মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৯, ২০২৫
Homeঅপরাধবান্দরবানে সড়ক দু'পাশে কাঁটছে শত পুরনো গাছ; হুমকিতে পরিবেশ

বান্দরবানে সড়ক দু’পাশে কাঁটছে শত পুরনো গাছ; হুমকিতে পরিবেশ

আকাশ মারমা মংসিং।। বান্দরবান।।

  • সড়কের দু’পাশে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে শতবর্ষী বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
  • ধ্বসযজ্ঞ কাজ দেখে নীরব ভুমিকায়  জেলা বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
  • বৃক্ষ নিধনের ফলে যেমনি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ তেমনি বিনষ্ট হচ্ছে এলাকার সৌন্দর্য্য।
  • সড়কের দু পাশে গাছ কর্তনের কোন অনুমতি দেয়নি এলজিইডি। 
  • বন বিভাগের যোগসাজশে সড়কের দু’পাশে গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে আমানউল্লাহ নামে এক ব্যক্তির।

বান্দরবানে গ্রামীন সড়ক সংস্কার ও উন্নয়নের নামে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে রাস্তার দু’পাশে থাকা শত-শত গাছ। এতে যেমন সড়কের সৌন্দর্য হারাচ্ছে তেমনি ধ্বস হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি। বন বিভাগের যোগসাজশে সড়কের দুপাশে গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে আমানউল্লাহ নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এমন ধ্বসযজ্ঞ কাজ দেখে নীরব ভুমিকায় রয়েছে জেলা বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

বান্দরবান সদর ইউনিয়নের রেইছা- গোয়ালিয়াখোলা পর্যন্ত ৭.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য রাস্তা। এই রাস্তার দু’পাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সমারোহে সবুজ বেষ্টনিতে মোড়ানো ছিল। সৌন্দর্যের বিস্তৃত ছিল পুরো সড়ক জুড়ে। কিন্তু সড়ক সম্প্রসারণ নাম ভাঙ্গিয়ে ২৫ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সী বিভিন্ন প্রজাতির গাছগুলো নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে। বৃক্ষ নিধনের ফলে যেমনি পরিবেশ নষ্ট হচ্ছ তেমনি নষ্ট হচ্ছে এলাকার সৌন্দর্য্য। বন বিভাগে যোগসাজশে এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ক্ষুদ্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তা সম্প্রসারণ কাজ শুরু হওয়ার আগেই পাঁচ শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলেছেন আমানউল্লাহ নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি চক্র। গাছগুলো গোড়ালি থেকে কাটার পর স্কেভেটর মাধ্যমে গাছের গুড়ি উপড়িয়ে ফেলে ধামাচাপা দিতে মাটি ভরাট করে দিয়েছে। গাছের চিহ্ন-নিশ্চিহ্ন করতে এমন অভিনব কায়দায় প্রয়োগ করছেন আমান উল্লাহ নামে ব্যক্তি। তাছাড়া এসব দীর্ঘ বছরের গাছ হতে অন্তত ৫০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। এমন ধ্বসযজ্ঞ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবি এলাকার বাসিন্দাদের।

বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর অর্থায়নে রেইছা হতে গোয়ালিয়াখোলা পর্যন্ত ৭.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য রাস্তাটি সম্প্রসারণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। সড়কটি সম্প্রসারণ কাজটি চলমান। কিন্তু সড়কের দু পাশে গাছ কর্তনের কোন অনুমতি দেয়নি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের দু পাশে পাহাড়-টিলা, সমতল ভূমি, কৃষি জমি ও সাঙ্গু নদীর সাথে সম্পৃক্ততা আছে। এই এলাকাতে সড়কের পাশে প্রতিটি ঋতুতে বিভিন্ন ফসল- ফলাদি উৎপাদিত হয়। এখানে থাকে নানা রকমের সবজি উৎপাদিত হয়ে বলে “সবজী উৎপাদনের রাজধানী নামেও পরিচিত। এই সড়কের দু পাশ জুড়ে বেষ্টিত আছে হাজারের অধিক বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ। গাছগুলো দাঁড়িয়ে বহু বছর ধরে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু উন্নয়নের নামে রাস্তার দু’পাশে থাকা গাছের মধ্যে থেকে ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে, অনেকটা গাছে ডালপালা ছেটে রাখা হয়েছে। অনেক গাছের গুড়ি স্ক্যাভেটর দিয়ে উপড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।

গাছ কর্তন কাজে নিয়োজিত শ্রমিক নজরুল ও মোহাম্মদ রফিক জানান, আমানউল্লাহ আমান নামে এক ব্যবসায়ী গাছগুলো কাটার জন্য বলেছেন। আমরা ৪দিন ধরে গাছ কাটতেছি। দিনের বেলায় গাছের ডালপালাগুলো কেটে রাখি আর রাতে আধারে গাছের গোড়ালি থেকে কেটে ট্রাকে করে নিয়ে যায়। গাছে গোঁড়ালি গুলো উপরিয়ে ফেলে মাটি দিয়ে ভরাট করে রেখে দেয়া হয় যাতে গাছকাটার চিহ্ন বুঝতে না পারে।

গাছ কাটার অনুমতি বিষয়ে গাছ কর্তনকারী আমানউল্লাহ আমান বলেন, বান্দরবান সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাবুখয় মারমা নেতৃত্বে ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে “গাছগুলো কাটার জন্য নিলামে তোলা হয়। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নিলামে ১০ লক্ষ টাকায় রাস্তার দু’পাশে মোট ১ হাজারটি গাছ কাটার জন্য অনুমতি পেয়েছেন বলে দাবী করেন তিনি।

এ বিষয়ে বান্দরবান জেলার সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাবু খয় মারমা বলেন, গেল ২০১৮ সালে ১৮ নভেম্বর রেইচা- গোয়ালিয়া খোলার রাস্তার পাশে থাকা গাছগুলো কাটার জন্য নিলামে ডাকা হলে আমানউল্লাহ আমান নামে রেইচার স্থানীয় গাছ ব্যবসায়ী ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিলামে বিজয়ী হয়। কাছ কাটার পূর্বে সে আমার হাতে- ৫ লক্ষ টাকা নগদে দেয় এবং বাকি টাকা পরে দিবে বলেই কাছ কাটা শুরু করেন আমানউল্লাহ।

বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) সিনিয়র প্রকৌশলী পারভেজ সারোয়ার হোসেন বলেন, রাষ্ট্রের জনগণ এবং পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ “এলজিইডি” করবে না। আমরা কাউকে গাছ কাটা কিংবা পরিবেশ ধ্বংসের জন্য সুপারিশ বা অনুমতি দিতে পারিনা বলে জানান তিনি।

বান্দরবান সদর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ টিপু বলেন, রাস্তার দু’পাশে গাছকাটাকে কেন্দ্র করে আদালতে মামলা চলমান আছে। বন বিভাগের অনুমতি ব্যতীত গাছ পরিবহন করে তবে পরিবহন আইনানুসারে বন বিভাগ ব্যবস্থা নেবে।

সম্পর্কিত আর্টিকেল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: