আকাশ মারমা মংসিং।। বান্দরবান।।
বান্দরবানে লামায় অগ্নিকান্ডের ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ১৭টি বসতঘর পুড়ে ছাই হয়েছে। ঘটনাটি পর থেকে না আছে খাবার না আছে খাওয়ার পানি। ক্ষুধার্ত পেটে এখনো দিক বেদিক করছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। সর্বস্ব হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর দিন কাটছে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ১৭টি পরিবার।
লামা সরই ইউনিয়নের নতুন টংগঝিড়ি পাড়া পূর্ব-বেতছড়া পাড়া নামে পরিচিত ত্রিপুড়াদের নতুন গ্রাম। পাড়াবাসীদের বেদখল হওয়া জায়গা থেকে অবৈধ দখলদার সাবেক পুলিশের আইজিপি বেনজির আহমেদের লোকজন চলে যাওয়ার পর ১৯টি ত্রিপুরা পরিবার সেখানে নতুন বসবাস করে আসছে ৮ মাস ধরে। তারা সবাই পুরনো টংগঝিরি পাড়ার বাসিন্দা। পাহাড়ে আশেপাশে বাঁশ কাঠ ও দিন মজুরি করে চলে সেসব পরিবারের সংসার। অভাব-অনটন থেকেও সৎভাবে জীবনযাপন করে আসছে দীর্ঘ মাস ধরে। কিন্তু দুর্বৃত্তরা গ্রামে ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার পর নিশ্ব হয়ে গেছে সেসব পরিবার গুলো। ঘরে চাউলসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী পুড়ে গিয়ে এখনো পরিবারে খাবার জুটেনি।
গেল মঙ্গলবার পূর্ব-বেতছড়া পাড়ায় কোনো গীর্জা না থাকায় বড়দিন উদযাপন উপলক্ষ্যে গ্রামবাসীরা ঘরবাড়ি খালি রেখে সবাই পুরনো টংগঝিরি পাড়ায় চলে যায়। রাতে পাড়ায় মানুষ শূন্য থাকায় বেনজির সহযোগী ১৭টি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ৪ চারজনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়াও অনান্য ঘটনা জড়িতদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই ঘটনায় বেনজিরের সহযোগী হিসেবে (দালাল) জড়িত রয়েছে স্টিফেন ত্রিপুরা, মংওয়াই চিং মারমা, বসু মিয়া, ইব্রাহিম, রফিক,শুক্কুর নামে আরো বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। গ্রামবাসীদের কাছে চাদা দাবি করার পাশাপাশি উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা গ্রহন করেছিলেন তারা। কিন্তু উচ্ছেদ করতে না পেরে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে নিশ্ব করে দেন বেনজির আহমেদ লোকজন।
সরই ইউনিয়নেরটংগাঝিড়ি মৌজায় শুধু সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ বেনজির নয় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি, গাজি কোম্পানী, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাহজুল ইসলাম, এস আলম ও কোয়ান্টামাসহ আরো অনান্য কোম্পানি অবৈধভাবে জায়গা দখলে নিয়ে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করা অভিযোগ রয়েছে। সেসব দখল জায়গা উদ্ধার করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান সংশ্লিষ্ট মহল।
এদিকে আজ বেলা বারোটার দিকে নতুন টংগঝিড়ি পাড়া পূর্ব-বেতছড়া গ্রাম পরিদর্শন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সু প্রদীপ চাকমা, জেলা প্রশাসক শাহ মোহাজিদ উদ্দিন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই, পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাউছার, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব কঙ্কন চাকমাসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে মতবিনিময় করেন।
এসময় ১৭ পরিবারকে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে দুই বাইন ঢেউটিন, ২৫ কেজি চাউল, দুইটি কম্বল তুলে দেন।
ক্ষতিগ্রস্থ বারতী ত্রিপুরা বলেন, আমাদের ঘরে যা ছিল সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিছু বাকি রইল না। আমিও খেতে পারছি না বাচ্চাকেও খাওয়াতে পারছি না। এখন খোলা আকাশের নীচে থাকতে হচ্ছে আমাদের।
একই বাসিন্দা তৃষানী ত্রিপুরা বলেন, কয়েকদিন আগে চাদা দাবি করে আসছিল,না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেয় বেনজিরের লোকজন। বড়দিনে পাড়াবাসী গীর্জায় গেলে রাতে সব পুড়িয়ে দেয়।
পরিদর্শনে শেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সু প্রদীপ চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, এই অগ্নিসংযোগের তিব্র নিন্দা জানাই। অগ্নিসংযোগে এই মানুষগুলো উদ্বাস্তু হয়ে গেলো। এটা আমার কোনোভাবেই চাই না। যেভাবেই হোক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সাহায্য সহযোগিতা এই সরকার করবে।
তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতা করতে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সবকিছু করে দেয়া হবে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসন সঠিক আইনের মাধ্যমে সঠিক স্থানে জমি হস্তান্তর করবে।