।।রাঙামাটি প্রতিনিধি।।
খোলা চিঠি লিখে স্ব ইচ্ছায় পদ থেকে অব্যহতি নিয়েছেন রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী। এসময় তার খোলা চিঠি মাধ্যমে জেলাবাসীদের মাঝে ছড়াছড়ি হয়।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে গণমাধ্যমে কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এসব কথা জানিয়েছেন তিনি।
তার খোলা চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হল-
প্রিয় রাঙ্গামাটিবাসী,
শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ও স্বরন করছি মহান সৃষ্টিকর্তাকে।বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।শ্রদ্ধা ও শুভেছা জানাচ্ছি সর্বস্তরের জনগণকে।
প্রিয় এলাকাবাসী,
মাননীয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা ও আমার প্রিয় নেতা দীপংকর তালুকদারের আমার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন হিসেবে গত ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ সালে নিয়োগ পেয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বতীকালীন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বভার গ্রহন করি।দায়িত্ব গ্রহনের পর হতে আমি চেয়ারম্যান হিসাবে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি দল,মত,সাম্প্রদায়িকতার উর্দ্ধে থেকে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাকে একটি শিক্ষা,স্বাস্থ্য,যোগাযোগ, পরিবেশ,সাধারন মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন,নারী উন্নয়ন ও পর্যটন উন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধন করে একটি সমৃদ্ধ ও সম্প্রীতির জেলা হিসেবে রূপান্তর করতে।সকল সেক্টরে উন্নয়ন ও সম্প্রীতির রাঙ্গামাটি গড়ার লক্ষ্যে জননেতা দীপংকর তালুকদারের নেতৃত্বে ও সহযোগীতায় বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কর্মসূচি ও উদ্যোগ গ্রহন করেছিলাম।
কিন্তু বিরাজমান পরিস্থিতির মধ্যে সময় ও সুযোগ না থাকার কারণে সেগুলোর শতভাগ প্রতিফলন ঘটানো বা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় নাই।এটাই আমার জীবনের সবচাইতে বড় ব্যর্থতা এবং গ্লানি। এই ব্যর্থতা ও গ্লানিকে সাথে নিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছি।
আমি চেয়েছিলাম রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদকে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক প্রভাবমুক্ত একটি জনমুখী ও জনকল্যানমূলক স্বচ্ছতা,জবাবদিহিতা ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে।এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করেছিলাম।কিন্তু সেই লক্ষ্যকে চূড়ান্ত করতে পারিনাই।এইজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক সংঘটিত ঘটনার প্রেক্ষাপটে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বাস্তবায়নে পার্বত্য জেলা পরিষদ একটি অনতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলেও বিভিন্ন সরকার ও ব্যক্তিদের কারনে এই প্রতিষ্ঠানকে একটি দলীয় পূর্নবাসন কেন্দ্র,স্বেচ্ছাচারী, অনিয়ম ও দূর্নীতিগ্রস্থ প্রতিষ্টান হিসেবে সাধারন জনগনের মধ্যে এই নেতিবাচক বার্তা পৌঁছেছে,যেটা পার্বত্যবাসীর জন্য দুঃখজনক এবং আমার জন্য অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর ছিল।
আমি মনে করি আমার মত যারা দায়িত্ব দায়িত্ব পালন করেছেন তারা এদেশের সচেতন নাগরিক ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব এড়াতে পারেনা।আমিও এর উর্দ্ধে নই।যারা আগামী দিনে এই দায়িত্ব গ্রহন করতে যাচ্ছেন তাদের প্রতি আমার বিনয়ের সাথে আবেদন থাকবে,যে লক্ষ্যে পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠিত হয়েছে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও নুন্যতম হলেও লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা রাখতে।পার্বত্য অঞ্চলে সকল জনগোষ্ঠীর শিক্ষা,সংস্কৃতি,ভাষা,বেকারত্ব দূর,যুব ও ছাত্র সমাজের উন্নয়নের জন্য অধীর প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে আছে।
এই সকল কর্মসূচিতে ইচ্ছা করলে জেলা পরিষদের কাজ করার অনেক সুযোগ আছে।আমি দায়িত্বে আসার পর সেই কাজ শুরু করার প্রচেষ্টা করেছি।রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাবাসীর সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষে আমি যে সকল কর্মসূচি গুলো শুরু করেছিলাম,সেই সকল কর্মসূচিগুলো চলমান রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক রাস্তা,ব্রীজ,অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা,সংস্কৃতি, ভাষা,নারী উন্নয়ন সহ পরিবেশ ও পর্যটন উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
পরিশেষে,আমার দায়িত্বকালীন আমার পরিষদের সকল সদস্য,পরিষদে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী,জেলা প্রশাসন,পুলিশ প্রশাসন,সেনাবাহিনী লাইন ডিপার্টমেন্টের সকল বিভাগ/দপ্তর প্রধান,পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ,সাংবাদিক, আওয়ামীলীগের সকল স্তরের নেতৃবৃন্দ সহ জননেতা দীপংকর তালুকদারকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।দায়িত্ব পালনকালীন সকল সফলতা রাঙ্গামাটি পার্বত্যবাসীর।
সকল ব্যর্থতা নিজ কাঁধে নিয়ে বিশেষ কারনে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি গ্রহন করছি।সকলে ভালো থাকবেন।আপনাদের পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব এই আমার প্রত্যাশা।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হউক।