।।লামা প্রতিনিধি।।
বান্দরবানের লামা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আগামী ২১ মে ২য় দফায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যন পদে ২ জন, ভাইস চেয়ারম্যন (পুরুষ) পদে ৪ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যন পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যতই ভোটের দিন এগিয়ে আসছে ততই জমে উঠছে ভোটের লড়াই।
শেষ মুহুর্তে প্রার্থীরা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিরামহীন ভাবে গণসংযোগ ও প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। ভোটারদের মন জয় করতে চেষ্টার কোন কমতি রাখছেন না। স্ব-স্ব প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন। এ যেন খাওয়া দাওয়ার সময় নাই। প্রার্থীদের পাশাপাশি তাদের কর্মী সমর্থকেরা নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে জোর প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। নিজ প্রার্থীর জন্য ভোটাদের কাছে ভোট চাইছেন। করছেন উঠান বৈঠক, পথ সভা-সমাবেশ। শহর থেকে গ্রামীন জনপদে প্রার্থীদের রঙিন ও সাদাকালো পোষ্টার শোভা পাচ্ছে। বেলা ২টার পর শুরু হয় মাইকের প্রচার। শহর থেকে গ্রামে শব্দযন্ত্রে ‘ভোট চাই ভোটারের, দোয়া চাই সকলের। আর ” খেলা হবে আগামাী ২২ তারিখ,বহুত দিন হাইও আর নখাইও” স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে লামা উপজেলার প্রান্তিক জনপদে।
জানা গেছে, এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ও দলীয় মনোনয়ন দেয়নি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ রেখে নির্বাচন উন্মুক্ত রেখেছে। যদিও নির্বাচন উন্মুক্ত রাখা হয়েছে, কিন্তু মানুষের মাঝে রয়েছে ভিন্ন চিন্তা। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকে লড়াই করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তফা জামাল। অন্যদিকে মোটর সাইকেল প্রতীকে লড়াই করছেন উপজেলা বিএনপিও সহ-সভাপতি জাকের হোসেন মজুমদার। যদিও দলেও সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে নির্বাচন করায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হলেও সাধারণ মানুষ আনারস মানে নৌকা প্রার্থী এবং মোটর সাইকেল মানে বিএনপি মনে করছেন।
অপর দিকে উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ জাহেদ উদ্দিন তালা প্রতীকে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ কান্তি দাশ টিউবয়েল প্রতীকে, উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্বাস উদ্দিন সেলিম চশমা প্রতীক এবং লামা পৌর যুবলীগের বহিস্কৃত সভাপতি সাইদুর রহমান উড়োজাহাজ প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মিলকী রাণী দাশ ফুটবল মার্কা, সোলতানা নাজমা প্রজাপতী এবং বৈশালী বড়ুয়া কলসি মার্কায় নির্বাচন করছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ও মহিলা প্রার্থীরা সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত হওয়ায় একে অপরকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাঠে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষ মুহুর্তে ছোট ছোট কিছু আচরণবিধি লঙ্ঘণের ঘটনা ঘটলেও অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে।
সরজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ মোস্তফা জামাল এর পক্ষে দলীয় সিদ্ধান্ত মতে সকল নেতাকর্মীরা কাজ করছে। কিন্তু জাকের হোসেনের পক্ষে বিএনপির কোন নেতা কর্মীরা কাজ করছেনা। স্থানীয় নির্বাচন হওয়ায় প্রার্থীর সমর্থনে এবার ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি থাকতে পারে বলে ধারণা করছে।
অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকের হোসেন মজুমদার বিগত সময়ে দুইবার লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। তার বাবাও দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান ছিলেন। এসব কারণে উপজেলা জুড়ে জাকের হোসেন মজুমদারের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। অভিজ্ঞতা ও পরিচিতির কারণে তিনিও এগিয়ে রয়েছেন। তাছাড়া বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামাতের সমর্থকেরা কেন্দ্রে গেলে তাদের ভোটটা জাকের হোসেন পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছে সাধারন মানুষ।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ত্রি-মুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। মিলকী রাণী দাশ ফুটবল মার্কা, সোলতানা নাজমা প্রজাপতী এবং বৈশালী বড়–য়া কলসি মার্কার মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ায় এবং মহিলা লীগের নেত্রী হওয়ায় মিলকী রাণী দাশ সবার কাছে পরিচিত। তবে ভোটের হিসাব যাই হোক, সাধারণ মানুষের ভাবনায় সুষ্ঠু ভোট। সাধারণ মানুষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বিঘ্নে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রয়োগ করতে চায়। ‘সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা’ এমন সংশয়ও সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা গেছে।
৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে লামা উপজেলা গঠিত। এ উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ৮২ হাজার ২১৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৪২ হাজার ৯০৪, মহিলা ৩৯ হাজার ৩০৯ ভোট। এর মধ্যে লামা পৌরসভায় ১৫ হাজার ২১১ জন, লামা সদর ইউনিয়নে ৬ হাজার ৪৮৩ জন, গজালিয়া ইউনিয়নে ৮ হাজার ২১৮ জন, সরই ইউনিয়নে ৭ হাজার ৭৫২ জন, ফাইতং ইউনিয়নে ৯ হাজার ৩৮৭ জন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ১৮ হাজার ৪৪৬ জন, রূপসীপাড়া ইউনিয়নে ৮ হাজার ৬১০ জন ও আজিজনগর ইউনিয়নে ৮ হাজার ১০৬ জন ভোটার রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ লামা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
উপজেলা নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানে সকল আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বিঘ্নে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।