আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান ।।
পার্বত্যঞ্চল বান্দরবানে অনায়াসে ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমিতে লাগানো গাছ কাটার নামমাত্র অনুমতিপত্র (জোত পারমিট) দেখিয়ে প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের মূল্যবান গাছ কেটে পাচার করা হচ্ছে। তারমধ্যে বেশীর ভাগই দুর্গম অঞ্চল থানচি উপজেলায় থেকে অবৈধভাবে গাছ পাচারে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেসব কাজে দেখাশোনা দায়িত্বের রেঞ্জ কর্মকর্তারা নিজ কর্মস্থলে থাকার কথা থাকলেও অফিসে তারা ঠিক মত বসছে না।
অভিযোগ আছে, থানচি রেঞ্জের দ্বায়িত্বরত চার কর্মকর্তা নিজ অফিসে না এসে জেলা শহরে বসে অফিস বসে হিসাব-নিকাশ করেন। শহরে বসে অফিশিয়াল কাজ দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে নাম মাত্র এক অফিসে কর্মচারীকে। সেই কর্মচারী মাধ্যমে পুরো অফিসে্র কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করেন এই চার রেঞ্জের কর্মকর্তারা।
শুধু তাই নয়- শহরে বসে থেকে গাছ পাচাকারীদের সাথে যোগসাজশ করে গাছ পাচারের সুযোগ দিচ্ছেন এই কর্মকর্তারা। সে সুযোগে সঙ্খ নদী বেয়ে আনা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতি গাছ। এই চক্রটি সঙ্গে বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে উজাড় হচ্ছে এসব গাছ।
এলাকাবাসীদের অভিযোগ, প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির গাছ আসে সঙ্খ নদী হয়ে। সেসব গাছ আসে রেমাক্রী প্রাংসা ও তিন্দু ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে। শহরে আশেপাশে ও চলে গাছ কাটার মহোৎসব। কিন্তু সেসব গাছগুলো বেশীর ভাগই নেই বৈধ কাগজপত্র। নির্বিচারে অবৈধ পন্থায় গাছ এনে দিনেরাতে পাচার করছে কিছু অসাধু চক্র। সেই অসাধু চক্রের সাথে যোগসাজশে মূলহোতা বন বিভাগে চার কর্মকর্তা। তাছাড়া এই কর্মকর্তারা ঠিকমত অফিস করে না। অভিনব কৌশল খাটিয়ে অসাধু চক্রটি সেই সুযোগে অবৈধভাবে কাটা গাছ বৈধ হিসেবে পাচার করা হয়।
অভিযোগ আছে, এই কর্মকর্তারা অফিসে আসা দূরে কথা মাসিক সভাতেও উপস্থিত থাকেন না। প্রশাসন থেকে বারবার চাপ দিলেও অধিকাংশ সভাতে বন বিভাগে কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন মাঝে মধ্যে একজন আবার কখনো দুজন। তাছাড়া বন রক্ষক হয়ে যখন ভক্ষকের মতন আচরণ করতে থাকে ঠিক তখনি এই কর্মকর্তাদের অবহেলায় উজাড় হচ্ছে গাছপালা আর হারাতে বসেছে পাহাড়ের বনাঞ্চল।
সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানে থানচি উপজেলা বন বিভাগে চারটি রেঞ্জ রয়েছে। থানচি সদর, সেকদু, রেমাক্রী প্রাংসা ও মিবাক্ষা রেঞ্জ। সেসব রেঞ্জের দ্বায়িত্বে রয়েছে তৌহিদুল ইসলাম টগর, সোহেল হোসেন, মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন ও মোঃ আলমগীর। নিয়মিত কর্মস্থলে না থেকে শহরে অফিসে বসে গাছের পারমিট করে দেন এই রেঞ্জের কর্মকর্তারা। তাদের অনুপস্থিতি ও গাফিলতী কারণে এই চারটি রেঞ্জ অধীনে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পাচার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বন বিভাগকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে বন খেকোরা দিনের পর দিন বাগানের ছোটবড় গাছ নির্বিচারে কেটে পাচার করে দিচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরে পাশ্ববর্তী এলাকাতে ছাদাক পাড়া ব্রীজের নিচে গহীন জঙ্গল থেকে ঝিড়ি বেয়ে আসছে এসব গাছ। সেখানে তিনজন শ্রমিক নিয়োজিত আছে। এসব অবৈধ গাছের মালিক মং নামে পরিচিত। সেখানে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টে