রুমায় কেএনএফ’র বিরুদ্ধে মানববন্ধনে ডাক দিলেন; সচেতন নাগরিক সমাজ

0
67

ডেক্স রিপোর্ট।।

বান্দরবানের রুমা উপজেলার সদর ইউনিয়নের রিজুক পাড়ার বাসিন্দা উহ্লাচিং মারমাকে(৩৫) গুলি করে হত্যার চেষ্টার প্রতিবাদে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী কেএনএফ এর বিরুদ্ধে মানববন্ধনে ডাক দিলেন সচেতন নাগরিক সমাজ।

আজ মঙ্গলবার (১৩ফেব্রুয়ারী) দুপুরে প্রাক্ মানববন্ধনে সকল জাতিকে জানান দিয়েছে জনপ্রতিনিধিরা।

‘পাবর্ত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সকল জাতি বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিক অসহিংসতা অনুশীলনের মাধ্যমে শান্তির আদর্শগুলো শক্তিশালী করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে’। তাহলে পাবর্ত্য অঞ্চল শান্তি থাকবে। হাজার হাজার মানুষ মানববন্ধনে যোগ দিয়ে তারা বলেন, এবারে সংগ্রাম অন্য ধরনের কৌশলে দেখা যাবে মাঠে ময়দানে।

হত্যা করার বিষয়কে কেন্দ্র করে মানববন্ধনে যোগ দেয়ার আহবান জানান বক্তারা।

উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা যা বললেন, গতকাল রাতে রিজুক পাড়াতে ধুঁকে উহ্লাচিং মারমাকে গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করেছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ। প্রাথমিকভাবে রুমা সদর হাসপাতালে আনা হয়,পরে বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহত ব্যক্তি শারীরিকভাবে অবনতি হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা যায়। সকল জনসাধারনের কাছে কেএনএফ এর বিরুদ্ধে হুশিয়ারী দিয়ে জানান দেয়, যদি আহত ব্যক্তি মরে যায় তাহলে লাশ কাঁধে রেখে লাশ মিছিল বের হবো তখন দেখা যাবে আমরাও কি করতে পারি।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নুম্রাউ মারমা কেএনএফ’র বিরুদ্ধে জানান দেয়, এ রুমা উপজেলাতে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে কেএনএফ সংগঠনকে অনেক সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। তবে তারা উল্টো আমাদের মতো জনসাধারনের প্রতি গুলি করার হুমকি, হয়রানি , চাঁদাবাজি ও জোরপূর্বকভাবে গৃহপালিত পশু নিয়ে চলে যায়। আমরা এই ধরনের বুকের ভয় আর কষ্ট দিয়ে বেঁচে থাকতে চাই না। এবারে দেখা হবে রাজপথে। তিনি আরো বলেন, কেএনএফ শুধু মারমা জাতিকে নিয়ে এত হায়রানি করছে কেন? এ উপজেলাতে কি আর কোন জাতি বসবাস করে না? ঠিকাছে কাল থেকে দেখা যাবে কেএনএফ কি করতে পারে।

মারমা ওয়েলফেয়ার এর সভাপতি উথোয়াইচিং মারমা মারমা জাতির উদ্দেশ্যে সচেতনতার কথা জানালেন, যে পাড়াতে যায় সে পাড়াতে শুনা যায় শুধু কেএনএফ আর কেএনএফ। কেএনএফ এত মারমা জাতিকে হয়রানি করছে কেন? শুধু শোনা যায় গুলাগুলি। তাই আমি সকল জাতির উদ্দেশ্যে আহবান জানাতে চাই আগের মতো দু’মুঠো ভাত খেয়ে ঘরে বসে থাকার সময় নাই, আজকে থেকে সবাই মিলে রুখে দাঁড়াতে হবে কেএনএফ এর বিরুদ্ধে।

