রাজস্থলীতে ম্যালেরিয়া প্রকোপ বাড়লেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, জ্বর ও পেট ব্যথার রোগী  বাড়তি 

0
6

উচ্চপ্রু মারমা।।রাজস্থলী।।

হঠাৎ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য জায়গার মতো রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী  উপজেলায় এই বছর ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। গত জুন মাসে উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে শতাধিক ম্যালেরিয়া রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশ রাজস্থলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে বলে জানা গেছে।তবে এখনো জ্বর পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেশী। রাজস্থলী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে সকলেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। চলতি জুলাই মাসের ১৩ জুলাই পর্যন্ত আরোও ১১জন ম্যালেরিয়া রোগী সনাক্ত হয়েছে। যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে,  রাজস্থলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (এন্টেনি)   সানজিদা ইসলাম রিয়া তাঁর দপ্তরের বিষয়ে আরোও জানান, বিশেষ করে উপজেলার ২নং  গাইন্দ্যা  ইউনিয়ন এর দূর্গম  চুশাক  পাড়া, নারাইছড়ি, বলি পাড়া, আড়াছড়ি পাড়া এবং বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া  ইউনিয়ন দুমদুমিয়া সাইচল জিকজাক  এর দূর্গম এলাকায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুভার্ব বেশী হচ্ছে।

গতবছর এর তুলনায় এই বছর ম্যালেরিয়ার সনাক্তের হার বেশী হচ্ছে। গত বছরের জুন মাসে যেখানে গড়ে ১০  জন ম্যালেরিয়া রোগী এবং সারা বছরে ২০০শত ১৫ জন রোগীর ম্যালেরিয়া সনাক্ত হলেও এই বছর শুধুমাত্র জুন মাসে হাসপাতালের বেডে ৫৯ জন রোগী ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্ষা শুরু হবার পর বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক নারী ও পুরুষ ম্যালেরিয়া রোগী আক্রান্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা জানান।

তিনি আরোও জানান, সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক মিলে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করায় ম্যালেরিয়ায় এই উপজেলায় এখনো কোন রোগী মৃত্যুবরণ করেনি। এই বিষয়ে জনগণকে আরোও বেশী সচেতন হতে হবে, মশারী ব্যবহার করতে হবে এবং জ্বর হলেই ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করাতে হবে। এছাড়া পার্বত্যঞ্চলে ভ্রমনকারী সকলকে ফিরে যাবার পর জ্বর হলে অবশ্যই ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করতে হবে।

এদিকে হাসপাতালে কর্মরত নার্সিং সুপারভাইজার,( ওয়ার্ড ইনচার্জ) থুইমাচিং মারমা  বলেন, আজকে (১৩ জুলাই) পর্যন্ত ১১জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং গত জুন মাসে ২০০ জনের মধ্যে ৫৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।তিনি আরো বলেন, আমাদের হাসপাতালে লোকবল সংকট, নেই আয়া ক্লিনার, কুকার ইত্যাদী তবে  পর্যাপ্ত পরিমান ঔষুধ সরবরাহ আছে।
কথা হয় হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা পেট ব্যথা ও জ্বরের  আক্রান্ত রোগী সাইমন এর সাথে। তিনি বলেন, আমি দুর্গম সীমান্ত সড়কে কাজ করার জন্য আসছি   হটাৎ জ্বর বমি ও পেট  ব্যথা  হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছি, বর্তমানে আমি সুস্থ আছি।
এসময় কথা হয়  হাসপাতালে ভর্ত্তি হওয়া  রোগী গাইন্দ্যা  ইউনিয়নের হ্নারা মুখ পাড়ার এক গ্রামের যুবতীর সাথে। তিনি বলেন, আমার জ্বর হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।রক্ত পরীক্ষার দিয়েছি এখনো কোন রির্পোট আসেনি। তবে ডাক্তার সংকটের মধ্যে ও এখানে ভালো মতো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি।তবে রোগীর অবস্থা বেগতিক হলে তাৎক্ষনিক চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টান হাসপাতালে রেফার করা হয়।

এদিকে পার্বত্যঞ্চলের স্বাস্থ্য সেবার বাতিঘর চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডা: প্রবীর খিয়াং এর সাথে আলাপ কালে তিনি  বলেন, ম্যালেরিয়া হচ্ছে একটি মশা বাহিত রোগ যা অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এটি হচ্ছে প্লাজমোডিয়াম নামে একটি পরজীবী রয়েছে যার কারণে এটি হতে পারে। যার কারণে যখন জ্বর হয় তখন সাধারণত মাথা ব্যাথা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর অবসাদ হয়। যদিও বর্তমান সময় এখন আরো নানারকম উপসর্গ দেখা দিচ্ছে এখন দেখা যাচ্ছে ডায়রিয়া হওয়া রোগীর ক্ষেত্রেও তারা ম্যালেরিয়া আক্রান্ত। বিশেষ করে পার্বত্য এলাকায় এটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে বেশ কয়েক বছর যাবৎ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here