মেঘ পাহাড়ের স্বর্গরাজ্য আলীকদমের মারাইংতং পাহাড়

0
123

সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাঁ।।আলীকদম।।

‎বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা একটি উঁচু-নিচু পাহাড়ি এলাকা। যার চারপাশে শুধু পাহাড়ের সারি। একটির চেয়ে যেন আরেকটি বেশি উঁচু। যারা ট্রেকিং করতে পছন্দ করেন তাদের কাছে পাহাড় মানেই ভিন্ন আকর্ষণ। বর্তমানে পাহাড়ি সব দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সাজেক, নীলগিরি বা নিলাচল জনপ্রিয় হলেও এখন বর্তমানে মেঘ পাহাড়ে স্বর্গরাজ্য আলীকদমের মারাইংতং পাহাড় পর্যটকদের বেশ নজর কেড়েছে।

‎বিশাল সবুজের মাঝে অবস্থিত মিরিঞ্জা রেঞ্জের একটি পাহাড়ের নাম মারাইংতং। এর উচ্চতা প্রায় ১,৬৬০ ফুট উচ্চতা। অনেকে এ পাহাড়কে মারায়ন তং বা মারায়ন ডং নামেও ডেকে থাকেন। পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের একটি ধর্মীয় উপাসনালয় বৌদ্ধ মন্দির।এ উপাসনালয়টির চারপাশ খোলা এবং মাথার উপরে চালা দেওয়া। এ বৌদ্ধ মন্দিরে আছে বিশাল বৌদ্ধ মূর্তি।নতুন করে আরও বেশ কিছু বুদ্ধ মুক্তি স্হাপন করছে যা পর্যটকদের দৃষ্টি নন্দন করে তুলবে।

‎সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি এ স্থানটি। দর্শনীয় স্থান হিসেবেও স্থানটি মনোরোম এবং দৃষ্টিনন্দন। মারাইংতং পাহাড় পাড়ের উপর থেকে যত দূর দৃষ্টি যায়, দেখতে পাবেন শুধু পাহাড় আর পাহাড়। আর এসব পাহাড়ের ফাঁকে রয়েছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের ছোট ছোট ঘরবাড়ি, জুমঘর,রাস্তা,ফসলের জমি,ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সাজানো বাগান বাগিচা। এ ছাড়াও নিচে সাপের মতো এঁকে-বেঁকে বয়ে চলেছে মাতামুহুরী নদী। বৃষ্টির দিনে মনে হয় আকাশ যেন মাটির সাথে মিশে আছে এবং সবমিলিয়ে স্থানটি বেশ রোমাঞ্চকর অনুভূতি সৃষ্টি করবে। মারাইংতংয়ে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো জুলাই শেষ হতে আগস্ট থেকে অক্টোবর মাস।

‎পাহাড়ও দেখতে পারবেন আবার বিভিন্ন উপজাতিদের সঙ্গেও সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন মারাইংতংয়ে গেলে। প্রকৃতির অপার বিস্ময় লুকিয়ে আছে সেখানে। এ পাহাড়ের বিশেষত্ব হলো ‘এই চূড়া একেবারেই সমতল স্থানের মতো’। এ কারণেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা স্থানটি তাদের বসবাসের জন্য বেছে নিয়েছেন। মারাইংতং পাহাড়ে বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস। এদের মধ্যে মুরুং, তঞ্চঙ্গ্যাঁ,মারমা ও ত্রিপুরা অন্যতম। পাহাড়ের ঠিক নিচের অংশে বসবাস মারমাদের। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে মুরংদের গ্রাম। তাদের সাঁজানো বাগান বাগিচা,জুম চাষের দৃশ্য,পাহাড়ের ঢালে তারা বাড়ি বানিয়ে বসবাস করেন। মাটি থেকে সামান্য ওপরে এদের টংঘর। এসব ঘরের নিচে থাকে বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন-গরু, ছাগল, শূকর, মুরগি। কখনো গবাদি পশুর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জ্বালানি কাঠও রাখা হয় স্তূপ করে।

‎এ পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে সময় লাগতে পারে পায়ে হেটে ২ ঘণ্টারও বেশি। বর্তমানে কোটি টাকা দিয়ে একটি কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে যাতায়াতের জন্য,তবুও প্রতিদিন আদিবাসী জনগোষ্ঠীরা প্রতিকূল এ পরিবেশে জীবনধারণ করছে। যা সত্যিই বিস্ময়কর। মারাইংতংয়ে গেলে আপনি দৈনন্দিন কাজকর্ম ও তাদের জীবনধারণ পদ্ধতি সম্পর্কেও জানতে পারবেন। আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের পাশাপাশি বাঙালিরাও তাদের নিত্যদিনের আয়-রোজগারের জন্য এই পাহাড়ের ওপর নির্ভরশীল। বাঙালিদের অনেকেই পাহাড়ে জন্মানো মুলি বাঁশ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। অনেকেই ব্যবসা,মোটরবাইক চালিয়ে জীবন জীবিকা চালিয়ে যাচ্ছে।

‎রোমাঞ্চকর মারাইথং পাহাড়ে যেভাবে যাবেন- ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আলীকদম বাসস্ট্যান্ড সরাসরি বাস গাড়িযোগে আসা যায়। ভাড়া পড়বে ঢাকা থেকে ১,১০০ টাকা আর চট্টগ্রাম থেকে ৫০০ টাকা। তারপর সেখান থেকে অটোতে দিয়ে আবাসিকে নেমে যাবেন,ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৩০ টাকা করে। আবাসিকে নেমে ডান পাশের রাস্তা ধরে প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন আলীকদমের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় মারাইংতং। সেখানে খাবার ও পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। এজন্য শুকনো খাবার ও পানি সমতল থেকেই নিয়ে যেতে হবে।

‎এ ছাড়াও ঢাকা থেকে বাসে করে চকরিয়া যেতে পারবেন ৮৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে। চকরিয়া থেকে আলিকদম যাওয়ার জন্য লোকাল জিপে উঠবেন। ভাড়া পড়বে ১০০ টাকা। আলীকদম যাওয়ার আগেই আবাসিক নামক জায়গায় নেমে যাবেন। সেখান থেকে হাতের ডানের রাস্তা ধরে ৩ ঘণ্টা হাটলেই মারায়ন তং বা মেরাইথং পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে যাওয়া যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here