সদর ইউপি চেয়ারম্যান শৈমং মারমা শৈবং মানববন্ধনে উপস্থিত সকলকে জানান দিয়ে বলেন, কাল হবে কেএনএফ এর বিরুদ্ধে শেষ প্রতিবাদ ও মানববন্ধন। আমরা আর পিছিয়ে থাকব না, আমরাও পারি কিভাবে শেষ করতে হয়। কাল যদি মানববন্ধনে কিছু হয়ে যায় তাহলে আমরা আর কোন প্রশাসনে নির্দেশ মানবো না। এবারে দেখা হবে মানববন্ধনে । বক্তব্যের শেষে তিনি সকল সম্প্রদায়ের আহবান জানান , কাল মানববন্ধনে সকল সম্প্রদায়কে উপস্থিত থাকার।

পাইন্দু ইউপি. চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা অপহরণের বিষয়ে যা জানান দিলো, একমাস আগে আপনারাও জানেন আমি যখন লীন প্রকল্পের বার্ষিক বনভোজনে কেওক্রাডং পর্যটন স্পটে পিকনিক যাওয়ার সময় ফেরার পথে আমাকেও অপহরণ করে নিয়ে যায় কেএনএফ নামে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তখন সামরিক প্রশাসন, বেসামরিক প্রশাসন ও স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ এর সহযোগিতায় আমি মৃত্যুর পথ থেকে ফিরে আসতে পেরেছি। তাই অস্ত্র দিয়ে নয়, বুদ্ধি দিয়ে ঐ সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে আমরাও জানি। জীবন মানে বাঁচা মরা লড়াই তাই আমি আর মরতে ভয় পাই না। পারলে আমার জীবন্ত দেহ নিতে পারো। তাতে আমার কোন কষ্ট থাকবে না।

সাঙ্গু কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুইপ্রুচিং মারমা শান্তির ফিরিয়ে আনার কৌশল জানান, রুমা উপজেলাতে আগে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সকলে শান্তিভাবে বসবাস করে আসছি। তবে কয়েকবছর ধরে একটি নতুন সংগঠন কেএনএফ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে আর কোন পাবর্ত্য অঞ্চলে শান্তি ফিরে আসতে সুযোগ দেয়নি। আমরা চাই সকল জাতিকে নিয়ে বসবাস করতে,কারোর উপর জোর জুলুম দিয়ে বসবাস করতে নয়। আমরা এতদিন চুপ ছিলাম শান্তির কমিটি বিষয়টি সমাধানে আনবে বলে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট এ কমিটি হওয়ার পর আরো বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে হয়রানি বাড়িয়ে দিয়েছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ। তাই আজ থেকে দেখিয়ে দিতে চাই আমরাও কিভাবে নিজেদের রক্ষার্থে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হয়।

সচেতন নাগরিক যুব সমাজের প্রতিনিধি  অংচোওয়ং মারমা কুকি-চিন সংগঠনকে জানান দিয়ে বলেন, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট ওরফে কেএনএফ বিভিন্ন মারমা পাড়ায় গিয়ে হয়রানি,চাঁদা ও গৃহপালিত পশু হত্যা করে নিয়ে যায়,তাও আমরা সম্মান দিয়ে চুপ ছিলাম। তবে এখন কেএনএফকে সম্মান দেওয়ার সময় আর নাই,আগে অনেক সম্মান দিয়েছি। এখন আমরা মারমা জাতিরাও কাল থেকে দেখাব বম থেকে যারা নেতৃত্ব দিয়ে কুকি-চিনদের সহযোগিতা দিয়েছে,তাদের বিরুদ্ধেও আমরা একশন নিব।

বক্তারা আরো বলেন, ‘‘কাল মানববন্ধন কেএনএফ এর জন্য শেষ মানববন্ধন’’ বলে হুশিয়ারী দেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল কেএনএফের ১৭জন সদস্য অস্ত্র নিয়ে নিয়ে রিজুক পাড়াতে প্রবেশ করে । পরে চাদঁাসহ কোনকিছু না দেওয়াতেই গ্রামবাসীর উপর অত্যাচারের পাশাপাশি গুলিবর্ষণ শুরু করে। পাড়াবাসীরা গুলির ভয়ে এদিক সেদিক পালাতে থাকে। এসময় বাড়ির বাইরে থাকা উহ্লাচিং মারমা নামে এক যুবককে উদ্দেশ্য করে গুলি করে কেএনএফ সদস্যরা। গুলি লেগে আহত হয়ে এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here