
মিল্টন চাকমা(কলিন)।।মহালছড়ি।।
খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার এপিবিএন আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী মোঃ রাকিবুল ইসলাম। ভাঙা বাড়ি, চারদিকে স্পষ্ট দারিদ্র্যের ছাপ। ভাঙা বাড়ি ভাঙা চেয়ারে বসেই বাজিমাত করেছেন দরিদ্র টমটম গাড়ি চালকের পুত্র রাকিবুল ইসলাম । দারিদ্র্যকে শুধু চ্যালেঞ্জ নয় রীতিমতো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অর্জন করেছেন মহালছড়ি উপজেলার মাধ্যমিকের একমাত্র শ্রেষ্ঠ সাফল্য জিপিএ-৫। বাড়িতে নেই সাফল্য অর্জনের ন্যূনতম আনন্দ অথচ হতে পারত ভিন্ন চিত্র মেতে থাকতে পারত চূড়ান্ত সাফল্যের আনন্দে। শিক্ষাজীবনে প্রথম সাফল্য এভাবে যে ভীতু করে রাকিবকে না দেখলে বোঝার উপায় নাই। টাকার অভাবে নিয়মিত প্রাইভেট পড়া হয়নি তার। বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করতো। কোনোমতে শিক্ষকদের সহায়তায় পড়াশোনা করেও এত কষ্টের সাফল্য ধরে রাখতে পারবেন তো, এটাই এখন ভয়ের বিষয়। প্রতিবেশীরাও জানান, রাকিবের সাফল্যের কথা। তারা চান, সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে এই অদম্য মেধাবী এগিয়ে যাবে অনেক দূর।
রাকিবুল জানান, আমি ডাক্তার হয়ে ফ্রিতে গরিব মানুষের সেবা করতে চাই। টাকার অভাবে আমি কলেজে ভর্তি হতে পারব না মনে হচ্ছে। গরিব হয়ে জন্মেছি বলেই হয়তো টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। বাবা অটো রিকশা চালক। সরকারের দেওয়া বিনামূল্যে বই ও স্কুলের সম্মানিত শিক্ষকদের সহায়তার মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া শেষ করতে পেরেছি। এই জন্য সম্মানিত শিক্ষকদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। এখন উচ্চশিক্ষা লাভে অর্থের জোগান কোথা থেকে আসবে, কীভাবে আসবে, এ চিন্তা সারাক্ষণ ভাবিয়ে তুলছে আমাকে।
এপিবিএন আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষিকা সাহিনা সুলতানা সুমা আক্তার বলেন,”রাকিবুল অত্যন্ত ভদ্র, নম্র ও পরিশ্রমী ছাত্র। ক্লাসে সব সময় মনোযোগী ছিল। তার জিপিএ-৫ অর্জনে আমরা সবাই খুবই খুশি ও আনন্দিত। এমন সাফল্য সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।”
রাকিবুলের প্রতিবেশী এবং মহালছড়ি উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেন জানান, রাকিবুল মেধাবী ছাত্রী হওয়ায় পড়াশোনার বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। এসএসসিতে ভালো ফলাফলও করেছে। কিন্তু এখন ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া ও কলেজের পড়ালেখা চালাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সেটা জোগাড় করা তাদের পরিবারের পক্ষে সম্ভব না।
রাকিবুল ইসলাম এর বাবা শুকুর আলী জানান, আমার ছেলে জিপি-৫ পেয়েছে, আমরা অত্যন্ত খুশি। স্কুলের শিক্ষকরা আমার ছেলেকে নিজেদের ছেলের মত করে পড়িয়েছে। উনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। উনাদের সহযোগিতা ছাড়া আমার ছেলের এই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব ছিলো না। কারণ আমি সামান্য অটো রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। সকল সুযোগ-সুবিধা আমি আমার ছেলেকে দিতে পারিনি। সবার কাছে আমি আমার সন্তানের জন্য দোয়া প্রার্থনা করছি।