শনিবার, নভেম্বর ১৫, ২০২৫
Homeউন্নয়নসাজেক ঘুরবেন যেভাবে! 

সাজেক ঘুরবেন যেভাবে! 

মোঃ মহিউদ্দিন, বাঘাইছড়ি:

দেশের অনন্য এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাজেক ভ্যালি। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার এই নয়নাভিরাম উপজেলা আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা। পাহাড়, সবুজ গাছপালা আর ছায়াঘেরা পথজুড়ে সাজেক যেন এক মেঘপ্রেমিক ভূখণ্ড। এখানে ভোরের আলো ফোটার আগেই চারপাশ ঢেকে যায় মেঘে মেঘে। পাহাড় আর মেঘের এই মিতালি দেখে যে কেউ বিমোহিত হবেন। আর পাহাড়ের সৌন্দর্য আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায় বর্ষায়। মূলত পাহাড়ে যাওয়ার আদর্শ সময় শীতকালে।

কোথায় ও কীভাবে সাজেক যাবেন:

সাজেক ভ্যালি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ শত ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এর সীমানা ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্যের সীমানার খুব কাছাকাছি। খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা থেকে মাত্র ৪৫-৫০ কিলোমিটার দূরে সাজেক। ফলে খাগড়াছড়ি জেলা হয়ে যাতায়াত করাটাই সুবিধাজনক।

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বরে। এটিই হলো এই শহরের মূল পয়েন্ট। এখান থেকে সাজেকের উদ্দেশে ভাড়ায় পেয়ে যাবেন চাঁদের গাড়ি, পিকআপ, মাহিন্দ্রা, সিএনজি কিংবা মোটরসাইকেল।

যাতায়াত খরচ:

সাজেক পৌঁছাতে খরচ নির্ভর করে আপনি কোন পরিবহন বেছে নিচ্ছেন, তার ওপর। সাধারণত চাঁদের গাড়িতে এক রাত থাকাসহ যাওয়া-আসা খরচ হয় ৬ হাজার ৫০০ টাকা। খাগড়াছড়ি ঘোরা যুক্ত করলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার টাকায়। পিকআপ ভাড়া করলে ৭ হাজার ৫০০ থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সিএনজিতে দুই-তিনজন থাকলে খরচ হয় প্রায় ৪ হাজার ৫০০ টাকার মতো।

প্রবেশ ফি:

সাজেক যাওয়ার পথে পড়বে দুটি আর্মি চেকপোস্ট। প্রথমে বাঘাইহাট কিছুদূর পর মাচালং আর্মি চেকপোস্টে গাড়ি থামাতে হবে। সেখানে পর্যটকদের পরিচয় ও গাড়ির তথ্য দিয়ে টোকেন সংগ্রহ করতে হয়। এরপর সেনাবাহিনীর নির্ধারিত টহল গাড়ির পেছনে সাজেকের উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয়। সাজেক প্রবেশ করতে প্রতি পর্যটককে ২০ টাকা টিকিট কাটতে হয়। গাড়ির ধরন অনুযায়ী ভিন্ন ফি দিতে হবে সেখানে। যেমন, চাঁদের গাড়ির জন্য ১০০ টাকা ও মোটরসাইকেলের জন্য ৫০ টাকা। বের হওয়ার সময় সেই টিকিট ফেরত দিতে হয়।

সাজেকে থাকার ব্যবস্থা রিসোর্স, কটেজ :

সাজেকে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন কাঠ, বাঁশ, টিন দিয়ে তৈরি রিসোর্ট। আছে পাকা রিসোর্টও। ভাড়া প্রতি রাত ২ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে বাঁশের তৈরি রিসোর্ট আকর্ষণীয় কাড়ে, উন্নতমানের পাকা কটেজে একটু বেশি খরচ হলেও মিলবে বাড়তি স্বাচ্ছন্দ্য।

খাবার মেনু ও রেস্টুরেন্ট:

সাজেকে আগে অর্ডার দিয়ে খাবার খেতে হবে, না হলে কষ্টসাধ্য পেতে হতে পারে। সকাল, দুপুর ও রাতের জন্য আলাদা আলাদা প্যাকেজ ব্যবস্থা রয়েছে।

সকালের নাশতায় ভুনা খিচুড়ি, ডিম, ডাল, চাটনি, সালাদ ও চা/ কপি মিলে প্রতিজনের জন্য খরচ হবে ৮০ থেকে ১৮০ টাকা।

দুপুরে গরু,খাসি, দেশি মুরগি,বয়লার মুরগি, ভাত, সবজি, আলু ভর্তা, ডাল, সালাদ দিয়ে খেলে প্রতিজনের ব্যয় হবে ২২০ থেকে ৩০০ টাকা।রাতেও একই ধরনের প্যাকেজের খাবার পাওয়া যায়। বিশেষ খাবার, যেমন ব্যাম্বু চিকেনের দাম পড়বে ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা, ব্যাম্বু বিরিয়ানির দাম পড়বে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। এসব খাবার খেতে চাইলে আগে অর্ডার দিয়ে রাখতে হবে।

দর্শনীয় স্থান:

কংলাক পাহাড়: এখান থেকে দেখা যায় সাজেকের বিস্ময়কর দৃশ্য ও সূর্যোদয় – সূর্যাস্ত।

হেলিপ্যাড: আগতদের মিলনমেলা বসে এখানে। সন্ধ্যায় এখানে বসে খাবার খাওয়া, গল্প, গানের আসর আলাদা একটা আমেজ পাওয়া যাবে।

সাজেক ভ্রমণ শেষে ফিরে যাবেন খাগড়াছড়ি শহরে। পথে খেতে পারেন পাহাড়িদের রেস্টুরেন্টে বাহারি ঐতিহ্যবাহী খাবার। তারপর সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন, বাঘাইহাট ১০ নম্বার ঝর্ণা, আলুটিলা গুহা, রিসাং ঝর্ণা বা হর্টিকালচার পার্ক।

ভ্রমণের জানা থাকা দরকার :

জাতীয় পরিচয়পত্র অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন।

সেনাবাহিনী চেকপোস্টে ছবি তোলা নিষিদ্ধ।

স্থানীয় পাহাড়িদের ছবি তুলতে চাইলে অনুমতি নিন, না হলে ঝামেলায় পড়তে পারেন।

রবি, এয়ারটেল বা টেলিটক সিম নিয়ে যান। কারণ, এসব সিমেই নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়।

রিসোর্ট আগে বুকিং দিন, বিশেষ করে ভ্রমণ মৌসুমে।

সাজেকে কোন ব্যাংক বা এটিএন বুথ নেই, তাই প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে।

দুর্গম কোনো জায়গায় যেতে চাইলে গাইড নিতে হবে। নয়তো বিপদে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আরও সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

পাঠকের মতামত

error: