রাজস্থলী ত্রিমুখী সড়কের বাঁক যখন মরণ ফাঁদ

0
8

উচ্চপ্রু মারমা।। রাজস্থলী।।

পার্বত্য জেলার রাঙ্গামাটি রাজস্থলী উপজেলার একমাত্র সীমান্ত সড়কে ঝিকঝাক ও সাইসল যেন পর্যটনসমৃদ্ধ এলাকা হিসাবে পরিচিত হওয়ার ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত পর্যটকের আগমন ঘটে। আবার মোটরসাইকেল, সিএনজি, মাহিন্দ্রা যোগে রাজস্থলী উপজেলা প্রশাসন, সেনা প্রশাসনসহ ব্যবসার উদ্দেশে উপজেলায় প্রবেশ করে।

এছাড়া যানবাহনে চড়ে মানুষ প্রয়োজনে প্রতিদিন রাজস্থলীর সীমান্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে আসে। কিন্তু সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। বিশেষ করে রাজস্থলী-বাঙ্গালহালিয়া সড়কের ১০/১২টি বাঁক চরম ঝুঁকিপূর্ণ।

এসব বাঁক পেরিয়ে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে পদে পদে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে সাধারণ জনগণ ও চালকদের। এছাড়া দেশের বিভিন্ন সড়ক চারলেনে উন্নীত হলেও রাজস্থলী সড়কটি অদ্যাবধি দুই লেনে রয়ে গেছে। অনেক সময় সড়কের তুলনায় যানবাহনের চাপ বেড়ে যায় দ্বিগুণ।

এদিকে রাজস্থলী উপজেলার বিএনপির সিনিয়রসহ সভাপতি আবুল হাসেম মেম্বার ও স্থানীয় ব্যাবসায়ী জহিরুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, রাজস্থলী চন্দ্রঘোনা বাঙ্গালহালিয়া সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো অনেক সময় চালকেরা বুঝতে পারেন না।

অতিরিক্ত গতি নিয়ে আসার পর বাঁকগুলোতে ঘটে দুর্ঘটনা। এক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যেমন সীমান্ত সড়কে নিমার্ণ কাজের ব্যবহারের জন্য যে পাথর সাপ্লাই, সরকারি কাজে খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ, রাজস্থলী বাঙ্গালহালিয়া বাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য চট্টগ্রাম হতে আমদানী করা নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল আনার জন্য আসা গাড়িগুলো বেশি ঝুঁকিতে পড়ে। তাই এ সব বাঁক চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহবান জানান তারা।

রাজস্থলী সড়কের নিয়মিত চলাচলকারী বাসচালক জসিমসহ একাধিক চালক বলেন, রাজস্থলী বাঙ্গালহালিয়া সড়কটি আঁকাবাঁকা হলে ও দেখতে আকর্ষণীয়। সড়কের পাশে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তার দুই পাশে বেশ কয়েকবার ভেঙে যাওয়াতে যান চলাচলে ঝুঁকি হয়ে পড়ে।

আবার বেশ কয়েকটি বাঁক থাকার কারণে সড়কে নিরাপদে গাড়ি চালানো সম্ভব হয় না। বিশেষ করে উপজেলা বাঙ্গালহালিয়া হতে বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। নতুন কোন চালক হলে এসব বাঁক পেরিয়ে গাড়ি চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এছাড়া সড়কের মুক্তিবাহিনী, তিননং, চার নাম্বার পাথরবন পাড়া, লংগদু আসমানি পাহাড়,

ওগাড়ী পাড়া, গামাড়ী বাগান, গাইন্দ্যা উচ্চ বিদ্যালয় মোড়, ঝামতলা এলাকাতেও বেশ কয়েকটি বাঁক রয়েছে। সবগুলো বাঁকই বেশ বিপজ্জনক। তবে সড়কের প্রায় ১০-১২টি বাঁক চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এসব বাঁককে ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য চালকরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান।

এ বিষয়ে রাজস্থলী উপজেলার ৩নং বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ইসলামপুর ওয়ার্ডের মেম্বার এমদাদুল হক মিলন জানান, রাজস্থলী বাঙ্গালহালিয়া সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোতে প্রায় সময় চালকদের বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। বিশেষ করে মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিক্সা ও মাহিন্দ্রা চালকেরা বেশ ঝুঁকিতে থাকে।

অনেক সময় নতুন চালকরা এই সড়কে গাড়ি চালাতে আসার পর সড়কের বাঁকগুলোতে স্পিড কন্ট্রোল করতে না পেরে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। তাই চালকদের সচেতন করতে রাজস্থলী বাঙ্গালহালিয়া সড়কের এই বাঁকগুলোতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ইসলামপুর আনচার ক্যাম্পের পর হতে অনেক বাঁক রয়েছে। যাহা অনেক সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়।

এ বিষয়ে তিন নং বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আদোমং মারমা জানান, রাজস্থলী সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোতে দ্রুত সময়ে কিছু সতর্কতামলক চিহ্ন স্থাপন করা প্রয়োজন। বিশেষ করে যে বাঁকগুলো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সেখানে প্রয়োজনে গ্লাসের বোর্ড বসানো দরকার।

তাহলে বিপরীত দিক থেকে আসা যেকোন যানবাহন এর চালক সতর্ক হতে পারবে। আর তাছাড়া সড়কের এই বাঁকে রাতের বেলায় যানবাহন চালানোর সময় দুর্ঘটনার আশংকা থাকে সবচেয়ে বেশি। তাই সড়কের মাঝে ডিজিটাল ডিভাইডার চিহ্ন গুলো স্থাপন করা হলে চালকেরা সচেতন হবেন। এতে দুর্ঘটনার আশংকাও কমবে। আমাদের সব সময় রাজস্থলীতে যেতে হয়। কিন্তু দুর্ঘটনার জন্য আমাদের যেতে ভয় লাগে।

এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, ভবিষ্যতে রাজস্থলী চন্দ্রঘোনা সড়কটি চার লেনে উত্তীর্ণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তখন এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোকে নিরাপদ করা হবে।

তবে বর্তমানে রাজস্থলী-বাঙ্গালহালিয়া-চন্দ্রঘোনা সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে সেখানে চালকদের সচেতনতার জন্য ঝুঁকিচিহ্ন বসানো হবে। সেইসাথে এ সড়কে চালকদের যতটা সম্ভব সাবধানতার সাথে যানবাহন পরিচালনা করার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।

বিষয় নিয়ে রাজস্থলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সজীব কান্তি রুদ্র বলেন, আমি সড়ক বিভাগের কর্মকর্তার সাথে আলাপ করেছি, আঁকাবাঁকা সড়কের চার পাশে ঝোঁপঝোড়গুলো পরিস্কার ও ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে লাল পতাকা স্থাপন করে চিহ্নিত করে রাখার জন্য যাতে সড়কে বড় বড় যানবাহনগুলোর চালকদের নজরে আসে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here