
রাজস্থলী প্রতিনিধি।। রাঙ্গামাটি।।
রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের কুটুরিয়া পাড়া (কুদুমছড়া) নাম্বামে পাড়াটি পরিচিত। ১৯৯০ সনে পাড়াটি স্থাপিত হয়। বাঙ্গালহালিয়া বাজার থেকে ১০-১৫ মিনিট গাড়ি যোগে পাবনাটিলা ও শফিপুর এলাকার পাশ ঘেঁষে পাড়াটি অবস্থিত।পাড়ায় ছোট বড় ৮০ টি পরিবারের বসবাস। বর্তমান সরকারের আমলে পাড়াটির যাতায়াতের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে। পাড়ায় রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাশে রয়েছে কুটুরিয়া পাড়া বৌদ্ধ বিহার। যে বিহারটি দিন দিন জনপ্রিয় তথা বৌদ্ধ ধর্ম অবলম্বীদের একটি তীর্থস্থানে রুপান্তরিত হওয়ার পথে। অবকাঠামো উন্নয়নের অভাবে পিছিয়ে আছে বৌদ্ধ বিহারটি। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে রাজস্থলী দি বুদ্ধ সাসনা হিতাকারীর এসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনায় নিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত লাভ করছে কুটুরিয়া পাড়া বৌদ্ধ বিহার। সেখানে তিন পার্বত্য জেলা থেকে প্রতি বছর শত শত দায়ক-দায়িকা ছয় দিন ধরে বিহারের থেকেই বিদর্শন ভাবনা কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। কুটুরিয়া পাড়া বৌদ্ধ বিহারটিতে নেই তেমন অবকাঠামো , রয়েছে টয়লেটের সমস্যা। বিশেষ করে শীতকালীন সময়ে বিদর্শন ভাবনা কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রচন্ড কষ্ট হলেও কর্মশালায় অংশ নিতে আশা দায়ক – দায়িকাগণ তাঁবু টাঙ্গিয়ে চার পাশে ডেকারশনের কাপর ভাড়া নিয়ে তিন চার টি অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে থাকতে হয় তাদের। বিহারটি রয়েছে পর্যাপ্ত জায়গা, রয়েছে একটি সুন্দর মাঠও। পাড়ার বসবাসরত পরিবার গুলো সকলেই সাদা মনের।
কাউখালী বেতবুনিয়ার বাসিন্দা অংসাপ্রু মারমা বলেন, নিদর্শন ভাবনার মধ্যে নির্মাণ পথগামী আমরা তাই পরকালে কে কোথায় যাবে এবং নিজ গন্তব্য নিজেই যাচাই করা একটি মাধ্যম বলে মনে করি। বিশেষ করে প্রতি বছর কুটুরিয়া পাড়া বৌদ্ধ বিহারের আয়োজিত নিদর্শন ভাবনা কর্মশালায় তিন পার্বত্য জেলার বয়স্ক ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করে থাকেন। পাড়ার যুব প্রধান উসাহ্লা মারমা বলেন পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে বয়স্ক ব্যক্তিরা আমাদের বিহারে ধর্মদেশনা করতে আসেন বলেই আমরা পাড়াবাসী খুব আনন্দিত হয়। চেষ্টা করে থাকি তাদের সেবা দেওয়ার জন্য। তাদের যেন কোন প্রকার সেবার কমতি না হয়। কুটুরিয়া পাড়া বৌদ্ধ বিহারের বিহার অধ্যক্ষ উঃ চাইন্দাসারা ভিক্ষু বলেন বিহারের পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা রয়েছে (৫ একর)। বিহারটি দীর্ঘ দিন আগে নির্মিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে যে নতুন বিহারটি নির্মিত হচ্ছে প্রথম ধাপে পিলার গুলো উঠেছে। আগামী মাসে ছাঁদের কাজ শুরু করার কথা রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বলে জানান।
তিনি আরো বলেন, সামনে যে মাটি রয়েছে সেটি পাড়া বাসী থেকে তুলে অনুদানের প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা খরচ করে মাটি কেটে সমান করা হয়েছে বলে জানান। তবে বিহারের পাশে দুইটি দায়ক – দায়িকাদের থাকার জন্য একটি তিন তালা ভবন নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
বুদ্ধ সাসনা হিতাকারীর এসোসিয়েশনের সভাপতি ও রাজস্থলী চুশাক পাড়া বৌদ্ধ বিহারের বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত কিত্তিমা মহাথের বলেন বিদর্শন হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ও সর্বোপরি একটি ধাপ যা দান,শীল ও ভাবনার মাধ্যমে দিয়ে যেতে হয়। এটির শেষ লক্ষ্য হচ্ছে (নির্বান)।বিদর্শন- জীবনকে বিশেষভাবে দেখা বা জানার নামই বিদর্শন।দর্শনের ধারাকে বিশেষভাবে বিশ্লেষিত অবস্থায় নির্ধারন করে বলেই বিদর্শন। এ বিদর্শন অনুশীলনের সাথে সাথে যোগী প্রত্যক্ষভাবে ভাবনার স্বরুপ উপলদ্ধি করতে সমর্থ হন। এ বিদর্শন পথই নির্বাণ লাভের সহজ উপায়। এ ছাড়া এ- ভাবনার অনেক উপকারীতা আছে। বাঙ্গালহালিয়া কুটুরিয়া পাড়া বৌদ্ধ বিহারের জায়গাটি সুন্দর বলেই প্রতি বছর বিদর্শন ভাবনা কর্মশালা এখানে হয়।বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আদোমং মারমা বলেন আসলে আমরা অনেক ভাগ্যবান বলে মনে করি। তিন পার্বত্য জেলা থেকে প্রতি বছর কুটুরিয়া পাড়া বৌদ্ধ বিহারে বিদর্শন ভাবনা কর্মশালায় অংশ নিতে প্রায় দেড় শতাধিক দায়ক- দায়িকা বিহাটিতে আসেন । এমন শীতের সময়ে মাঠের পাশে তাঁবু টানিয়ে তাদেরকে থাকতে দিতে হয়, দেখতে খুব কষ্ট লাগে। ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান। বিহারটিতে তিন তালা বিশিষ্ট একটি দায়ক – দায়িকা ভবন নির্মাণ সহ বেশ কয়েকটি টয়লেট নির্মাণ জরুরি বলে মনে করেন।
এই বিষয়ে রাঙ্গামাটি জেলার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপির সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, বাঙ্গালহালিয়া কুটুরিয়া পাড়া বৌদ্ধ বিহারের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে সুপারিশ করেছি। দ্রুত দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হবে। তবে বিদর্শন ভাবনা কর্মশালায় অংশ নিতে আসা দায়ক-দায়িকাদের জন্য একটি বহুতলা ভবন নির্মাণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলে জানান।