থানচির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের বেনামে সম্পদের পাহাড়! 

0
49

নিজস্ব প্রতিবেদক।।থানচি।।

বান্দরবানে থানচি উপজেলা পরিষদের সম্প্রতি অপসারিত সাবেক চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লামং মারমা এর গত ৫ বছরে বৈধ অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেচ্ছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় ও উপজেলা চেয়ারম্যানের দুই পদের ক্ষমতা থাকায় অনৈতিকভাবে চাঁন্দাবাজি, বালু, পাথর, পাহাড় কাটা, গাছ কাটাসহ নানান অবৈধ উপায়ের কাজের গডফাদার হিসেবে ছিলেন এবং এক দাম্ভিকতা সাথে চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ জনগনের প্রশ্ন উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান হিসেবে ৪০ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা দিয়ে পাহাড় সমান সম্পদ কিভাবে হলো থানচিবাসী জানতে চেয়েছে ।

সম্প্রতি এ প্রতিবেদক সরেজমিনের ঘুরে জানা যায়, থানচি আলিকদম সড়কে ২৮ কিলো নামক স্থানের অংপুং ম্রো ও রুমবেত ম্রো দুই গ্রামের ৮০ পরিবারের মাঝে থেকে ৬০ পরিবারের জন্য উপকারভোগী দেখিয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন রাঙামাটি কার্যালয় হতে ২০১৯ সালে মোট ২৭ লক্ষ টাকার বরাদ্ধ নিয়ে প্রায় ৩০ একর পাহাড়ী জমি অবৈধ উপায়ে দখল করে ঝিড়িতে মৎস্য চাষের বাঁধ নির্মান ও বিভিন্ন ফলজ্য ও বনজ্য বাগান গড়ে তোলার পর ঐ সব উপকারভোগীদের মাঝে বল্টন করে হস্তান্ত করার কৃষি বিভাগের প্রকল্পের উল্লেখ করা হলে ও তা করা হয় নি। কৃষি কর্পোরেশনের বরাদ্ধের প্রকল্পের সম্পুর্নভাবে সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লামং মারমা ও তার ছোট ভাই থোয়াইপ্রু অং মারমা অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে। দুই ভাইয়ের অবৈধ দখলকৃত ঔ জমিটি বর্তমানের বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা হবে বলে স্থানীয়রা ধারনা করছেন। রুমবেত পাড়া নিবাসী সিয়াম ম্রো, মেনলে ম্রো বলেন, আমাদের গ্রামের হত দরিদ্রদের আত্ব সামাজিক নিরাপত্তা জন্য বরাদ্ধকৃত সরকারী প্রকল্পের সম্পুর্নভাবে আত্বসাৎ করা হয়েছে। আমরা দাম্ভিকতা চেয়ারম্যানের নিকট থেকে ফিড়িয়ে দেযার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট দাবী জানাচ্ছি।

তথ্য অনুসন্ধানের জানা যায়, থানচি বাজারের ব্যবসায়ী রুপক চৌধুরী নিকট থেকে ২০২০ সালে
একটি দোকান প্লট মোট ৬০ লক্ষ টাকা মূল্যে ক্রয় করা হয়েছে। বর্তমানের বাজার মূল্য দেড় কোটি টাকা বলে ধারনা করেছেন অনেকে। ২০২২ সালে থানচি সদর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডে আমতলী পাড়া ১০ শত পাহাড়ী জমি ক্রয় করে একই বছরের জমিটিকে পাহাড় কেটে অন্যত্র মাটি বিক্রি করে প্রমান পাওয়া পরিবেশ অধিদপ্তর বিভাগের মামলা ও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে সে জমিটি মূল্য এক কোটি টাকা হবে বলে ধারনা করেছেন স্থানীয়রা।

