষের মুক্ত করার দাবি সাধারণ মানুষের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বান্দরবান- বালাঘাটা সড়কের ব্রিগেড এলাকার সামনে আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়। সেখানে প্রতিদিন পাসপোর্ট করতে আসে শতাধিক মানুষ। সবসময় ভবনের ভিতর নীচে কিংবা উপরে ভীড় করতে থাকেন সাধারণ মানুষ। কেউ পাচ্ছেন পাসপোর্ট আবার কেউ দালাল সিন্ডিকেটে চক্রে মাধ্যমে চলছে কথোপকথন। এমন নানা অনিয়মের দুর্নীতি ও পাসপোর্ট করতে আসা মানুষকে হয়রানিরসহ দীর্ঘ দিন ধরে অভিযোগ ছিল বান্দরবানের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে। কিন্তু দুপুরে পাসপোর্ট কার্যালয়ে দালাল চক্রে মো: আনিস নামেএক আনসার সদস্যকে হাতেনাতে ধরে বৈষম্যের বিরোধী শিক্ষার্থীরা। তল্লাশি চালিয়ে তার কাছ থেকে অর্থ উদ্ধার করে শিক্ষার্থীরা।
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দালাল চক্রে আনসার সদস্য মো: আনিছুর রহমান বলেন, মোসারফ স্যারের কথায় আমি টাকা নিয়েছি স্যার। এছাড়া আমি আর কিছুই জানি নাহ ।
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে রেকর্ড কিপারও দালাল চক্রে অন্যতম মো: মোসারফ হোসেন সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পাসপোর্ট করতে আনসার মাধ্যমে টাকা নিয়েছি।
পাসপোর্ট করতে আসা রফিকুল বলেন, কক্সবাজার থেকে বান্দরবানে পাসপোর্ট করতে আসছি। আসার পর পাসপোর্ট করতে সব ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি। সব কিছু দেয়ার পরও আনসার সদস্য আনিছুর রহমান ১২ হাজার দাবি করে সেসব টাকা দিয়ে দি। এরপরও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে টাকা চাইতে থাকে। আজ টাকা নেওয়ার সময় হাতেনাতে শিক্ষারা ধরে ফেলে।
বৈষম্যের বিরোধী শিক্ষার্থী নজরুল বলেন, অফিস সহকারী মোসারফের কথায় টাকা নেওয়া বিষয়টি আনসার সদস্য আনিস স্বীকার করেছে। তাদের এই সিন্ডিকেট একদিনে নয় দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষদের হয়রানী করে আসছিল। তাই প্রতিটি অফিসে ঘুষ ও দুর্নীতিকে মুক্ত করতে বৈষম্যের বিরোধী শিক্ষার্থীরা অভিযান পরিচালনা করে আসছে এবং আগামীতেও দুর্নীতিমুক্ত করতে সর্বদা মাঠে রয়েছে।
এবিষয়ে বান্দরবান আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সরকারি পরিচালক আলীম উল্লাহ ভূইয়া বলেন, অভিযোগটির সাথে যারা জড়িত তাদেরকে আইডেনটিফাই করেছি। অফিসের স্টাফ মোশারফের ব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊধ্বর্তন কতৃপক্ষে জানাবো। আর আনসার সদস্যের প্রত্যাহারের জন্য আনসার বাহিনীর ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা বরাবর সুপারিশ করা হবে।