সোনারগাঁওয়ে ৪০ বছরের ভোগদখল করা জমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ

0
10

আরাফাত হোসেন বেলাল। লংগদু।।

রাঙামাটির লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নের সোনারগাঁও এলাকায় জমি দখলকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রায় ৪০ বছর ধরে ভোগদখল করে আসা জমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস ও তার পরিবার। অভিযোগের তীর উঠেছে বিএনপির স্থানীয় এক নেতার জামাই মোহাম্মদ আলী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে।

পুরনো বিরোধ, নতুন উত্তাপ:

আব্দুল কুদ্দুস জানান, “১৯৮০ থেকে ৮৪ সালের মধ্যে আমার দাদার সঙ্গে জমি নিয়ে মামলা চলছিল। পরে ১৯৯১ সালে পারিবারিকভাবে আপোষের মাধ্যমে উভয়পক্ষ নিজেদের মতো করে বসবাস শুরু করি। কিন্তু সম্প্রতি রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের পর মোহাম্মদ আলী ও তার ভাইবোনেরা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক সীমানা প্রাচীর দিয়ে জমিটি দখল করে নেয়।”

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দখলের সময় তাদের বসতঘর ভেঙে ফেলা হয়, আমগাছ কেটে ফেলা হয় এবং একটি ঘরে আগুন লাগিয়ে তাদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া ভয়ভীতি ও হুমকির মাধ্যমে জায়গা ছাড়তে বাধ্য করার চেষ্টা চলছে।

অর্থ ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ:

আব্দুল কুদ্দুসের চাচা বলেন, “জমিটি আমার ছিল, আমি আমার ভাইয়ের কাছে বিক্রি করেছি। এখন মোহাম্মদ আলীরা সেই জমি জোর করে নিতে চাচ্ছে। আমাকে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল যেন আমি বলি, জমি জোর করে দখল করেছে।”

এদিকে, কুদ্দুসের বড় ভাই আব্দুল মালেক অভিযোগ করে বলেন, “সাবেক মেম্বার সফর উদ্দীন আমাদের বলেন, যদি ২০ হাজার টাকা দিই, তাহলে ১৯৯১ সালের আপোষ অনুযায়ী সীমানা থাকবে। টাকা না দেওয়ায় তারা আমাদের জমি মেপে নিয়ে গেছে।”

স্থানীয়দের বক্তব্য ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ:

স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, “সফর উদ্দীন মেম্বার আমার মাধ্যমে টাকা চেয়েছিলেন। আমি আপত্তি করলে তিনি আমার গায়ে হাত তুলতে আসেন। পরে বিষয়টি বিএনপি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। এটা একটা সুপরিকল্পিত জমি দখলের চেষ্টা।”

অভিযুক্ত সাবেক মেম্বার সফর উদ্দীন অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। পরে বিএনপি অফিসে বসেই বিষয়টির মীমাংসা হয়েছে।”

অন্যদিকে মোহাম্মদ আলী পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “আমার বাবার কবুলতনামার জমি এক একর ৭৫ শতাংশ। আমরা কেবল আমাদের অংশ বুঝে নিয়েছি। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও পুলিশের উপস্থিতিতে সীমানা নির্ধারণ করে ঘর নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বরং ওরাই আমাদের বসতঘরে আগুন দিয়েছে।”

উত্তেজনা ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি:

কুদ্দুস পরিবার তাদের অভিযোগে দাবি করেছে, মোহাম্মদ আলীরা প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় জবরদখল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এবং সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট মামলার মাধ্যমে হয়রানি করছেন।

এ ঘটনায় সোনারগাঁও এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার দ্রুত স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান হয় এবং দখলবাজির মতো ঘটনা আর না ঘটে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here