বৃষ্টিস্নাত মায়াবী সবুজ পাহাড়ে পর্যটকদের হাতছানি দিচ্ছে বান্দরবানে

0
20

।।আকাশ মারমা মংসিং বান্দরবান।।

শ্রাবণ মাস। চলছে বর্ষার দ্বিতীয় পর্ব। সামনে শরৎ। প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে পাহাড়ের প্রকৃতি। বৃষ্টিস্নাত মায়াবী সবুজ পাহাড় এখন যেন যৌবন ফিরে পেয়েছে। প্রতিটি পাহাড় থেকে এখন ঝড়ে পড়া ঝিড়ি-ঝর্ণা। মাঝদুপুরে নীল আকাশে ভেসে যাচ্ছে মেঘের ভেলা। পাহাড়ি বনের দিকে পা বাড়ালে কানে ভেসে আসে ঝরনার শব্দ। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে পাহাড়ে যাওয়ার দারুণ সময় এখন।

যাঁরা এ শহরে ভ্রমণের কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য অপেক্ষায় আছে বান্দরবান। বান্দরবানে মেঘের খেলা আর সবুজ পাহাড়, আকাবাকা মেথো পথে উড়ন্ত গতিতে ছুটে চলা নীলগিরি মেঘের দেশে হাতছানি দিচ্ছে পর্যটকদের। ঘুরে বেড়ানো তো বটেই, যাঁরা ভিন্ন রকমের খাবারের স্বাদ নিতে চান, তাঁদের জন্যও এটাই পাহাড়ে যাওয়ার উপযুক্ত সময়।

বান্দরবান থেকে থানচি সড়কের তীরবর্তী অনেক এলাকায় গড়ে উঠেছে সুন্দর সব রিসোর্ট। এগুলোর মধ্যে সাইরু,ইকো রিসোর্ট,গ্রিনপিক, তার মধ্যে তং ইকো রিসোর্ট অন্যতম। এ ছাড়া রয়েছে সাঙ্গু নদীতে ছুটে যাওয়া ইঞ্জিন চালিত বোট। সাঙ্গু নদী কিনারা ঘেষে পাহাড়িদের মাচাং তৈরী ছোট ছোট গ্রাম। যাওয়ার পথে পাহাড়ের বাতাস আর বৃষ্টি মৃদু ঢেউয়ের কলকল শব্দ ঘুমে আনবে প্রশান্তি। মন করবে পুলকিত।

শুনতে অবাক লাগতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বছরের সব ঋতুতে খাবারের স্বাদ এক রকম থাকে না। বৃষ্টি আর নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া পাহাড়ি খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক গুণ। এ সময় প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া খাবার থাকে একেবারেই নতুন আর তরতাজা।

পাহাড়ের মানুষেরা জানিয়েছেন, এখন পাহাড়ে উৎপাদিত হরেক রকম সবজির স্বাদ মিলবে। কচি বাঁশের তরকারি অর্থাৎ টাটকা বাঁশ কোড়লের স্বাদ নেওয়া যাবে এখন। পাহাড়ের ছড়ায় এ সময় পাওয়া যায় দাঁড় কাঁকড়া বা চাকমা ভাষায় যাকে বলে মোন কাঁকড়া। মোন মানে বড় ও উঁচু পাহাড়। স্বাদে অতুলনীয় এ কাঁকড়া সামুদ্রিক কাঁকড়ার চেয়ে আকারে প্রায় দ্বিগুণ। স্বাদেও দুর্দান্ত। পাহাড়ে এখন খাওয়া যাবে আমিলা বা টকপাতা অথবা জুমে উৎপাদিত আঠালো মিষ্টিকুমড়া দিয়ে মোন কাঁকড়ার তরকারি। এছাড়াও পাহাড়ের আদা ফুল দিয়ে মরিচ ভট্টা চাটনি আর রাতে তাবু টাঙিয়ে আকাশে দিকে তাকিয়ে তারার মেলা।এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা মিলে এই মৌসুমে।

বান্দরবানের বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও এখন পুরোপুরি নাই বললে চলে। জেলা শহর থেকে শুরু থেকে বিভিন্ন স্থানে গেলে সড়কের পাশে শুধুই নিরাপত্তা। চিম্বুক,শৈলপ্রপাত, নীলগিরি, টাইটানিক ভিউ,নিলাচলসহ প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্রে প্রকৃতির সবুজের চিত্র। বিকাল গড়িয়ে আসলে সবুজ প্রকৃতি ফুটিয়ে তুলছে পাহাড় পর্বত।

জেলা হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাহাড়ের আগে নানা অস্থিরতা তৈরি হলেও এখন নাই বললেও চলে। পর্যটকদের ঘোরাঘুরি এখন উপযুক্ত সময়। এই মৌসুমে ঝিড়ি-ঝর্ণা প্রাণ ফিরেছে। সেখানে গেলে ঝর্ণা থেকে তৈতুং করে পানি পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। পাহাড়ের গাড়ি নিয়ে ছুটে গেলে মেঘের খেলা আর টিপ টিপ হালকা বৃষ্টির পানি। বলা চলে এই মৌসুমে এখন হাতছানি দিচ্ছে পর্যটকদের। পর্যটকদের সুবিধা জন্য রাখাও হয়েছে হোটেল-মোটেল ছাড়।

জেলা হোটেল-মোটেল রিসোর্টে ব্যবসায়ী সমিতি সাংগঠনিক সম্পাদক মো; জসিম উদ্দিন জানান, পাহাড়ে এখন যৌবন ফিরেছে। ঝিড়ি-ঝর্ণাসহ প্রতিটি স্থানে পানি ভরপুর। তাছাড়া প্রাকৃতিক নৈসর্গিক এখন রুপ বদলেছে। পাহাড়ের এখন বৃষ্টি সাথে মেঘের খেলা। আগের মত পাহাড়ের অস্থিরতা নাই বললেও চলে। তাছাড়া পর্যটকদের জন্য ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ছাড় হিসেবে রাখা হয়েছে। এই মৌসুমে পর্যটকদের প্রকৃতিক উপভোগ করার উপযুক্ত সময়।

জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা জন্য প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশ সজাগ রয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে হটলাইন নাম্বার দেয়া হয়েছে যাতে যেকোন ঘটনার সাথে সাথে ট্যুরিস্ট পুলিশ ঘটনাস্থল পৌছে যাবে। আর পর্যটকদের নিরাপত্তা স্বার্থের আমরা বদ্ধপরিকর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here