বলিপাড়া ইউনিয়নের বান্দরবান থানচি সড়কের ভরট চাকমা পাড়া ১০ একর উচু জমি মোট ৩০ লক্ষ টাকা মূল্যে ক্রয় করা হয়েছে। বর্তমানে এক কোটি টাকা ধারনা করা হচ্ছে। এছাড়াও বান্দরবান জেলা সদরে লেমু ঝিড়ি বৌদ্ধ বিহারের পাশবর্তী মংসাচিং মারমা এর নিকট থেকে ৫০ শতক জায়গা কিনেন এক কোটি টাকা দিয়ে, বান্দরবান শহরের উজানি পাড়া মরহুম খোকন মাস্টার হতে ১০ শতক জায়গা কিনেন দেড় কোটি টাকা মূল্যে । শহরে মধ্যম পাড়া বোমান সার্কেলে পাশে ২য় তলায় একটি ফ্লাইট কিনেন ৭০ লাখ টাকা মূল্যের।

নির্বাচন কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে থানচি সদর ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগের বিরোধের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদন্ডিতা করেছিলেন তিনি। ঔ সময় হলভ নামা উল্লেখ করেন তার পরিবারের স্বর্নলংকার, ফার্নিচার, নগদ টাকা, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমান ছিল মাত্র ৬ লক্ষ টাকা। ঐ নির্বাচনের বিপুল ভোটের ব্যবধানের মৌজা হেডম্যান মাংসার ম্রো নিকট হেরে যান।

২০১৪ সালে স্থানীয় সাংসদ সদস্য বীর বাহাদুরের সাথে আঁতাত করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন। ঔ সময় পরিবারের সম্পদের পরিমান ৮ লাক্ষ টাকা হলভ নামা জমা দেন । নির্বাচনের হারালে একই সালে স্থানীয় সাংসদ বীর বাহাদুর তাকে পার্বত্য বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা এর আর্শীবাদ পোষন আস্তাভাজন হয়ে ২০১৮ সালে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহন নেন ।ঔ সময় ২০১৪ সালের সম্পদের পরিমান ৮ লক্ষ থেকে ২০১৮ সালে ৬০ লাখের উন্নতি হয়। নির্বাচনের বিজয়ী হওয়ার পর ৫ বছর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতি মাসের ৪০ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা গ্রহন করেন তিনি। ২০২৪ সালে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের অংশ নেন। ২০১৮ সালে ৬০ লক্ষ টাকা সম্পদ বেরিয়ে ১ কোটি ৮৬ লাক্ষ ২৩ হাজার টাকা সম্পদের পরিমানের জমা দিয়েছে। ২০২৪ সালে তিন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত হলে তাকে বর্তমান সরকার গত আগস্ট মাসের চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারন করা হয়েছে।

সূত্র মতে, ২০১৪ থেকে ১৮ পর্যন্ত বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে প্রতি মাসের ২৫ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা পান তিনি। হিসেব মতে ৫ বছরে মোট দেড় কোটি টাকা সে গ্রহন করেন। থানচি উপজেলা পরিষদের প্রতি মাসের ৪০ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা পান তিনি। ৫ বছরে দুই কোটি ৪০ লক্ষ হলে জেলা পরিষদে সদস্য ও চেয়ারম্যান দুই পদে মোট ১০ বছরে ৩ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা সরকারীভাবে গ্রহন করেন তিনি।

চেয়ারম্যানের পরিবারের তার নিকটতম আত্বীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, তিনি জেলা পরিষদের সদস্য থাকার সময়ের প্রাইভেট গাড়ি ভাড়াসহ পরিবারের মাসিক খরচ ৬০ হাজার টাকা হয় বলে দাবী করেন তিনি।

হিসাব মতে, ২০১৪ থেকে ১৮ পর্যন্ত তার বৈধ আয় দেড় কোটি টাকা। তার পরিবারের বৈধ খরচ ৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। ২০১৮ হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি দায়িত্বে থাকার কালীন সময়ের তার মাসিক খরচ ১ লক্ষ টাকা হলে ৪০ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা পেয়ে অতিরিক্ত ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

থানচি বাজারে থানচি ভাত ঘর রেস্টুরেন্ট স্বত্ত্বাধীকারী আবদুল কাদের বলেন, আমি সাবেক চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লামং এর স্ত্রী হ্লামেচিং নিকট ৫ বছরের ভাড়া নিয়ে হোটেল ব্যবসা করিতেছি। মাস শেষে চেয়ারম্যানের ছোট ভাই থোয়াইপ্রু মার্মা আমার থেকে ভাড়া নিয়ে যায।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লামং মারমা মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়ার সম্ভব হয় নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here