সোমবার, ডিসেম্বর ৮, ২০২৫
Homeআবাহাওয়াশীতের মাঝামাঝি তিল কাটার উৎসবের আমেজ বাড়ছে পাহাড়ে

শীতের মাঝামাঝি তিল কাটার উৎসবের আমেজ বাড়ছে পাহাড়ে

স্টাফ রিপোর্টার:

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় শীতের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়েছে পাহাড়ি জুম চাষের অন্যতম লাভজনক মৌসুমি ফসল তিল সংগ্রহ। দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী তাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যবাহী জুম চাষ পদ্ধতিতে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এই পদ্ধতিতে তিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল হিসেবে পরিচিত—কম খরচ, কম পরিচর্যা, অথচ তুলনামূলকভাবে বেশি লাভজনক।

আজ ৮ ডিসেম্বর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা মিলে, জুম চাষীরা তিলের গাছ কেটে বীজ সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। চাষীদের ভাষ্যমতে, তিল কাটার উপযুক্ত সময় হলো ভোর সাড়ে ৪টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত—এই সময়টায় কুয়াশা থাকে বলে গাছ কাটা সুবিধাজনক হয়। সূর্য ওঠার পর গাছ কাটলে বীজ ঝরে মাটিতে পড়ে যায়, ফলে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়।

একজন চাষী জানান, ভোর ৪টার দিকেই তিলের গাছ কাটার পর সেগুলো কয়েক ঘণ্টা বা সামান্য সময় সাপ্তাহিকভাবে রেখে দেওয়া হয়। পরে গাছ শুকিয়ে এলে ধীরে ধীরে তিলের বীজ সংগ্রহ করা হয়।

৩২ বছর বয়সী হ্লাশৈথোয়াই মারমা জানান, তিল চাষে আলাদা করে জমি প্রস্তুত বা কর্ষণের প্রয়োজন নেই। জুমে ধান লাগানোর শুরুতে তিলের বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ধান কাটার প্রায় দুই মাস পরই তিল পেকে ওঠে এবং সংগ্রহের উপযোগী হয়।

স্থানীয়দের মতে, বাজারে তিলের চাহিদা সবসময়ই ভালো। তবে উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রমের তুলনায় ন্যায্যমূল্য মিলছে না অনেক সময়। দুর্গম যোগাযোগব্যবস্থা, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকট—এসব সমস্যার পাশাপাশি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট।

জুমচাষি প্রহ্লাঅং মারমা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে তিলের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। সিন্ডিকেট ইচ্ছে করে দাম কমিয়ে রাখে। এতে আমাদের চাষে আগ্রহও ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। সঠিক বাজারব্যবস্থা ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না হলে তিল চাষ টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন হয়ে পড়বে।

রুমা উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা আল হাসির গজনফর আলী জানান, পাহাড়ি অঞ্চলের জুমচাষকে আধুনিক, পরিবেশসম্মত ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই করতে তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সহায়তা কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। চাষিদের সঠিক পরিচর্যা, উন্নত বীজ ও বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নতির মাধ্যমে আগামী মৌসুমে তিল উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।

পাহাড়ে এ শীতের মৌসুমে তিলের ফসল ঘরে তুলতে পেরে মুখে হাসি ফুটেছে পাহাড়ি জুমচাষিদের। তবে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হওয়া এবং বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি—অন্যথায় পাহাড়ে তিল চাষের এই ঐতিহ্য দিনে দিনে হারিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।

সম্পর্কিত আর্টিকেল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: