রুপম চাকমা।। বাঘাইছড়ি।।
আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে মৌ মৌ করতে শুরু করেছে সাজেকও বাঘাইছড়ি পাহাড়ের চারিদিক। এরই মধ্যে আমের মুকুলের মিষ্টি গন্ধে সুবাসিত হয়ে উঠছে প্রকৃতি। এসময়টাতে আমের মুকুলের যত্ন না নিলে আমের ভালো ফলন সম্ভব নয়। তাই এখন আগাছা পরিষ্কার ও মুকুল ঝরা রোধে কীটনাশক স্প্রেসহ নানাভাবে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এদিকে প্রতিটি গাছে মুকুল আসায় আম চাষিদের মাঝেও ভিন্ন আমেজ লক্ষ্য করা গেছে।
জানা যায়, একসময় জুম চাষই ছিল পাহাড়ে মানুষের জীবিকার একমাত্র প্রধান উৎস। কিন্তু এখন জুম চাষের পাশাপাশি অনেকে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ফলজ বাগান। এরমধ্যে অন্যতম আম বাগান। পাহাড়ে বিভিন্ন ফলজ বাগান গড়ে তুলতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোও কাজ করছে। সার, বীজ, চারা বিতরণের পাশাপাশি বাগান পরিচর্যায় বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন চাষিদের। ফলে অনেকে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ফলজ বাগান করছেন এবং অনেক বাগান চাষি হয়েছেন স্বাবলম্বীও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে শুকনোছড়া পাড়া, বামে বাইবাছড়া পাড়া, বালুঘাত পাড়াসহ সাজেক সড়কের বিভিন্ন এলাকার বাগানগুলোতে শোভা পাচ্ছে আমের মুকুল। কোন কোন গাছে ধরেছে গুটিও। আমের মুকুল ও গুটি ঝরা রোধে কেউ কীটনাশক স্প্রে করছেন, আবার কেউ গাছের নিচে আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া দিচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর দাম ও ফলন ভালো পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন সাজেকও বাঘাইছড়ির আম চাষিরা।
উপজেলার বঙ্গলতলি ইউনিয়নের জারুলছড়ি গ্রামের আম চাষি ওয়াসিম চাকমা চাকমা নামে এক আম চাষি জানান, ১০ একরজুড়ে গড়ে তুলেছেন আমসহ নানা ফলজ বাগান। এরমধ্যে ৭০ শতাংশই আম বাগান। অন্যান্য বছর জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে আমের মুকুল আসলেও এবার চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুকুল আসায় আমরা খুব খুশি। মুকুল ও গুটি বাঁচাতে পারলে ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি দামও বেশ ভালো পাওয়ার আশা করছেন তিনি। ওয়াসিম চাকমা চিএইচটি বার্তা বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি রুপম চাকমাকে এক স্বাক্ষাতকারে বলেন গত বছর ১৭ লাখ টাকার আম বিত্রুয় করেছে। এই বছর আবহাওয়া ভালো থাকলে ২০/২১ লাখ টাকা বিত্রুয় আশা করেছেন।
বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলি ইউনিয়নের শান্তিময় চাকমা নামে এক আমচাষিরা বলেন, মুকুল আসার পর থেকেই গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা শুরু করেছেন তারা। মুকুল রোগ বালাইয়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বালাইনাশক স্প্রে করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে মে-জুন মাসে চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণের ৪ বছরের মধ্যে ফলন দেয়া শুরু করে এ রাংগোওয়ে জাতের আম। ছোট-বড় গাছ ভেদে প্রতি আম গাছে প্রতি মৌসুমে ১ মন থেকে ১০ মন পর্যন্ত ফলন দেয়। কম আঁশযুক্ত আর সুস্বাদু হওয়ায় এই আমের চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।
সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা বলেন, এবার বৃষ্টিপাত ভালো হওয়ায় পাহাড়ে ৮০ শতাংশ আম গাছে মুকুল এসেছে। চাষিরা কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচর্যা করতে পারলে চলতি মৌসুমে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আম উৎপাদন সম্ভব হবে। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।