বিদ্যালয়ে আসেন না শিক্ষক, আরেকদিকে স্লিপের টাকা ‘নয়ছয়’

0
105

আকাশ মারমা মংসিং।।বান্দরবান ||

বান্দরবানের রুমায় শিক্ষকদের সরকারি বিদ্যালয়ে না আসার  অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থাকার পরও নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতায় বিদ্যালয়ের আসছেন নাহ শিক্ষকরা। এমন ঘটনাটি ঘটেছে ১নং পাইন্দু ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের তংমক পাড়া সরকারি  প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এতে ক্ষুদ্ধ প্রকাশ করেছেন ওই বিদ্যলয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।

গত শনিবার তংমক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা'র পরিদর্শন কালে তোলা।ছবি: রুমা বার্তা
গত শনিবার তংমক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা’র পরিদর্শন কালে তোলা।ছবি: রুমা বার্তা

অভিযোগ আছে, দুর্গম এলাকার হওয়াতেই গ্রামের থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার পরও নিয়মিতভাবে বিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে আসে নাহ শিক্ষকরা। এমনকি কেউ কেউ দুরত্বে অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছেন অনেকে। আবার কোন কোন শিক্ষক বিদ্যালয়ের না গিয়ে প্রকাশ্যভাবে ঘোরাফেরা করছেন শহর কেন্দ্রগুলোতে। এছাড়াও বছরের যেসব বরাদ্ধ হয় সেসব অর্থ দিয়ে বিদ্যালয়ের মেরামত করেন না বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুইথুইঅং মারমা ও সহকারী শিক্ষক মংবাসা মারমা । শুধু তাই নয় বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি সভাপতি স্বাক্ষর ছাড়া কিভাবে অর্থ উত্তোলন করেন সেটি জানেন নাহ বিদ্যালয়ের কমিটি সভাপতি অংথোয়াচিং মারমা।তাই শিক্ষকরা নিজেদের দ্বায়িত্বকে অবহেলা করায় ক্ষুদ্ধ প্রকাশ করেছেন ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা।

বিদ্যালয়ের কমিটি সভাপতি অংথোয়াচিং মারমা জানান, শিক্ষকরা সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে আসেন নাহ। গ্রামের মধ্যে থাকার ব্যবস্থা তৈরী করা পরও তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় বিদ্যালয়ে আসে আবার কিছুক্ষণ থেকে চলে যান। যার কারণে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যলয়ের বছর শেষে যেসব স্লিপ অর্থের বরাদ্ধ আসে সেই ব্যাপারেও কমিটিকে জানানো হয় নাহ। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতায় বিদ্যালয় চালাচ্ছেন। যেটি এলাকার ছাত্রছাত্রীদের জন্য মোটেই কাম্য নয়।

জানা গেছে, কাগজে-কলমে বিদ্যালয়ে শিক্ষককের সংখ্যা পাচঁজন। সেখানে শিক্ষার্থীরা সংখ্যা প্রায় ৪৫জন। শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকলেও তবে শিক্ষকরা কেউ নিয়মিত স্কুলে আসেন না। কেউ কেউ রেখেছেন ভাড়াটে শিক্ষক। তারাও থাকেন অনুপস্থিত। তাছাড়া ১৫দিন পর পর দুইজন করে ক্লাস নেওয়ার কথা থাকলেও সেটি রয়েছে গেছে অবহেলায়। ফলে প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। তবে  অনেকেই ঝড়ে পড়াতেই সন্তাদের পাঠিয়ে শহরে। এ কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হওয়াতেই সেই স্কুলে রাখতে চাইচ্ছেন নাহ অভিভাবকরা। তবে শিক্ষকদের দাবি, এ ধরনের কোন সমস্যা হয়নি। স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা ছুটিতে আছেন এবং বিদ্যালয়ের না আসার অভিযোগ ভূয়া বলে দাবী করেন শিক্ষকরা।

শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, রুমা সদর থেকে তংমক পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় দুরত্ব পাচঁ কিলোমিটার। সেখানে যেতে হয় নৌকা যোগে। গ্রামে একোনে বাঁশের তৈরি টিনশেডে তংমক পাড়া সরকারি  প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছে ২০১০ সালে। সেখানে কক্ষ রয়েছে তিনটি। কিন্তু বিদ্যালয়ে স্থাপনাগুলো চারিপাশে কোথাও ভাঙ্গা আবার কোথাও নষ্ট। সেখানেই ক্লাস করেন কয়েকটি গ্রামের শিক্ষার্থীরা। স্থাপিত পর থেকে এখনো বিদ্যালয়টিকে কোন কাজ করেনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।  কিন্তু সেখানে দেখা মেলেনি কোন শিক্ষকের । কয়েক বছর ধরে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আসেন না বলে অভিযোগ করেন তংমক পাড়া গ্রামবাসীরা।

তংমক পাড়া গ্রামপ্রধান মেচাং মারমা অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষকরা কেউ বিদ্যালয়ে আসে নাহ। যার ফলে আমাদের সন্তানরা পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই আমরা এখানে পড়াবো নাহ বাইরে স্কুলে পড়াবো। শিক্ষকরা এভাবে নিজের ইচ্ছা মতন করলে  আমাদের সন্তানরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।

এবিষয়ে তংমক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুইথুইঅং মারমা বলেন, সবকিছু অভিযোগ বিষয়ে গ্রামবাসীদের কথা বিশ্বাস করা যায় নাহ। তারা যা মন চাই সেগুলো বলবে। তাছাড়া ডিসেম্বর মাসে স্কুল বন্ধ বিধায় শিক্ষকরা ছুটিতে ছিল। কাল থেকে শিক্ষকরা এসে প্রতিদিন ক্লাস করবে।

রুমা উপজেলার চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা বলেন, গত শনিবার তংমক পাড়াতে পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সেখানে আলোচনা সময় গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন।

তিনি বলেন, সেখানে ছাত্রদের পড়ানো সুবিধার্তে শিক্ষকদের জন্য  একটি ঘর তৈরি করে দিয়েছে গ্রামবাসীরা। কিন্তু শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে আসে নাহ। পাড়াবাসীরা শিক্ষকদের প্রতি ক্ষুদ্ধ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য গ্রামবাসীদের আস্তত করে এসেছি।

রুমা উপজেলা শিক্ষা অফিসার আশীষ চিরান বলেন, এমন অভিযোগ থাকলে শিক্ষকদের ডেকে ব্যবস্থা নেওয়ার হবে। এবং পরবর্তীতে স্কুলে নিয়মিত না গেলে বেতন বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here