ডেক্স রিপোর্ট।।
কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাতের গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ থেমে গেছে। তবে, মিয়ানমার জলসীমায় অবস্থান করা দেশটির নৌবাহিনীর তিনটি যুদ্ধজাহাজ এখনো সরেনি।
শনিবার (১৫ জুন) সন্ধ্যা পর্যন্ত মিয়ানমার নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ তিনটি নোঙর করে সাগরে অবস্থান করার চিত্র সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেটিঘাট থেকে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ও জেলা প্রশাসনের আওতায় সেন্টমার্টিনের দ্বীপের বিচ কর্মীদের সুপারভাইজার জয়নাল আবেদীন।
জয়নাল জানান, গত তিনদিন ধরে সেন্টমার্টিন- শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে দিনে-রাতে একটানা তিনদিন বিস্ফোরণ ও গোলাগুলি’র বিকট শব্দ এপারে থেমে থেমে ভেসে এসেছিল। এমন ঘটনায় দ্বীপ জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিকট শব্দে রাতে মানুষ ঘুমাতেও পারেনি। তবে গত শুক্র ও শনিবার রাত থেকে কোন ধরনের বিস্ফোরণের বিকট শব্দ এপারে শোনা যায়নি।
তিনি আরও জানান, মিয়ানমারের জলসীমায় তাদের যুদ্ধজাহাজ আসা-যাওয়া করলেও এবারে আসা মিয়ানমারের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ তিনটি জেটিঘাট থেকে আগের তুলনায় খুব কাছে দেখা যাচ্ছে। জাহাজ তিনটি সাগরে মিয়ানমার জলসীমায় এখনো নোঙর করে অবস্থান করছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে গোলাগুলির আওয়াজ কমেছে। আমাদের জলসীমা দিয়ে সেন্টমার্টিন- টেকনাফগামী ট্রলারে তিনবার গুলি বর্ষণের পর বন্ধ হওয়া নৌযান এখনো সচল হয়নি। তবপ, দ্বীপের খাদ্য সংকট দূরীকরণে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে এমভি বারো আউলিয়া জাহাজে করে খাদ্যপণ্য পৌঁছানো হয়েছে। জাহাজটি শুক্রবার রাতে সেন্টমার্টিন জেটিঘাটে পৌছে।
তিনি আরও জানান, গত তিনদিন ধরে সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির ঘটনায় নতুন করে সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। মিয়ানমার জলসীমায় আসা দেশটি’র তিনটি নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকেও ছোঁড়া হয়েছিল গুলি। তবে এখন বিস্ফোরণের শব্দ থেমেছে। কিন্তু মিয়ানমারের জলসীমায় তাদের যুদ্ধজাহাজ তিনটি সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে শনিবার বিকেলেও দেখা যাচ্ছে।
শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটের বাসিন্দা আমান উল্লাহ জানান, রাখাইন সীমান্ত থেকে গত তিনদিন গোলাগুলি’র ঘটনায়, এপারের শাহপরীর দ্বীপ কাপঁছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখা যাচ্ছে। তবে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের ওপারে সংঘর্ষের সময় তাদের জলসীমায় আসা মিয়ানমারের একটি জাহাজ এসেছিল, পরে সেটি সেন্টমার্টিনের ওইদিক চলে গেছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরের সংঘাত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সার্ভিস ট্রলারগুলো বিকল্প পথে সেন্টমার্টিন যাতায়াত করার সিদ্ধান্ত দেয়া আছে। কক্সবাজার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে জাহাজে করে পাঠানো হয়েছে খাদ্য পণ্যও। সে সঙ্গে ওই জাহাজে দ্বীপের বাসিন্দারা আসা-যাওয়া করেছেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, মিয়ানমারের জলসীমায়তাদের যুদ্ধ জাহাজ অবস্থান করলে আমাদের উৎকন্ঠিত হবার কিছু নেই। আমাদের এপারে আমরা সতর্ক রয়েছি। গতকাল যাওয়া জাহাজ বার আউলিয়া কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় জাহাজ মুভ করা কষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। উত্তালতার কারণে দূর্ঘটনার ভয়ে সার্ভিস বোটগুলো ছাড়ছে না।
একাধিক সূত্র জানায়, গত ৩ মার্চ থেকে রাখাইন দখলে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) ও অন্য বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। সম্প্রতি মংডু টাউনশিপের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে দুটি শহরসহ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৪টি সীমান্তচৌকি, রাচিডং-বুচিডং টাউনশিপের বেশ কয়েকটি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এখন সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপের ওপারের মংডু’র সীমান্তের মিয়ানমার সেনাঘাটি ও বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি’র) চৌকি দখলে আরাকান আর্মি এ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।