মঙ্গলবার, নভেম্বর ৪, ২০২৫
Homeআবাহাওয়াখাগড়াছড়িতে বন্যার তাণ্ডব: সেনাবাহিনী ও রেড ক্রিসেন্ট'র তৎপরতায় বিপর্যস্ত এলাকায় উদ্ধারের অভিযান

খাগড়াছড়িতে বন্যার তাণ্ডব: সেনাবাহিনী ও রেড ক্রিসেন্ট’র তৎপরতায় বিপর্যস্ত এলাকায় উদ্ধারের অভিযান

।।জেলা প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি।।

খাগড়াছড়িতে চলতি সপ্তাহের বর্ষণ পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টির কারণে শহরের নতুন নতুন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বুধবার দুপুর নাগাদ কিছুটা উন্নতি হলেও, রাতে আবারো বৃষ্টি ও উজানের পানি আসায় নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি এলাকা। নিম্নঅঞ্চলে প্লাবিত হয়ে হাজারের বেশি পরিবার পানি বন্দী হয়েছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আমান হাসান এবং সদর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল হাসনাত জুয়েল মাঠে নেমে পড়েন। তারা আটকে পড়া শিশু, নারী ও বয়স্কদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন।

সেনাবাহিনীর পাশাপাশি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকেরা বিভিন্ন উপজেলা থেকে বানভাসি মানুষকে উদ্ধার করে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, খাগড়াছড়ি পৌর শহরের সাতটি সড়কে পানি সয়লাব হয়ে গেছে। চেংগী নদীর পানি কমে যাওয়ার পরেও রাতের ভারী বৃষ্টির কারণে সকালবেলায় আবারো পানিতে তলিয়ে গেছে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো। পৌরসভার মহিলা কলেজ সড়ক, সবজি বাজার, গঞ্জ পাড়া, গরু বাজার, শান্তিনগর, শব্দ মিয়া পাড়া এবং মুসলিম পাড়া সড়কসহ সাতটি সড়কে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সাজেক সড়ক ৩ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে।

নতুন করে ডুবে গেছে খাগড়াছড়ি গেট, কলেজ রোড, মহালছড়ি সড়ক, দীঘিনালা লংগদু, বাঘাইছড়ি এবং সাজেক সড়ক। মাটিরাঙ্গা উপজেলায় তাইন্দং ও তবলছড়ি সহ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানছড়ি উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামও পানির নিচে চলে গেছে। দীঘিনালা উপজেলার মাইনি নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে মেরুং ইউনিয়নের নিচু এলাকার গ্রামগুলো তলিয়ে গেছে।

শহরের পাশাপাশি খাগড়াছড়ি পৌরসভা, জেলা বিএনপি এবং বিভিন্ন মানবকল্যাণ সংস্থা বন্যার্তদের মধ্যে খিচুড়ি এবং শুকনো খাবার বিতরণ করছে। পানিবন্দী মানুষদের মতে, শহরের পানির সমস্যা নদী-নালা, খাল ও ড্রেনের অপর্যাপ্ত সংস্কারের কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা জানান, যদি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হত না।

খাগড়াছড়ি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল্লাহ্ জানান, যুব রেড ক্রিসেন্ট’র সব কর্মীরা বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। সোসাইটির জাতীয় অফিসে জরুরী বার্তায় জেলার দুর্যোগ পরিস্থিতি জানানো হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহ করা হবে।

পৌর প্রশাসক ও উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) নাজমুন আরা সুলতানা জানান, খাগড়াছড়িতে পানিবন্দী মানুষের সহায়তায় ১০৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী মানুষের জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪০০ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য বরাদ্দ করা হয়েছে এবং খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় ১২ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য বিতরণ করা হয়েছে। প্রায় ২,৫৫০ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আরো ত্রাণ সরবরাহ করা হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

পাঠকের মতামত

error: