সেনাবাহিনী উদ্যেগে বিদ্যালয় নির্মাণ; প্রত্যন্ত দুর্গমাঞ্চলে ছড়ালো শিক্ষার আলো

0
22

।।আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান।।

প্রত্যন্ত দুর্গমঞ্চলে পাহাড়ে ভেসে উঠেছে “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” জাতীয় এই সঙ্গীতের সুর। এই সুরের মেতে উঠেছে পিছিয়ে পড়ার বম সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে। এমন চিত্র দেখে মেলেছে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের চুয়ানবিল পাড়ার গ্রামে। এই গ্রামে বম সম্প্রদায়ের শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এমন দুর্গম এলাকায় বঞ্চিত শিশুরা শিক্ষা পেয়ে খুশি এলাকাবাসীরাও।

চুয়ানবিল পাড়া গ্রামটি প্রত্যান্তঞ্চলে স্বাধীনতার আগ থেকে গড়ে উঠেছিল। সে গ্রামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। ১৯৮০ সাল দশকে অভ্যন্তরীন স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠনের কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মানুষজনও কচ্ছপতলী এলাকায় নিয়ে যায়। কিন্তু মানুষজন এলাকায় ফিরে আসলেও স্কুলটি থেকে যায় কচ্ছপতলীতে। এরপর থেকে ওই গ্রামের মধ্যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দূরে হওয়াতে গ্রামের শিশুরা শিক্ষার পাশাপাশি মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত ছিল। বর্তমানে সে গ্রামে সেনাবাহিনী উদ্যেগে গড়ে তোলা হয়েছে “চুয়ানবিল পাড়া প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়” নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেখানে প্রাথমিক ১ম ও ২য় শ্রেণীতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে ১৫ জন ছেলে- মেয়ে।

বান্দরবান সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে রোয়াংছড়ি উপজেলার নোয়াপতং ইউনিয়নের অবস্থিত চুয়ানবিল পাড়া গ্রাম। এই গ্রামে পাহাড়ের উঁচু নিচু পায়ে পথ হেটে যেতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘন্টা। এরপর দেখা মিলে বম সম্প্রদায়ের ২৫ টি পরিবারে বসবাসের ছোট্ট একটি গ্রাম চুয়ানবিল পাড়া। গ্রামে স্বাধীনতার পর থেকে পিছিয়ে পড়া এই সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীরা দেখা পায়নি কোন শিক্ষার আলো। এবার পিছিয়ে পড়া বম সম্প্রদায়ের সেনাবাহিনী উদ্যেগে বিদ্যালয় নির্মাণ করে দেয়ার ফলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়েছে শিশুদের মাঝে।

দুর্গম এলাকায় চুয়ানবিল পাড়া গ্রামে মধ্যখানে নতুন গড়ে উঠেছে “চুয়ানবিল পাড়া প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়”। এই বিদ্যালয়টি শুভ উদ্বোধন করেন সদর সেনাজোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল এ এস এম মাহমুদুল হাসান। এসময় উপস্থিত ছিলেন রোয়াংছড়ি কমান্ডার মেজর আনিস। উদ্বোধন শেষে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি। পরিদর্শন শেষে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রয়োজনীয় শিক্ষা সামগ্রী ও স্কুলের শিক্ষকদের মাঝে সম্মানী তুলে দেন এবং আগামীতে এই কার্যক্রম পরিচালনায় অব্যাহত রাখা আশ্বাস দেন।

চুয়ানবিল পাড়ার গ্রামপ্রধান মুনসাং বম জানান,বিদ্যালয় না থাকায় পাড়ার ছেলেমেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিল। যেখানে দৈনন্দিন মৌলিক চাহিদা পূরণে পরিবারের হিমশিম খেতে হত। সেখানে দীর্ঘপথ পায়ে হেটে পাড়ি দিয়ে কচ্ছপতলী এলাকায় কিংবা রোয়াংছড়ি সদরে শিশুদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে যাতায়াত করা সম্ভব হয়ে উঠত না। কিন্তু এখন সেনাবাহিনী এখানে স্কুল করে দিয়েছে এতে গ্রামবাসীরা অনেক আনন্দিত ।

চুয়ানবিল পাড়া প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ডায়না বম বলেন, এই গ্রামে শিশুরা রোয়াংছড়ি সদর বা শহরে গিয়ে পড়ালেখা করা সুযোগ পায় না। দীর্ঘদিন পর এখানে আমাদের জন্য সেনাবাহিনী উদ্যেগে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় দিয়েছেন। এতে করে শিশুরা জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।

শিক্ষার্থীর অভিভাবক মিরাম ময় বম বলেন, আমি অনেক দূরে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়েছি,যাতায়াতের দুরত্বের কারনে পড়ালিখা শেষ করতে পারিনি। কিন্তু এখন ছেলে মেয়েরা দূরে যেতে হবে না, নিজ গ্রামে স্কুলে শিক্ষা নিতে পারবে।

এবিষয়ে বান্দরবান সেনা জোন কমান্ডার এ এস এম মাহমুদুল হাসান বলেন, দুর্গম এই গ্রামে ছেলে মেয়েরা শিক্ষা ও মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত ছিল। গত নভেম্বর মাসে আভিযানিক কাজে এলাকায় আসলে বিষয়টি সেনাবাহিনী নজরে আসে। পরবর্তীতে পাড়াবাসী আবেদনের প্রেক্ষিতে বান্দরবান সেনা রিজিয়নের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বান্দরবান সেনা জোন এর নিরলস প্রচেষ্টার ফলে ‘চুয়ানবিল পাড়া প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়” গত ৬ জানুয়ারি হতে কার্যক্রম চালু করে।

কমান্ডার এ এস এম মাহমুদুল হাসান আরো বলেন, স্কুল পরিচালনার সুবিধার্থে সেনাজোনের অর্থায়নে গ্রাম থেকে একজন পুরুষ ও একজন নারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যা তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে।আগামীতেও জেলার দূর্গম অঞ্চল গুলোতে বসবাসকারী সকল সম্প্রদায়ের শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এরুপ প্রতিটি ভালো উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here