পাহাড় জুড়ে সুবাস ছড়াচ্ছে আমের মুকুল

0
40

আকাশ মারমা মংসিং।। বান্দরবান।।

রসালো ফল আম। কাঁচা অথবা পাকা তা কার না পছন্দ। আম তো পরে’ আগে আমের মুকুল। শীতকাল প্রায় শেষের দিকে। এরই মধ্যে বসন্তের আবাস। গাছের ডালে হিমেল হাওয়ায় দুলছে আমের মুকুল। পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের ‘মামার বাড়ি’ কবিতার পংক্তিগুলো বাস্তবে রূপ নিতে বাকি রয়েছে মাত্র কয়েক মাস। তবে সুখের ঘ্রাণ বইতে শুরু করেছে। এমনই দৃশ্যের দেখা মিলেছে বান্দরবান শহরসহ প্রতিটি গ্রাম ও পাহাড়ের আনাচে কানাচে। দৃশ্যটি যে কাউকেই কাছে টানবে। দুরন্ত শৈশবে কাঁচা-পাকা আম পাড়ার আনন্দ অনেকেরই স্মৃতিতে চির অমর।

বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় সড়কে, বাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা বাগান জুড়ে গাছে গাছে ফুটে আছে আমের মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এই মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মৌ মৌ গন্ধ। যে গন্ধ মানুষের মনকে বিমোহিত করে তুলে। পাশাপাশি মধুমাসের আগমনী বার্তা শোনাচ্ছে আমের এই মুকুলগুলো। হলুদ রঙের আমের মুকুলের মনকাড়া ঘ্রাণ। এ যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। চারদিকে ছড়িয়ে পড়া মুকুলের ঘ্রাণ প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করছে। মৌমাছির দল ঘুরে বেড়াচ্ছে গুনগুন শব্দে। ছোট পাখিরাও মুকুলে বসেছে মনের আনন্দে। পাশাপাশি জানান দিচ্ছে মধুমাসের আগমনী বার্তা।

জানা গেছে, পাহাড়ের প্রত্যাঞ্চলসহ শহরের কিনারায় মানুষের জীবিকার একমাত্র প্রধান উৎস জুম চাষ। জুম চাষের পাশাপাশি অনেকে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ফলজ বাগান। পাহাড়ের পাদদেশে বর্তমানে চাষ হচ্ছে আম, আনারস ও বিভিন্ন জাতের বরই । এসব চাষের আগ্রহ বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোও কাজ করছে। কৃষকদের মাঝে দেওয়া হচ্ছে সার, বীজ, চারা বিতরণের পাশাপাশি বাগান পরিচর্যায় প্রশিক্ষণ। ফলে অনেকে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ফলজ বাগান করছেন এবং অনেক বাগান চাষি হয়েছেন স্বাবলম্বীও। তবে গত বছরে নিদ্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টি না হওয়াই আমের ফলনের কিছুটা বিঘ্নটা ঘটেছে। তবে এই বছরে আমের মুকুল পর্যাপ্ত পরিমান ধরাতে ভালো ফলনের আশা করছে চাষিরাসহ কৃষিবিভাগ।

প্রান্তিক চাষিরা জানিয়েছেন, এ বছর গাছে মুকুলের পরিমাণ বেশি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং সময়মতো পরিচর্যা হলে চলতি মৌসুমে আমের ভালো ফলন হবে। আর এ কারণেই আশায় বুক বেধে আমচাষীরা শুরু করেছেন পরিচর্যা। তাদের আশা, চলতি মৌসুমে তারা আম থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। তবে আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কাও কাজ করছে। পরিস্থিতি অনূকূলে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে বলে জানান তারা।

কৃষি বিভাগ তথ্য মতে, বান্দরবানে গেল বছরে ৯ হাজার ৮০৯ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমের চাষ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল এক লাখ ১১ হাজার ২০৭ মেট্রিক টন আম। চলতি বছরে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ লক্ষ্যেমাত্রা রয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ১২ হাজার মেট্রিকটন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় এখন গাছে গাছে আমের মুকুলের সমারোহ। চিম্বুক,লাইমি পাড়া, কানা পাড়া, ও বসন্ত পাড়া সহ গাছে গাছে ছেয়ে গেছে আমের মুকুল। পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা। পাহাড়ের পাদদেশে আম্রপালি,রুপালী,রাংগোয়ে ও কার্তিক্সহ প্রায় কয়েকজাত আমের চাষ হচ্ছে। তাছাড়া বেশ কিছু এলাকায় মুকুল থেকে রুপান্তরিত হয়েছে আমের। আমের ভালো ফলন হতে গাছে গাছে ছেটাচ্ছে স্প্রে। অনেকেই আবার বাগান কিংবা আম গাছের পরিষ্কার ও পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত চাষিরা।

চিম্বুক পাহাড়ের প্রান্তিক কৃষক তোয়ে ম্রো, রেংলো ম্রোরা জানিয়েছেন, গত বছরে শুরুতেই আমের ভালো ফলন হলেও মধ্যখানে বর্ষায় আম সবগুলো পরে গেছে। আবাহাওয়া আনুকুলে না থাকায় তেমন লাভজনক হয়নি। তবে শেষ মৌসুমে এসে ভালো দাম পাওয়াতেই কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছি। পাহাড়ের সবচেয়ে চাহিদা রয়েছে রুপালী, রাংগোয়ে ও কার্তিকীমন।

বান্দরবান কৃষিসম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক এম.এম. শাহ্ নেওয়াজ বলেন, এবার বৃষ্টিপাত ভালো হওয়ায় পাহাড়ে ৮০ শতাংশ আম গাছে মুকুল এসেছে। চাষিরা কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচর্যা করতে পারলে চলতি মৌসুমে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আম উৎপাদন সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, গেল মৌসুমে আবাহাওয়া কিছুটা বিঘ্ন ঘটানো কারণের অর্থাৎ বন্যার হওয়াই ফলে আমের ভালো না হলেও শেষে এসে ভালো দামে পেয়েছে চাষিরা। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here