লোকজন উপস্থিতি দেখা যায়নি। প্রতিটি গাছে মধ্যে কোন হ্যামার চিহ্ন ছিল না। সেসব গাছগুলি সঙ্খ নদী বেয়ে রেমাক্রী প্রাংসা হয়ে অবৈধ ভাবে খালের পাশে স্তুপ করে রেখেছে। এসব অবৈধ গাছের মালিক শহীদ মাষ্টার বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে থানচি সদরে বনবিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, থানচি ব্রীজের নিচে থানচি সদর রেঞ্জের কার্যালয়। সেখানে দায়িত্বরত হিসেবে বোট চালক একজন রয়েছে। এছাড়া কার্যালয়ে কোন রেঞ্জের কর্মকর্তাদের দেখা মেলেনি। শুধু এটি নয় সেকদু, মিবাক্ষ্যা ও রেমাক্রী প্রাংসা রেঞ্জের একই চিত্র। এই রেঞ্জের কর্মকর্তারা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় অবহেলিত ভাবে পড়ে আছে কার্যালয় ভবন। তাদের মাসের পর মাস ও দীর্ঘ বছর ধরে বন কর্মকর্তারা কর্মস্থলের অনুপস্থিতি ও অবহেলায় ন্যাড়া পথে পাহাড়-বন এবং ধ্বসে হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
কথা হয় থানচি সদর রেঞ্জের বোট চালক (এসপিডি) ফরিদ মিয়া সাথে। তিনি বলেন, অফিসে আমি একা থাকি দেখাশোনা করি আর রেঞ্জের কর্মকর্তারা শহর থেকে বসে গাছের পারমিট দেন। রেঞ্জ কর্মকর্মতা অনুপস্থিত থাকে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তারা মাঝে মধ্যে আসে, প্রয়োজন ছাড়া আসেন না।
এবিষয়ে রেমাক্রী প্রাংসা ও মিবাক্ষাহ রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ জসীম উদ্দিন ও আলমগীর সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও ফোনটি ধরেননি।
সেকদু রেঞ্জের কর্মকর্তা সোহেল হোসেন বলেন, আমি কর্মস্থলে যোগদান করেছি মাত্র দেড়মাস হল। আমি নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে বিজয় দিবস উদযাপন করেছি। আর সেকদু রেঞ্জে কোন পারমিটি নাই। আর আমি প্রতিদিন কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন বলে দাবি করেন এই রেঞ্জের কর্মকর্তা।
থানচি সদর রেঞ্জের কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম টগর বলেন, আমার কাজ থাকলে যায় আর না থাকলে যায় না। অনুপস্থিত থাকার কারণ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানচি ও তারাছা দুটি রেঞ্জের আমার দ্বায়িত্ব রয়েছে। দুরত্ব হওয়ার কারণে শহর বসে অফিস করছি।
থানচি নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান চৌধুরী বলেন, মাসিক সভাতে প্রায় সময় বন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন না। প্রত্যেক মাসিক মিটিং আগে চিঠি দিলে বিভিন্ন দপ্তরে কর্মকর্তা উপস্থিত থাকা বাধ্যমূলক। কিন্তু বন বিভাগের চারজন রেঞ্জ কর্মকর্তা মধ্যে মাঝে মধ্যে একজন আবার কখনো দুজন উপস্থিত থাকে। প্রশাসন থেকে বারবার চাপ দিলেও অধিকাংশ সভাতে বন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকে না।
এব্যাপারে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক মোল্লা রেজাউল করিম বলেন, প্রত্যেক রেঞ্জের কর্মকর্তারা স্বস্ব কর্মস্থানে থাকার জন্য সরকার চাকরি দিয়েছে। নিজের কর্মস্থালে না থেকে শহর বসে অফিস করা মানে বে আইনি কাজ করছে। তাদেরকে যদি চিহ্নিত করতে পারি তাহলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হবে।
মোল্লা রেজাউল করিম বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে আমি তথ্য পেয়েছি যে রেঞ্জের কর্মকর্তা কর্মস্থালে উপস্থিত থাকে না, সে বিষয়ে ডিভিশনাল কর্মকর্তাদের কাছে উপস্থিত থাকার জন্য দুটি চিঠি দিয়েছি। তারা উপস্থিত থাকেন না সেটি যদি প্রমান করতে পারি তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।