নববর্ষে রং ছড়াবে মানিকছড়িতে সাঁওতাল পল্লীতে

0
12

অংগ্য মারমা।।মানিকছড়ি।।

পহেলা এপ্রিল থেকে উৎসবে মেতেছে পাহাড়ের বসবাসরত পার্বত্য চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ সাঁওতালসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ে প্রতিটি পাড়া মহল্লা। মারমা সাংগ্রাই, চাকমা বিঝু, ত্রিপুরাদের বৈসু (বৈসাবি) ও অন্যান্য সম্প্রদায়েনবাংলা নববর্ষ বরণ ও উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ে চলছে এই আনন্দ আমেজ। তবে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নববর্ষ রং ছড়াবে না খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার দূর্গম দাইজ্জাপাড়ার অদূরে সাঁওতাল পাড়ায়। ‘নতুন বছরকে ঘিরে নতুন পোশাক, উৎসব-অনুষ্ঠান, মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা কিংবা বিশেষ কোন আয়োজন কিছুই ছুঁতে পারেননা ৮ পরিবারের এই অর্ধশতাধিক সাঁওতাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে’। -এমন সংবাদে ভিত্তিতে শুক্রবার সকালের কয়েক কিলোমিটার পাহাড়ি উঁচু নিচু কাঁচা পথ পাড়ি দিয়ে নববর্ষ রং ছড়াতে সাঁওতাল পল্লীতে ছুঁটে যান মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আফরোজ ভুঁইয়া।

স্থানীয়দের নিয়ে সাঁওতাল পাড়া পরিদর্শন করে সেখানকার ৮ পরিবারের মাঝে নববর্ষ উপহার হিসেবে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেন তিনি। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর এই প্রথম নববর্ষ উৎসব উপলক্ষে আর্থিক সহায়তা পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন সাঁওতাল পল্লীতে।

এসময় সাঁওতাল নেতা নেতা ভূট্টো সাঁওতাল বলেন, ‘কোন সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে স্ত্রী-সন্তানদের ভালো পোষাক কিংবা ভাল মানের খাবার দিতে পারিনা। এবার নববর্ষ আগে আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে আমরা পাড়াবাসী খুশি। আমরা পাড়ায় অনুষ্ঠান করে সকলে মিলে খাবারের আয়োজন করবো’।

উপকারভোগী পূজা সাঁওতাল জানান, ‘নববর্ষে এবার ছেলে-মেয়েদের নতুন পোষাক কিনে দিতে পারবো’। এসময় খাগড়াছড়ি জেলার প্রশাসকসহ উপজেলা প্রশাসন’কে ধন্যবাদ জানান।

এসময় ইউএনও তাহমিনা আফরোজ ভুঁইয়া বলেন, ‘এখানকার সাঁওতালদের জীবনমান উন্নয়নে সহযোগিতা করছে উপজেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে সকল পরিবারের মাঝে সরকারি সহযোগিতায় ঘর নির্মাণ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাঙ্গালীর অন্যতম উৎসব পহেলা নববর্ষের ও পাহাড়ের বৈসাবী আনন্দ যাতে পরিবার পরিজন নিয়ে করতে পারে সেই লক্ষে্য প্রতিটি পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানান।

সাঁওতাল নেতা ভূট্টো সাঁওতাল জানান, তার প্রয়াত পিতা নকুন্দ সাঁওতাল ১৯৫০ সালের আগে কোনো এক সময় স্ত্রী ও প্রথম সন্তান গণেশ সাঁওতাল ও ভাইদের নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের পশ্চাৎপদ জনপদ মানিকছড়ির দাইজ্জাপাড়ার নির্জনে বসতি স্থাপন করেছেন। আজও এ জনপদে বসতি রয়েছে ৮ পরিবারে শিশু, কিশোর ও বয়োবৃদ্ধ ৪৫-৫০ জন সাঁওতাল জনগোষ্ঠী। কালের আবর্তে আধুনিকতার ছোঁয়ায় দেশ ও দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও পরিবর্তন হলেও সব সুবিধা থেকে ৫৪ বছরেরও বেশি সময় বঞ্চিত ছিল এখানকার সাঁওতালরা। ২০২১ সালে সাঁওতালদের মানবেতর জীবনযাপন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নজরে আসে প্রশাসনের। পরে বিভিন্ন সহয়তা পান সাঁওতালরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here