বিশেষ প্রতিনিধি।। বান্দরবান।।
বান্দরবানে রুমা উপজেলার ভিজিডি চাউলের আত্মসাৎতের অভিযোগ উঠেছে ৩নং রেমাক্রী প্রাংসা ইউপি চেয়ারম্যান জিরা বম এর বিরুদ্ধে। ভিজিডি কার্ডের উপকারভোগীদের তালিকায় নাম থাকার পরও এক ছটাকও চাউল পাননি তারা। হাতে কলমের তালিকা নাম থাকলেও বরাদ্ধকৃত চাউল কালো বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন সুবিধাভোগীরা।
জানা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভিজিডি কার্ডের উপকারভোগী ৩শত ৩৬ জনের মাঝে ১০ মেট্রিকটন ৮০ কেজি চাউল বরাদ্ধ দেওয়া হয়। তারমধ্যে ১৮৬ জন সুবিধাভোগীদের মাঝে ৫ মেট্রিক টন সাড়ে ৫শত কেজি বিতরণ করা হয়। বাকী ১৫০ জন সুবিধাভোগী চাউল নিতে গেলে তারা না পেয়ে ফেরত চলে আসে।অথচ অবশিষ্ট ৫টন ভিজিডি চাউল উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ না করে সেসব চাউল এখন লাপাত্তা।
অভিযোগ আছে, গতমাসে ৩১ জানুয়ারী বুধবার সকালে ইউপি পরিষদে চাউল বিতরণ করা হয়। সেখানে উপকারভোগী ১৮৬জন ইউপি পরিষদে উপস্থিত হন। সেখানে ১৮৬জন সুবিধাভোগীদের মাঝে ৫ মেট্রিক টন সাড়ে ৫শত কেজি বিতরণ করেন ইউপি চেয়ারম্যান জিরা বম।পরবর্তিতে থাকা আরো কার্ডধারী সুবিধাভোগী ১৫০জনের মাঝে চাউল বিতরণ করার কথা থাকলেও চাউল শেষ হয়েছে বলে তাদেরকে ফেরত পাঠিয়ে দেন। সেসব ভিজিডি চাউল না পেয়ে চেয়ারম্যান অবশিষ্ট বরাদ্ধ থাকা চাউল আত্মসাতের পাশাপাশি কালো বাজারের বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ করেন সুবিধাভোগীরা। এসব বিষয়ে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে চাউল বিতরণে দাবীও জানান তারা।
অনুসন্ধানে সরেজমিনে দেখা গেছে, ইউপি পরিষদ থেকে ভিজিডি কার্ডের চাউল নিতে এসেছেন অধিকাংশ সুবিধাভোগীরা। কিন্তু অনেকে চাউল পেলেও অধিকাংশ সুবিধাভোগীরা চাউল না পেয়ে ফেরত চলে যান। বলা আছে নভেম্বর মাসে আতপ ও ডিসেম্বর মাসে সিদ্ধ চাউল বিতরণ করার কথা থাকলেও সেটি অনেকেই পাননি। অন্যদিকে সেসব উপকারভোগীদের প্রতিটি কার্ড ৮শত টাকা করে ৫০টি কার্ড প্রনলাল নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন চেয়ারম্যান। সেসব ৫০টি কার্ডের দেড় টন চাউল বান্দরবানে ওসমান নামে এক ডিলারের কাছে চাউল সংগ্রহ করা হলেও অবশিষ্ট থাকা বাকী সাড়ে ২টন চাউল না পাওয়াতেই উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করতে পারি নাই বলে দাবী করেন ইউপি চেয়ারম্যানের।
উপকারভোগীদের অভিযোগ, বিতরণকালীন ভিজিডি চাউল নভেম্বরের না নিয়ে ডিসেম্বর মাসসহ দুইমাসে একসাথে চাউল নিতে এসেছিলেন অধিকাংশ সুবিধাভোগীরা। কিন্তু সেসব চাউল পাওয়ার দুরের কথা এক ছটাকও না পেয়ে ফেরত এসেছেন তারা। এসব বিষয়ে চেয়ারম্যানকে বহুবার অবগত করার পরও অবহেলিত ভাবে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেন সুবিধাভোগীরা। এসব দুর্নীতির ও লুটপাটের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করার দাবী জানান সচেতন মহল।
উপকারভোগী বরেন ত্রিপুরা ও সংকাও ম্রো বলেন, ২ মাসের জন্য চাউল নিতে এসেছি কিন্তু কোনো চাল এখনো পাইনি। চাউল দুরের কথা বস্তা পর্যন্ত চোখে দেখিনি।
এবিষয়ে রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিরা বম বলেন, আমার ইউনিয়নের ৩শত ৩৬ জন ভিজিডি কার্ড উপকারভোগী আছে। সেখান থেকে ১৮৬ জনকে চাউল বিতরণ করা হয়েছে। বাকী আরো ১৫০ জন চাউল প্রনলাল থেকে বুঝিয়ে না পাওয়ার কারণে এখনো উপকারভোগীদের চাউল দেওয়া হয়নি।
আত্মসাতের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে চেয়ারম্যান জিরা বলেন, আমি কেন চাউল আত্মসাত করতে যাবো। চাউল না পেলে আমি কি নিজের পকেট থেকে দিবো!
এসব বিষয়ে কথা হয় প্রণলাল চক্রবর্তী সাথে। তিনি বলেন, আমার কাছে ভিজিডি উপকারভোগীদের কার্ড ৫০ টি রয়েছে। চেয়ারম্যান আমার কাছে সেসব কার্ড বিক্রয় করেছে প্রতি কার্ডের আটশত টাকা।
মহিলা বিষয়ক খালেদ রাউজান জানান, প্রণলাল হাতেই ভিজিডি কার্ড থাকার কথা নয়। উপকারভোগীদের ভিজিডি কার্ড তার কাছে থাকার প্রশ্ন উঠেনা। কেউ অভিযোগ করলে তাদেরকে আইনে আওতায় আনা হবে।
রুমা পলি সঞ্চয় ব্যাংক ম্যানেজার ও ভিজিডি ট্যাগ অফিসার দেবব্রত বড়ুয়া বলেন, গত দুই মাস আগেই এই বিষয়টা নিয়ে আমি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরকে অবগত করেছিলাম। কোন জায়গা কি সমস্যা জিজ্ঞেস করা হলেও তাদের কোনো উত্তর এখনো পর্যন্ত আমি নিজেও পাইনি।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, উপকারভোগীরা আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ আসলেই সেসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।