সমতল ছাড়াও বান্দরবানে অঢেল সম্পত্তির মালিক বেনজির আহম্মেদ

0
48

।।আকাশ মারমা মংসিং বান্দরবান।।

“কড়ি হলে বাঘের দুধ মিলে” জগৎ কড়ির দাসের এমন প্রবাদেব মিলে যাচ্ছে সাবেক আইজিপি বেনজির আহম্মেদের গল্পের সাথে। সমতল ছেড়ে এবার পাহাড়ের অঢেল সম্পত্তির গড়েছেন সাবেক আইজিপি । নিজের ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে বান্দরবানেও শতশত একর দখলে নিয়ে বনে গেছেন তিনি। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেন‌জীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও মে‌য়ের না‌মে রয়েছে একশ একর জমি। এসব জমিতে একসময় অসহায় প‌রিবারের বসবাস থাক‌লেও নামমাত্র মূ‌ল্যে তাদেরকে জ‌মি বি‌ক্রি করতে বাধ‌্য ক‌রার অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয় জোরপূর্বক ভাবে দখলে নেয়ার পর প্রকৃত জায়গা মালিকদের বানিয়েছেন ভূমিহীন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৬ সা‌লে বেন‌জীর আহ‌মেদ, তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও মে‌য়ে ফারহীন রিশতা বিন‌তে বেনজীরের না‌মে ৩১৪ নম্বর সুয়ালক মৌজায় ৬১৪ নম্বর দা‌গে ও ৩ নম্বর শিটে ২৫ একর জায়গা লিজ নেন বান্দরবান পৌর এলাকার মধ‌্যমপাড়ার আবুল কা‌শেমের ছে‌লে শাহ জাহা‌নের কাছ থে‌কে। সেটি এস‌পির জায়গা নামে প‌রি‌চিত এসব জমিতে র‌য়ে‌ছে মা‌ছের প্রজেক্ট, গরুর খামার, ফ‌লের বাগান ও রেস্টরুমসহ প্রায় ক‌য়েক কো‌টি টাকার সম্প‌ত্তি। এছাড়াও বেনজীর পরিবারের নামে লামার সরই ইউনিয়নের ডলুছ‌ড়ি মৌজার টংগঝি‌রি‌তে র‌য়ে‌ছে আরও ৫৫ একর জমি। বি‌ভিন্ন ফ‌লের বাগান, এক‌টি বসতঘর রয়েছে ওই জমিতে। বিস্তীর্ণ জমিটি পু‌রো ঘু‌রে বেড়া‌তে সময় লাগ‌বে প্রায় অর্ধপ্রহর।

স‌রেজ‌মি‌নে দেখা‌ গে‌ছে, বান্দরবান ৪নং সুয়ালকের মা‌ঝেরপাড়ার চা অফিস থে‌কে ১‌ কি‌লো‌মিটার দূ‌রে মাঝড়া ছড়া গহীনে রয়েছে ২৫ এক‌রের এক‌টি জ‌মি‌। জ‌মি‌টি বেনজীর আহ‌মেদ, তার স্ত্রী ও মে‌য়ের না‌মে লিজ নেওয়া। ২৫ একরের কথা থাকলেও দখলে নিয়েছেন কয়েকশত জায়গা। সেখানে র‌য়ে‌ছে এক‌টি গরুর খামার, ক‌য়েক‌টি মা‌ছের প্রজেক্ট, এক‌টি এসি রেস্ট রুম, বিভিন্ন ফলজ ও সেগুনবাগান। ভেত‌রে যে‌ন কেউ প্রবেশ কর‌তে না পা‌রে সেজন‌্য সীমানায় কাঁটাতা‌রের বেড়ার পাশাপা‌শি র‌য়ে‌ছে তালা লাগা‌নো এক‌টি গেট। আশপা‌শে কোনও বস‌তি না থাকার পরও সেখা‌নে পৌ‌ঁছে গে‌ছে বিদ‌্যুৎ। তৈরী করা হয়েছে ইটের সলিংয়ে রাস্তা। যে সড়কটি আইজিপি বাগা‌নে গি‌য়েই শেষ হ‌য়ে‌ছে। এছাড়াও লামা সরই ইউনিয়নের টংগাঝিড়ি এলাকায় ৩০৩ নং ডুলুঝিড়ি মৌজা ত্রিপুরাদের গ্রাম উচ্ছেদ করে জোড়পূর্বকভাবে জায়গায় দখলে নিয়েছেন সাবেক আইজিপি। সেখানে কাগজের জায়গায় গুলোকে জোরভাবে বিক্রি করা চাপ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েকশত জায়গা। দখলে নেয়ার পর বিতারিত করা হয়েছে ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীদের। বর্তমানে সেখানে বিভিন্ন ফলজের আমের বাগান তুলেছেন।

