বান্দরবানে সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ

0
21

।। আকাশ মারমা,বান্দরবান।।

বান্দরবানের সড়ক নির্মাণের   ব্যাপক দুর্নীতির ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে মায়াধন চাকমা স্বত্বধীকারী ঠিকাদার আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে। তিনটি প্যাকেজের বরাদ্ধ সড়কের কার্পেটিং কাজে অনিয়ম , ইট সলিংয়ের বালু ব্যবহার না করে মাটির ব্যবহার ও প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েও কাজ না করে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে এই ঠিকাদার বিরুদ্ধে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঘমারা সড়কের মুখ থেকে বুদ্ধ ভাবনা কেন্দ্র পর্যন্ত যে কার্পেটিং করা হয়েছে পুরোটায় অনিয়ম। যেখানে নিয়মনুযায়ী বিটুমিন দেয়ার কথা থাকলেও সেটি না দিয়ে কার্পেটিং করে গেছেন ঠিকাদার। বালু পরিবর্তে বক্স করা মাটি দিয়ে মেগাদম দিয়ে রোলার চাপ দিয়ে গেছেন। যার কারণে এখন কাজ শেষ হলেও হাত দিয়ে কার্পেটিং তুলে নেয়া যাচ্ছে।

অন্যদিকে রুমজু পাড়া ও ভাইট্টা পাড়া একই অভিযোগ সেখানকার বাসিন্দাদের। সেখানেও ইটসলিং আগে বালু পরিবর্তে মাটি দিয়ে করে গেছেন। সড়কের পাশে ইউবক্স ড্রেইন দেয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার দেননি। যার কারণে বর্ষাতে সড়ক ভেঙ্গে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ভাইট্টা পাড়াতে কাজের মেয়াদ শেষ হয়েও এখনো সড়কের কাজ ধরেননি ঠিকাদার। বরংচ দ্রুত করা হবে বললেও একদিন কাজ দেখতে আসেন নাহ ঠিকাদার। ঠিকাদার সাথে এলজিইডি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এসব অনিয়ম করা সুযোগ পাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

এলজিইডি তথ্যমতে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ  পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩ অধীনে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে তিনটি প্যাকেজের ৪ কোটি ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ব্যয়ের বাঘমারা হানসামা পাড়া থেকে বুদ্ধ ভাবনা সড়কের ১২০০ মিটার, হলুদিয়া- ভাগ্যকুল-টংকাবতি হতে চিম্বুক থেকে ভাইট্টা পাড়া সড়কের ৫০০ মিটার ও থানচি সড়ক হতে নতুন রমজু পাড়া পর্যন্ত ১২০০ মিটার সড়ক। এই তিনটি প্যাকেজের বাস্তবায়ন করছেন মায়াধন চাকমা,ঘাগড়া, কাউখালি,রাঙ্গামাটি স্বত্বধকারী ঠিকাদার আব্দুল মান্নান। যা কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল গেল মাসে ৩ অক্টোবর। কিন্তু নির্দ্দিষ্ট সময়সীমা পাড় হলে গেলেও এখনো কাজ শেষ হয়নি দুটি প্যাকেজের কাজ।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী (এলজিইডি) অধীনে তিনটি প্যাকেজের কাজ পেয়েছিলেন ঠিকাদার আব্দুল মান্নান। প্রথম প্যাকজের কার্পেটিং কাজে ছিল ব্যাপক অনিয়ম। একই অবস্থা রমজু পাড়া ইটসলিং সড়ক কাজে। সেখানে বালু পরিবর্তে মাটি দিয়ে ইট বিছিয়ে অর্ধেক কাজ শেষ দেখিয়ে বিল তুলে ফেলেছেন। কিন্তু ভাইট্টা পাড়া সড়কের কাজের চিত্র এখনো দেখা মেলেনি। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ঠিকাদার যেন দোষ চাপাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্মতাদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঘমারা বুদ্ধ ভাবনা কেন্দ্রে কার্পেটিং কাজ শেষ হয়েছিল গত আট থেকে দশদিন আগে। সড়কের মধ্যেখানে উঠে গেছে কার্পেটিং। সেখানে পাশ থেকে হাত দিয়ে তুললে উঠে যাচ্ছে গাদা গাদা কার্পেটিং। বিটুমি ও মেগাদম পরিমান মত দেয়ার নিয়ম থাকলেও তোয়াক্কা না করে মন মতন কাজ করে গেছেন ঠিকাদার। একই চিত্রে আরো দুটি সড়কের প্যাকেজের। রমজু পাড়াতে ইউবক্স ড্রেইন দেখা মেলেনি। শুরু প্রবেশ মুখে বালু ফিলিং ছাড়া মাটি দিয়ে ইট বিছিয়ে দিয়ে গেছে। পুরো সড়ক এখন বেহাল অবস্থা। বাইট্টা পাড়াতে মেয়াদ শেষ হয়েও এখনো সড়কের কাজ শুরু করেননি ঠিকাদার। কবে নাগাদ করবে সেই বিষয়েও জানা নাই স্থানীয় বাসিন্দাদের।

বাঘমারা বাসিন্দা শিমুল বড়ুয়া বলেন, সড়কের কাজ কিভাবে করে গেছে সেই ব্যাপারে বললে শেষ হবে নাহ। একদিকে কার্পেটিং করছে অন্যদিকে রোলার চাকা দিয়ে উঠে যাচ্ছে। কার্পেটিং কাজ দশদিন পার হওয়ার পর সড়কের অবস্থা খুবই যখন্য। বর্ষা মৌসুম এলে রাস্তা ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যাবে। এই রকম ঠিকাদারের অনিয়ম আর দুর্নীতি প্রথম দেখলাম।

রমজু পাড়া ও ভাইট্টা পাড়া বাসিন্দা ঙানোয়াই ও মাংরাও ম্রো বলেন, রমজু পাড়াতে সড়ক যাওয়ার কথা এখনো অর্ধেক কাজ করে রেখে গেছে। ড্রেইন আর ইট বিছানো সময় বালু নাই আর মাটি দিয়ে ইট বিছিয়েছে।এখন রাস্তা ভেঙ্গে গেছে,আর চলাচল করতে পারছে না। ভাইট্টা পাড়াতে রাস্তা হবে শুনেছি কখন হবে জানি না। ঠিকাদারকেও কোন দিন আসতে দেখেনি এলাকাতে।

এবিষয়ে ঠিকাদার আব্দুল মান্নান বলেন, কাজের মেয়াদ গেছে নাকি যায় নাই সেটা প্রয়োজন নাই’ কিন্তু প্রজেক্টের মেয়াদ থাকলে হল। তাছাড়া কাজ যেভাবে হোক অফিস বুঝবে, তারা মন চাইলে নতুন করে আবার টেন্ডার দিবে না দিলে দিবে নাহ সেটা অফিস কর্তৃপক্ষের বিষয়, তাতেই আমার কিছুই যায় আসে না।

এব্যাপারে সদর উপজেলা এলজিইডি সার্ভেয়ার  ক্যসিং মারমা বলেন, আমি নতুন এসেছি একমাস হয়েছে। এর আগে যিনি ছিল তিনি বলতে পারবেন। আর যেখানে কাজ হয়নি সেখানে কাজ করে যাচ্ছি।

বান্দরবান এলজিইডি সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী সরোয়ার হোসেন বলেন, কাজ শেষ হলেও কতৃপক্ষ ঠিকঠাক করে বুঝিয়ে নেয়া হবে। যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে ঠিকাদারকে বিল দেয়া হবে নাহ বলে জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here