বান্দরবানে ধর্ষণকারীদের বিচারসহ গ্রেফতারকৃত সাধারণ বম জনগোষ্ঠীদের মুক্তির দাবিতে গণসমাবেশ

0
30

।।আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান।।

তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ি নারী ধর্ষণকারীদের বিচারের আইনে আওতায় আনার পাশাপাশি গ্রেফতারকৃত সাধারণ বম জনগোষ্ঠীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে আদিবাসী ছাত্র সমাজের শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (৩১আগষ্ট) সকালে ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠ প্রাঙ্গণের গণসমাবেশ কর্মসূচি পালনকালে এসব দাবি জানান তারা।

এর আগে রাজার মাঠ প্রাঙ্গণ থেকে বের করা হয় বিক্ষোভ মিছিল। শহরে প্রধান সড়ক প্রদক্ষীন করে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। এসময় ফেস্টুন ও ব্যানার নিয়ে মিছিলে অংশ নেন শতাধিক শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশে নুমংফ্রু মারমা সঞ্চালনায় উকিং ওয়ং মারমা, অভি চাক,শৈনাং খুমি, রুনলে ম্রো, বিটন তঞ্চঙ্গ্যা, দনওয়াই ম্রো, হিরো খেয়াংসহ আরো অনেকে বক্তব্যে রাখেন।

ছাত্রসমাজের শিক্ষার্থীরা বক্তব্যে বলেন, গেল কয়েক বছর আগে চিম্বুক পাহাড়ে রিসোর্ট বানাতে চেয়েছিল বহিরাগত ব্যাক্তিরা। কিন্তু এই ছাত্র সমাজের আন্দোলনের তোপে মুখে পড়ে পিছু হটে যায়। সেটি পর থেকে এখনো পর্যন্ত সত্য উদঘাটন করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তাই পাহাড়ের কোন অপকৌশল করার চেষ্টা করলে ছাত্র সমাজ আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিহত করা হবে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, বান্দরবানে ১১টি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। যাদের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি, ধর্ম ও বর্ণ। এই শান্তপ্রিয় জেলাটিকে উস্কানিমূলক বক্তব্যে দিয়ে দাঙ্গা রুপে পরিণত চাইছে এক কু-চক্র মহল। ছাত্র সমাজ সেটিকে হতে দেয়া হবে নাহ। প্রয়োজনে ছাত্রসমাজ রাজপথে নেমে কঠোর আন্দোলন করা হবে। তবুও পাহাড়ের কোন সংঘাত হতে দিব নাহ। তাই সেসব কু-চক্র মহলকে সতর্ক থাকতে হুশিয়ারি দেন আদিবাসী শিক্ষার্থীরা।

বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্নগঠনের যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তারা সমাজের সাথে কোন সম্পৃক্ততা নাই। চাটুকারদের দিয়ে জেলা পরিষদ গঠন করা হলে আমরা আদিবাসী সমাজ মেনে নিবো নাহ। তাই জেলা পরিষদ গঠনের সময় নিরাপেক্ষ, সৎ ও পাহাড়ের সমস্যার কথা তুলে ধরার উপযুক্ত ব্যাক্তিকে দ্বায়িত্ব দেওয়া জন্য জোড় দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশ শেষে ১৩টি দফা দাবি-নামা তুলে ধরেন আদিবাসী ছাত্র-সমাজের শিক্ষার্থীরা।

১.তিন পার্বত্য জেলায় আদিবাসী নারীকে ধর্ষণ চেষ্টাকারীদের দ্রুত সময়ে দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ২. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে আদিবাসী, বাঙালি নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। ৩. আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে এবং এনসিটিবি’র পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসীদের সঠিক ইতিহাস, কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৪. সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে হারিয়ে যেতে বসা আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৫. পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যা সমাধান পূর্বক স্থানীয় অধিবাসীদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।৬. পার্বত্য চট্টগ্রামে মানসম্মত শিক্ষা ও শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষাখাতে বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে।৭. পর্যটনের নামে ভূমি বেদখল বন্ধ করতে হবে এবং স্থানীয় জনগণের হাতে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম ব্যবস্থা গড়ে তোলার দায়িত্ব দিতে হবে। ৮. বান্দরবানে পাহাড়ি-বাঙলি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী, অঙ্কিত গ্রাফিটি বিনষ্টকারী এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতাদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তারপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৯. আটককৃত নিরীহ বমদের নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে, সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে বনে জঙ্গলে পালিয়ে থাকা বম জনগোষ্ঠীদের নিজ নিজ এলাকায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং দ্রুত তম সময়ে কেএনএফ সমস্যার সমাধান করতে হবে। ১০. দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি মুক্ত, নির্দলীয়, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি ছাত্র-জনতার সাথে জন-সংযোগ ভালো এমন স্থানীয় অধিবাসী ব্যক্তিদের চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে নিয়োগ দিতে হবে। ১১. পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়ে বিভ্রান্তিকর, বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদানকারী এরূপ ব্যক্তিকে জেলা পরিষদে নিয়োগ করা যাবে না। ১২. পাহাড়ে সঠিক সংবাদ প্রচারণার জন্য সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা দিতে হবে এবং গ্রাফিটি অঙ্কনে বাধা দেওয়া ও গ্রাফিটি মুছে ফেলা বা নষ্ট করা বন্ধ করতে হবে। ১৩। জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here