ত্রিপুরাদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসু উদযাপন

0
51

বিশেষ প্রতিনিধি।। বান্দরবান।।

ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসব হলো বৈসু। চৈত্র মাসের শেষ দুইদিন এবং বৈশাখ মাসের প্রথম দিন এই তিন দিন ব্যাপী এ উৎসব পালন করা হয়। বান্দরবানের থানচিতে এই উৎসব যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়েছে।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে বৈসুমা দিন উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সড়কে নারী পুরুষ, তরুন তরুণীদের অংশগ্রহণে বিশাল আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। আনন্দ শোভাযাত্রায় শতশত নারী পুরুষ, তরুন তরুণীরা গরাইয়া তালে তালে নেচে গেয়ে আনন্দের মেতে উঠেন। বৈসু উৎসব প্রথম দিনকে বলা হয় হারি বৈসু, দ্বিতীয় দিনকে বৈসুমা এবং তৃতীয় বা শেষ দিনটিকে বলা হয় বসিকতা। মূলত পুরানো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়াই হলো উৎসবের মুল উদ্দেশ্য।

সকালে মারমা ও ত্রিপুরাদের যৌথ আয়োজনে আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।এসময় পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য বাশৈচিং চৌধুরী, বলিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াঅং মারমা, বলিপাড়া ইউনিয়ন মারমা সম্প্রদায়ের যুব সমাজের সভাপতি অংচনু মারমা, ত্রিপুরা স্টুডেন্ট কাউন্সিল বলিপাড়া শাখা সভাপতি ভাগ্যমনি ত্রিপুরা, মারমা ও ত্রিপুরাদের সামাজিক নেতৃবৃন্দ, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ, মারমা ও ত্রিপুরা সমাজের তরুন তরুণীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বাসিল মরো পাড়া কারবারি ও বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ, বলিপাড়া উপ আঞ্চলিক শাখা সভাপতি বার্নাড ত্রিপুরা এই প্রতিবেদককে বলেন, গতকাল হারি বৈসু দিনে ভোরে ঘুম থেকে উঠে ত্রিপুরাদের ঘর সাজাতে শুরু করে। বসতবাড়ি, কাপড় চোপড় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও ধোঁয়া মুছা করে ফেলে। গবাদি পশুদের গোসল করানো হয় এবং ফুল দিয়ে ঘর সাজিয়ে রাখে। মহিলারা বিন্নি চালের পিঠা ও চোলাই মদ তৈরি করা শুরু করে। পাড়ার মধ্যে ধান ছিটিয়ে হাঁসমুরগির খাবার দেয়া হয়। হারি বৈসু উৎসবের দিন থেকে ত্রিপুরাদের গরাইয়া নৃত্য পরিবেশন করা শুরু করে।

সাবেক বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ, বলিপাড়া উপ আঞ্চলিক শাখা সভাপতি ও ক্যচু পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রাফায়েল মনিরাম ত্রিপুরা এই প্রতিবেদককে বলেন, আজ বৈসুমা দিন, উৎসবের দ্বিতীয় দিন। পুরানো বছরকে বিদায় জানিয়ে নববর্ষকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নেয়ার দিন। সবাই গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুর বেড়াবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেমাই, মিষ্টি, কলা পাতা পিঠা, বিন্নি চালের পিঠা, বাঁশের চুংগা পিঠা খাওয়া হচ্ছে। এছাড়া এদিন ত্রিপুরারা নিরামিষ ভোজন করে। কোনো প্রাণি হত্যা করেন না। কারন বছর শেষ দিন।

হালিরাং পাড়া কারবারি ও বর্তমান মেম্বার পিতরাং ত্রিপুরা এই প্রতিবেদককে বলেন, আগামীকাল বসিকতা। সেই দিন বয়োজ্যেষ্ঠদের গোসল করিয়ে তরুন তরুণীরা আর্শীবাদ গ্রহণের জন্য প্রনাম করবে। কেউ কিছু না খেয়ে ফিরে যেতে না হয় সেজন্য সারাদিন ঘরের দরজা খোলা রাখা হবে। এতে গৃহস্থের কল্যাণ হবে বলে মনে করেন ত্রিপুরারা। খাওয়া দাওয়া, আনন্দ ফুর্তি করে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here