আকাশ মারমা মংসিং।।বান্দরবান।।
বান্দরবানে স্থানীয়দের কাছে অন্যতম প্রিয় খাবারের নাম মুহডি। চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা খাবারটি মূলত পাহাড়িদের এক প্রকার স্থানীয় নুডুলস। যে খাবার খেতে প্রতি সকাল বিকালে সেসব দোকানে ভীড় যেন লেগে থাকে। বান্দরবানে প্রায় ৩০ বছর ধরে মুহডি বিক্রি করে আসছেন দুই ভাইরা ভাই। সপ্তাহে বাজার দুদিনে একই স্থানে বসে মুহডি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন মদন ও সোনাই বড়ুয়া।
বান্দরবানে সর্বপ্রথম মুহডি বিক্রি শুরু করেছিল ক্যসামং মারমা ও মংপ্রু মারমা নামে দুই ব্যাক্তি। কিন্তু তারা এখন আর বিক্রি করেন নাহ। তাদের সাথে তালমিলিয়ে নিজেরাই চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি করে মুহডি বিক্রি করা শুরু করেছিলেন মদন ও সোনাই বড়ুয়া নামে দুই ব্যক্তি। ১৯৯৪ সালে স্থানীয় মারমা বাজারে অর্থ্যৎ বর্তমানে মাতৃমঙ্গলে সামনে সড়কের পাশে বসে মুহডি বিক্রি শুরু করেন। নব্বই দশকের আগে এই মুহডি খাবারে প্রতি প্লেটের দাম ছিল মাত্র পাঁচ টাকা। বাজার দিনে মানুষ কম আসাতেই তেমন বিক্রি হত নাহ। তাই প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে বিক্রি শুরু করেন। ওসময় জিনিসপত্রে দাম ছিল কম। তখন সবকিছু বাদ দিয়ে তাদের আয় হত ৭০০-৮০০ টাকা।
বান্দরবানের মধ্যম পাড়ায় সড়কের পাশে একই স্থানে বসে ৩০ বছর ধরে মুহডি বিক্রি করে আসছেন এই দুই ব্যাক্তি। তাদের বাড়ি পৌরসভা বালাঘাটা এলাকায়। বর্তমানে মদন বড়ুয়া ঘরে এক ছেলেসহ পরিবারের সদস্য তিনজন। একইভাবে সোনাই বড়ুয়া থেকে পরিবারের সংখ্যা তিনজন। মুহডি বিক্রি হলে সংসারে চাকা ঘুরে আর বিক্রি না হলে সংসারের চাকা থমকে যায়। প্রশাসন থেকেও কোন সহযোগীতা পাননা। এভাবে প্রতি বাজারের সপ্তাহের দুদিন ভোর হলে সড়কের পাশে বসে মুহডি বিক্রি শুরু করেন। প্রতিদিন তাদের আয় হয় ৪ হাজার – সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আগে থেকে এই মুহডি খাবার চাহিদা বাড়লেও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়াই বিক্রি নিয়ে সন্তষ্ট নন এই দুই ব্যাক্তি।
বান্দরবানে প্রতি বাজারের হাট বসে সপ্তাহে দুইদিন ‘রবিবার ও বুধবার’। ভোরে উঠে এক সপ্তাহ থেকে ১৫ দিনের মতো চালকে পানিতে ভিজিয়ে রাখা চাউল গুড়া ভাঙ্গানো শুরু করেন। মুহডি তৈরী করতে বাড়িতে শ্রমিক রয়েছে দুজন। তাদেরকে পারিশ্রমিক দিতে হয় একহাজার টাকা। একজন ভেজানো চালকে ঢেকিতে দিয়ে গুড়া করছেন অপরজন গরম পানি দিয়ে ছোট ছোট দলা করছেন । পরে একটি বিশেষ মেশিনের মাধ্যমে তৈরি করা হয় মুহডি বা নুডলস। সেসব জিনিসপত্র নিয়ে নিদ্দিষ্ট স্থানে মুহডি বিক্রি করতে ছুটে যান ভোর সকাল ছয়টায়। সেখানে সকাল থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত মুহডি বিক্রি করেন। সহযোগীতা করতে একজন শ্রমিকের দাম দিতে হয় ৩০০টাকা। তবে বাজারের জিনিসপত্রে দাম বেশী হওয়াই বিপাকে পড়েছেন মুহডি বিক্রেতা মদন ও সোনাই বড়ুয়া নামে দুই ব্যক্তি।
নব্বই দশকের আগে এই দুজন বিক্রি করলেও বর্তমানে স্থানীয় বাজারের মুহডি দোকান রয়েছে প্রায় চল্লিশটির বেশী। আগে প্রতি প্লেটের মুহডি দাম ছিল পাঁচ টাকা। বর্তমানে জিনিসপত্রে দাম লাগামহীন হওয়াই দাম বেড়েছে ত্রিশ টাকা। দাম বাড়লেও এখনো চাহিদা কমেনি বাজারের। দিনদিন আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই খাবার। তবে এসব মুহডি বিক্রেতাদের কোন সমিতি না থাকায় অনান্য সময় নানা সমস্যা মুখোমুখি পড়তে হয় তাদের।
মুহডি বিক্রি নিয়ে কথা হয় মদন ও সোনাই বড়ুয়াদের সাথে। তারা জানিয়েছেন, ৩০ বছর ধরে একই স্থানে বসে মুহডি বিক্রি করে আসছেন। এটি তাদের বংসপরম্পরায় পেশা না হলেও ব্যবসা হিসেবে তারা বেছে নিয়েছেন। আগে মুহডি বিক্রি করে যে আয় হত সেই আয়ের তুলনায় এখন তা অনেক কম। বর্তমানে জিনিসপত্রে উর্ধ্বমুখী হওয়াতেই মুহডি তৈরী করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। কোন সমিতি না থাকায় প্রশাসনের সহযোগীতা থেকে বঞ্চিত সকলেই। তবুও নিজেদের এই ব্যবসা ধরে রাখতে সপ্তাহে দুবার বাজারে মুহডি বিক্রি করতে আসেন এই দুই ভাইরা ভাই।
তারা আরো জানান, কোন সমিতি কিংবা সংগঠন না থাকলেও প্রশাসন যদি তাদের দিকে তাকিয়ে কোন সহযোগীতা হাত বাড়ান তাহলে ভবিষ্যতে অন্যতম প্রিয় খাবারের হিসেবে এই মুহডি ব্যবসা ধরে রাখতে পারবেন বলে মনে করছে এই দুই বিক্রেতা।