সুয়ালকের মা‌ঝের পাড়ার গড়ে উঠা বেনজির আহম্মেদের গরুর খামা‌রের দা‌য়ি‌ত্বে থাকা লেদু মিয়া ও নজুমু‌দ্দিন জানান, এটি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহ‌মে‌দ জায়গায়। এখানে জায়গা পরিমান ২৫ একর রয়েছে। এ জায়গা‌টি এস‌পির জায়গা হি‌সে‌বেই প‌রি‌চিত সক‌লের কা‌ছে। ত‌বে কাগজপ‌ত্রে র‌য়ে‌ছে বেন‌জীর আহ‌মেদ, তার স্ত্রী ও কন‌্যার নাম। এখা‌নে মা‌ছের প্রজেক্ট, গরুর খামার, গা‌ছের বাগান, অবকাশ যাপ‌নের জন‌্য রেস্ট রুম, ফু‌লের বাগান রয়েছে। গরুর খামা‌রে বাচ্চাসহ মোট ৩৭‌টি গরু থাক‌লেও এবা‌রের কোরবানি‌তে বিক্রয়‌যোগ‌্য গরু র‌য়ে‌ছে ৩৫‌টি।

লামা সরই ইউনিয়নের ডলুছ‌ড়ি মৌজার টংগঝি‌রি পাড়ার বাগানে দ্বায়িতে থাকা ইব্রাহিম বলেন, এখানে ৫৫ একরের যে জায়গায়টি রয়েছে সেটি এসপি নামে জানি। তবে কোনদিন বেনজির আহম্মেদ আমাদের সামনে আসেনি। জায়গায় শুধু মাস শেষ হলে বেতন দিয়ে যায় আর আমরা বাগান দেখাশোনা করি।

ডলুছ‌ড়ি মৌজার টংগঝি‌রি পাড়ার সা‌বেক মেম্বা‌র ফাইসা প্রু জানান, আমার এলাকায় বেনজীর আহ‌মে‌দের ৫৫ একর জমি র‌য়ে‌ছে। এ জমি‌তে একসময় অসহায় প‌রিবা‌রের বসবাস থাক‌লেও জোরপূর্বক ভাবে অল্প টাকা দি‌য়ে সবাইকে স‌রি‌য়ে দিয়েছেন। এখ‌নও কেউ জান‌তে চাইলে জায়গার ব‌্যাপা‌রে কাউকে মুখ না খোলার জন‌্য হুম‌কি দি‌য়ে যা‌চ্ছেন।

বান্দরবান সুয়ালক ইউনিয়‌নের চেয়ারম‌্যান উ ক‌্য নু মারমা জানান, সুয়ালক মৌজার মা‌ঝেরপাড়ায় বেনজীর আহ‌মে‌দের জমি আছে। মা‌ঝে মা‌ঝে একজন এস‌পিও এখা‌নে আসেন। ত‌বে তার নাম জা‌নি না। জায়গা‌টি সক‌লের কা‌ছে এস‌পির জায়গা হি‌সে‌বে প‌রি‌চিত। ত‌বে বেনজীর আহ‌মেদ জায়গাগু‌লো কীভা‌বে নি‌য়ে‌ছেন বলতে পারবো না। এসময় তি‌নি জায়গা উদ্ধার ক‌রে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ফিরিয়ে দেবার দাবিও জানান সরকা‌রের কা‌ছে।

এব্যাপারে বান্দরবানে পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কোথায় কোন এসপি কিংবা কার জায়গা আছে এবিষয়ে আমার নলেজে নাই। আর আমি এখন ছুটিতে আছি।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজা‌হিদ উদ্দিন বলেন, বান্দরবা‌নে বেনজীর আহ‌মে‌দের লি‌জের জায়গা আছে কিংবা জোর ক‌রে জায়গা জবরদখল ক‌রে‌ছেন-এমন কিছু জা‌নি না। বিস্তা‌রিত খবর নি‌য়ে ব‌্যবস্থা নেবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here