এটাই আমার শেষ ইউরো

0
33

।।স্পোর্টস ডেস্ক।।

ছোট্ট কথায় বিদায়ের বিষাদী রাগিনী বাজিয়ে দিলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। বললেন, ‘এটাই আমার শেষ ইউরো’। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের যতিচিহ্ন অবশ্য টেনে দেননি পর্তুগিজ মহাতারকা, কিন্তু বর্ণাঢ্যময় এক পথচলার শেষের শুরুর ইঙ্গিত কান্নাজড়িত কণ্ঠে, আবেগী ভাষায় দিয়ে দিলেন স্পষ্ট করে।

জার্মানিতে চলমান ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ ষোলোয় টাইব্রেকারে স্লোভেনিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠে পর্তুগাল। এ ম্যাচেই একাধিকবার নির্ণায়ক হয়ে ওঠার সুযোগ কড়া নেড়েছিল দরজায়, অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টি এসেছিল সুবর্ণ সুযোগ হয়ে, কিন্তু পারেননি রোনালদো।

না পারার বেদনায় ম্যাচের মাঝেই তিনি কাঁদলেন। সতীর্থদের পিঠ চাপড়ে দেওয়া, সাহস জোগানো, কাঁধে হাত রেখে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি কোনোকিছুই যেন যথেষ্ট ছিল না রোনালদোর অশ্রুতে বাঁধ দিতে। অঝোরে ঝরতে থাকল তা।

ওই না পারার দহনে ‘পুড়ে’ যাওয়া রোনালদো ম্যাচ শেষের আলাপচারিতায় ইতি টেনে দিলেন ইউরোর আঙিনায় নিজের পথচলার। এবারের ইউরোই যে শেষ, তা নিশ্চিত করতে বললেন, “নিঃসন্দেহে।”

রেকর্ড ছয় ইউরোয় খেলার রেকর্ড গড়া রোনালদোকে আসলে পরের আসরে দেখার সম্ভাবনা ‘অসম্ভব’ই ছিল। পরের আসর বসবে যুক্তরাজ্যে ও আয়ারল্যান্ডে; রোনালদোর বয়স তখন হবে ৪৩। মন আর শরীরের মেলবন্ধন যে আর সম্ভব নয়, তা বুঝে নিয়েছেন রোনালদো। আরটিপি টিভির সঙ্গে আলাপচারিতায় অশ্রুসজল চোখে তাই জানিয়ে দিয়েছেন বিদায়ী বার্তা।

“কোনো সন্দেহ নেই, এটাই আমার শেষ ইউরো। অবশ্যই এটা আমার শেষ ইউরো। কিন্তু আমি এটা নিয়ে আবেগাপ্লুত নই। ফুটবলের সবকিছু দ্বারাই আমি অনুপ্রাণিত, খেলাটি ঘিরে আমার যে উদ্দীপনা, সমর্থকদের মধ্যে যে প্রবল আগ্রহ আমি দেখি, এখানে পরিবারকে পাওয়া, মানুষের আবেগ…সব মিলিয়ে এটা ফুটবলের পৃথিবীটাকে ছেড়ে চলে যাওয়া নয়। এর বাইরে আমার আর কী করার বা জেতার আছে?”

ফুটবল মুঠোভরে দিয়েছে রোনালদোকে। ২০০৩ সালে পর্তুগালের জার্সিতে অভিষেকের পর ২০১৬ সালে ইউরো জয়ের অনির্চনীয় স্বাদ পেয়েছেন। ১৩০ গোল নিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। জানালেন, এই বয়সে এসেও ছুটে চলার অনুপ্রেরণা তিনি অনুভব করেন ভেতর থেকে। শেষের ডাকও এসেছে মনের গহীন থেকেই।

“এই পথচলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এখানে থাকার উদ্যম এখনও অনুভব করি আমি। ২০ বছর ধরে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করছি এবং জাতীয় দলে খেলছি, মানুষকে, পরিবারকে, আমার বাচ্চাদেরকে আনন্দ দিয়েছি, যেগুলো আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে।”

