বান্দরবানে বাড়ছে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া প্রকোপ

0
23

।। আকাশ মারমা মংসিং বান্দরবান।।

পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া প্রকোপ। শহরে আশাপাশে এলাকাগুলোতে ডেঙ্গু প্রভাব বিস্তার হলেও দুর্গম উপজেলা গুলোতে দেখা দিয়েছে ম্যালেরিয়া প্রাদুর্ভাব। ফলে এই দুটি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ছোট-বড় সহ সকল বয়সের মানুষ। জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ বাড়াতে চিকিৎসা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। তবে নিয়মিত ঔষধ ও চিকিৎসা নেওয়ায় অনেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে।

জানা গেছে, বান্দরবান সদর, থানচি,লামা, আলীকদম দুর্গম এলাকাগুলোতে বেশীর ভাগই আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া রোগে। থানচি ও আলীকদমে দুই উপজেলায় তিন্দু, রেমাক্রী, বড় মদক, কুরুকপাতা, ক্রাসিং পাড়াসহ প্রত্যান্ত এলাকাগুলোতে সঠিকভাবে ঔষধ ও চিকিৎসা না পাওয়া দেখা দিয়েছে ম্যালেরিয়া প্রাদুর্ভাব। বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে মশারি প্রদান করা হলেও সেটিতে ব্যবহার না করায় দিন দিন আক্রন্ত বাড়ছে ম্যালেরিয়া রোগে। এসব রোগে বেশীর ভাগই শিশুরাই। তাছাড়া সেসব এলাকায় জুমে কাজ করে ফেরার পর রাতে ঘুমানো সময় মশারী ব্যবহার করলেও মাচাং তল থেকে মশা কামরে শিকার হন শিশুরাই। অন্যদিকে জেলা সদরে আর্মিপাড়া, বনরুপা, মেম্বার পাড়া,কাশেম পাড়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বাড়ি আঙ্গিনায় হালকা বর্ষা হলে পানি জমাটে কারণে এডিস মশা বিস্তার হয়। ফলে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলেও অনেকে বাড়ি ভিতরে চিকিৎসা নিচ্ছেন আবার অনেকেই হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে সুস্থ হয়ে উঠেছে অধিকাংশ মানুষ।

হাসপাতাল তথ্যনুযায়ী,গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ২৭ ও ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ২১ জন। তারমধ্যে ডেঙ্গু রোগে সুস্থ ১৩ জন ও ম্যলেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছে ২০ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে ১৪ ও ম্যালেরিয়া ভর্তি রয়েছে ১ জন। তবে থানচি,লামা ও আলীকদম এই তিনজন উপজেলা ম্যালেরিয়া আক্রান্তে সংখ্যা বেশী রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু রোগে পরিক্ষা করতে আসছেন কয়েকশত মানুষ। তবে অধিকাংশ এই রোগে আক্তান্ত হচ্ছে শিশুরা। এই দুই রোগে আক্তান্ত হয়ে কেউ ভর্তি হয়ে যাচ্ছে হাসপাতালে, আবার কেউ বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে আতঙ্ক না হওয়ার পাশাপাশি সঠিকভাবে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, থানচি, আলীকদম ও লামা এই তিন উপজেলায় ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেশী রয়েছে। চলতি বছরের জুন থেকে কয়েক মাসে কয়েক হাজার ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। তবে দুর্গম এলাকা গুলোতে এই সংখ্যা আরও বেশি হবে ধারণা করছেন চিকিৎসকেরা। বলছেন, দুর্গম এলাকার মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত আসে না। যখন অবস্থা গুরুতর হয়, তখন আসে। এদিকে জেলা সদরে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে রোগীরা।

সাইদুল, মসাদ্দেকসহ কয়েকজন ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু রোগীরা জানান,শরীর ও মাথা ব্যাথা, বমিভাব নিয়ে হাসপাতালে পরিক্ষা করতে এসেছি। পরিক্ষা করে দেখি ম্যালেরিয়া আবার অনেকেই ডেঙ্গু রোগে ধরা পড়েছে। এখন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নিয়মিত ঔষুধ খেয়ে যাচ্ছি, আর কিছুটা সুস্থ লাগছে।

বান্দরবানে সদর হাসপাতালে আবাসিক কর্মকর্তা (আরএমও) মো. তারেকুল ইসলাম জানান,মে থেকে আগষ্ট পর্যন্ত ম্যালেরিয়া প্রাদুর্ভাব থাকে। কেননা এখন যেহেতু এখন বর্ষা মৌসুম সেহেতু ম্যালেরিয়া বেশী। সরকার থেকে যেসব মেডিসিনযুক্ত মশারী দেওয়া হয় সেগুলো যদি সঠিক ভাবে ব্যবহার করে তাহলে ম্যালেরিয়া প্রাদুর্ভাব কমে আসবে।

বান্দরবান সিভিল সার্জন ডা. মো মাহাবুবুর রহমান বলেন, এখন যেহেতু বর্ষা মৌসুম সেহেতু এখন ম্যালেরিয়া আর ডেঙ্গু বেশীরভাব প্রাদুর্ভাব থাকবে। কারণ যেহেতু এখন এই রোগের সিজেন। তবে থানচি, আলীকদম ও লামা এই তিন উপজেলার ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেশী হলেও অনেকেই সুস্থ হচ্ছেন। আর জেলা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া নিয়ে ভর্তি হলেও সুস্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে সুস্থ হয়ে উঠে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নাই বলে জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here