
ডেক্স রিপোর্ট:
বান্দরবানের রুমা উপজেলায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর ইসিসি চার্চ, পিসিবি চার্চ, সিএমসি, প্রেস ব্যাটালিয়ান, আইবিসি চার্চ, সিওসি চার্চ ও বিভিন্ন চার্চের জন্য বড়দিন উপলক্ষে বরাদ্দকৃত সরকারি খাদ্য সহায়তা বিতরণকে কেন্দ্র করে আজ সোমবার সকালে (২২ডিসেম্বর) চাউল ডিলারদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ ও প্রতিযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। এতে উপকারভোগীরা বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়েছে, প্রত্যাশিত সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর বড়দিনকে সামনে রেখে রুমা উপজেলার খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের জন্য গির্জায় গির্জায় খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে চলতি বছর ওই বরাদ্দ ঘিরে একাধিক চাউল ডিলারের প্রভাব বিস্তার ও তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম হয়েছে জনসম্মুখে।
চার্চের একের অধিক প্রতিনিধিরা অভিযোগ করে বলেন, সরকারের নিয়ম অমান্য করে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দুই-তিনদিন আগে হেডম্যান লালসমলিয়ান (পালিয়ান) বম, সদর ইউনিয়নের মেম্বার জনমণি ত্রিপুরা ও পাইন্দু ইউনিয়নের মেম্বার লালবেন বম উপকারভোগীদের নানাভাবে বুঝিয়ে গির্জায় বাবদ ১৮ হাজার টাকা করে গ্রাহকদের হাতে তুলে দেন। আজকে আবার দেখলাম অন্য এক ডিলার কোনো কোনো গির্জায় জন্য দিল ২০ হাজার টাকা করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা মিলে, ডিলার শুক্কুর, ডিলার আলী ও ডিলার ওসমানদের মধ্যে একে অপরের সাথে ডিলারশীপ পাওয়ার জন্য নানা ধরনের দৌড়ঝাঁপের দেখা মিলেছে। কেউ দিচ্ছে ১৮ হাজার টাকা, কেউ দিচ্ছে ১৯ হাজার টাকা আবার কেউ দিচ্ছে ২০ হাজার টাকা করে এতে করে বৈষম্যের শিকার বা ক্ষতি হচ্ছে উপকারভোগীরা।
জানা গেছে, উপকারভোগী মোট চার্চের সংখ্যা ২৪৫টি তারমধ্যে আজকে ডিও লেটার পেয়েছে ৮০টি, স্থগিত রাখা হয়েছে ৬৪টি, বাকি ১০১টি চার্চের জন্য কাল বিতরণ করা হবে। সাময়িকভাবে যেগুলো স্থগিত রাখা হয়েছে সেগুলো পরবর্তী সকলের সিদ্ধান্তের অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাইন্দু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেন, খাদ্য সহায়তার তালিকা প্রণয়নে স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে। ডিলারদের প্রভাবের কারণে প্রকৃত উপকারভোগীরা উপেক্ষিত হচ্ছেন, যা উৎসবের আনন্দকে ম্লান করে দিচ্ছে।
এদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. কাওছার আলী বলেন, খাদ্যশস্য প্রদানের জন্য আমরা ডিও লেটার তালিকার অনুসারে উপকারভোগীদের মধ্যে কাগজপত্র বিতরণ দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু চাউল বা টাকা আমরা কোন গ্রাহককে দেয়নি। এটি সম্পুর্ণ ডিলারদের বিষয়,কে কাকে কত দিয়েছে এটা একমাত্র ডিলার ও উপকারভোগীরা বলতে পারবে। উপকারভোগীদের সাথে কোন প্রকারের অর্থ লেনদেন করেনি।
এ বিষয়ে রুমা উপজেলা প্রশাসনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেলে তা তদন্ত করে দেখা হবে এবং অনিয়ম প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, “খাদ্য সহায়তা যেন প্রকৃত উপকারভোগীদের কাছেই পৌঁছায়, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি।”
স্থানীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারা দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায্য বণ্টনের দাবি জানিয়ে বলেন, বড়দিনের মতো ধর্মীয় উৎসবে এ ধরনের বৈষম্য অনাকাঙ্ক্ষিত এবং দুঃখজনক।