কিন্তু পড়ন্ত বিকেলে এসে মানসিক শক্তির পরীক্ষায় যেন ‘হার’ মানতে শুরু করেছেন রোনালদো। ১১৪ মিনিটে পাওয়া পেনাল্টিতে তিনি পরাস্ত করতে পারেননি স্লোভেনিয়া গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাককে। ম্যাচের ভাগ্য লেখা হয়ে যেতে পারত ওই সময় রোনালদো জালের নাগাল পেলে। তা না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি, সতীর্থরা তাকে সান্ত্বনা দেন।

এরপর, দিয়োগো কস্তা টাইব্রেকারে ত্রাতা হয়ে উঠলেন, তিনটি শট ঠেকিয়ে পর্তুগালের জয়ের নায়ক এই গোলরক্ষক।

যোদ্ধাদের ভেঙে পড়তে নেই, রোনালদোও দ্রুত সামলে নেন পেনাল্টি মিসের ব্যর্থতা। টাইব্রেকারে পর্তুগালের প্রথম শটটি নিলেন তিনি এবং এবার বল খুঁজে পেল ঠিকানা। বুক থেকে যেন পাথর নেমে গেল তার।

“ফুটবলে, যারা চেষ্টা করে তারা ব্যর্থও হয়। আমি ব্যর্থ হই বা না হই, সবসময় এই জার্সিতে সেরাটা দিব। আপনারা যেমনটা দেখেছেন, আমি পেনাল্টি মিস করেছি, কিন্তু পেনাল্টি শুট আউটে আমিই প্রথম শটে স্কোর করতে চেয়েছিলাম। কেননা, যখন দলের প্রয়োজন, তখন আপনাকে দায়িত্ব নিতে হবে।”

“ভয় পেলে চলবে না। সামনে আসা দায়িত্বের মুখোমুখি হতে আমি কখনই ভীত হইনি। কখনও কখনও আমি ঠিকভাবে করেছি, কখনও পারিনি। কিন্তু হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো কিছু, কখনোই আমার ক্ষেত্রে শুনবেন না।”

টাইব্রেকারের বাইরে আসরে এখনও গোলের দেখা পাননি রোনালদো, তবে হাল ছাড়ছেন না তিনি। ইউরোর সর্বোচ্চ (১৪টি) গোলদাতা স্বাভাবিকভাবেই হতাশ, তবে দলের জয়ের তুষ্টি তার কম নয়।

“যখন আমরা গোল করতে পারি না, তখন অবশ্যই হতাশ হই, কিন্তু এটাই ফুটবল। দিনশেষে দলীয় ফল ইতিবাচক এবং এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

“এ বছর (এর আগে) টাইব্রেকারে আমি দুইবার হেরেছি। (এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার-ফাইনালে আল আইনের বিপক্ষে এবং কিংস কাপে আল হিলালের বিপক্ষে)। এবার আমি জিতেছি।”

“আমি মনে করি, ফুটবলে মাঝেমধ্যে ন্যায্য ফল হওয়া উচিত এবং এটা ছিল ন্যায্য ফল; কেননা, আমি আমি মনে করি, পর্তুগালের জয় প্রাপ্য ছিল।”

আগামী শুক্রবার কোয়ার্টার-ফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে পর্তুগাল। ‘বয়সী’ সেনানী রোনালদোও ঘোষণা দিলেন যুদ্ধে নামার।

“এখন আমাদের সামনে ফ্রান্সের বিপক্ষে কঠিন ম্যাচ, যারা জার্মানি ও স্পেনের পাশাপাশি এই টুর্নামেন্ট জয়ের সম্ভাবনায় ফেভারিট দলগুলোর একটি।”

“কিন্তু আমরা যুদ্ধে নামব…এটা ফুটবল। দল ভালো করছে। আমাদের যে প্রাণশক্তি ছিল, স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে জয় তা বাড়িয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত লড়ব আমরা।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here