শুক্রবার, নভেম্বর ২১, ২০২৫
Homeবান্দরবানরুমায় দুলাচান স্কুলে পালাক্রমে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শিক্ষকরা

রুমায় দুলাচান স্কুলে পালাক্রমে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শিক্ষকরা

স্টাফ রিপোর্টার:

বান্দরবানের রুমা উপজেলার ৩ নং রেমাইক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের দুলাচান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিতি ও পাঠদানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, পালাক্রমে শিক্ষকরা স্কুলে উপস্থিত থাকলেও নিয়মিত পাঠদান হচ্ছে না।

জানা গেছে, ইউএনডিপি পরিচালিত জাতীয়করণপ্রাপ্ত এই বিদ্যালয়ে ৬ জন শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও মাসে সর্বোচ্চ ২ জন শিক্ষক উপস্থিত থাকেন। এতে প্রতিদিনের ক্লাস মাত্র ১ ঘণ্টা করে সীমিত হয়ে পড়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

পাড়াবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের পাড়ার স্কুলে প্রায়ই নতুন নতুন মুখ দেখা যায়। আমরা ভাবতাম হয়তো সরকার নতুন করে শিক্ষক পাঠাচ্ছে। পরে বুঝেছি, মাস শেষে বাড়িতে বসেই বেতন তোলেন শিক্ষকরা। স্কুলে মাসে মাত্র ৭ দিন আসেন, আর তখনও পাঠদান হয় দিনে মাত্র ১ ঘণ্টা।

গত ১৮ নভেম্বর সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল—দুলাচান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ। বিদ্যালয়ের ফটক তালাবদ্ধ, চারদিকে নিস্তব্ধতা। পড়ার টেবিল-খাতা হাতে নেওয়ার বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের দেখা গেল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নয়, বরং পাশের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে এবং হাতে কান্টা নিয়ে পাখি শিকারে মেতে থাকতে। এই দৃশ্যটি শুধু বিদ্যালয়ের অব্যবস্থাপনার চিত্রই তুলে ধরে না, বরং এলাকার শিশুদের শিক্ষা থেকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার এক গুরুতর বাস্তবতাও সামনে নিয়ে আসে।

সহকারী শিক্ষক বামেচিং মারমা বলেন, দৈনিকভাবে স্কুলে যাওয়া–আসা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই আমরা ছয়জন শিক্ষক মাসে মাসে পালাক্রমে পাঠদান করি, এবং এ বিষয়টি শিক্ষা অফিসারও অবগত আছেন বলে তিনি জানান।

শিক্ষক হাজিরা খাতায় কীভাবে স্বাক্ষর করেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা সবাই মিলেই মাসের শেষে হাজিরা খাতায় দৈনিক উপস্থিতির স্বাক্ষর দিই।”

তিনি আরও স্বীকার করেন, এভাবে হাজিরা খাতায় মিথ্যা উপস্থিতি দেখানো সরকারি নথিপত্রে আইনগত অপরাধ, তা জানার পরও তারা একই পদ্ধতিতে স্বাক্ষর করে বেতন গ্রহণ করছেন।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মংপাও ম্রোর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে পাড়াবাসীরা অভিযোগ করেন যে তিনি নিজ পাড়ায় অবস্থান করে নিয়মিত স্কুলে পাঠদান করছেন না। তাদের আরও দাবি, সরকার তাকে বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদানের জন্য নিয়োগ দিয়েছে, কিন্তু তিনি অধিক সময় ব্যয় করেন জুমচাষ ও বাগানের কাজে। এর ফলে দিন দিন পাড়ার শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন গ্রহণ না করায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে এ বিষয়ে তাঁর মতামত বা প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা দ্রুত তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন,যাতে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ও মানসম্মত শিক্ষা লাভ করতে পারে।

আরও সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদ

পাঠকের মতামত

error: