।।আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান।।
পাহাড়ের এই ফুলের নাম আদা ফুল। শুরুতেই লালচে পরিপক্ব হয়ে গেলে পুরো ধবধবে সাদা। এমনই ফুল বান্দরবানে স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে প্রতিনিয়ত । শুধু হলুদ ফুল নয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে আদা ফুল, শাপলা ফুলসহ হরেক রকমে সবজির ফুল। সেসব ফুলের রাজত্ব যেন স্থানীয় বাজারগুলোতে। দেখতে সাদা হলেও প্রতিটি আটির দাম গুনতে হবে বেশ টাকা। পাহাড়িদের কাছে যেমন চাহিদা রয়েছে তেমনি চাহিদা রয়েছে পর্যটকদের কাছেও। সেসব ফুল তরকারি কিংবা তোহজা(চাটনি) খাবার হিসেবে স্থানীয় বাজারে রেষ্টুরেন্ট গুলোতে।
বছরে সাধারণত একবার হলুদ গাছের শিকড় তোলা হয়। পরের বছর পুরানো শিকড় থেকে নতুন গাছ গজায়। হলুদের গাছে কোন ডালপাল হয় নাহ। হলুদ ফুল বয়স হলেই গাছে গোড়াতে হলুদ ফুল দেখা যায়। কান্ডের মাঝখানে সাদা ফুল বের হয়। প্রতিটি গাছ থেকে একটি ফুল বের হয়ে থাকে। যা ৩০ -৪০ সেমি লম্বা এবং ৮ -১২ সেমি চওড়া। পুষ্পবিন্যাস এর দৈর্ঘ্যে ১০ -১৫ সেন্টিমিটার।তবে সব গাছের এসব ফুল দেখা মিলে নাহ। এই ফুলের উৎকন্ঠ গন্ধ আছে। তবে এই ফুল থল কিংবা সবজি হয় নাহ।
জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারী অর্থাৎ চৈত্র মাসে পাহাড়ের জুমের ধানের সাথে হলুদ গাছ রোপন করা হয়। তবে হলুদের বিভিন্ন ধরনের জাত রয়েছে। সব হলুদের গাছে এই ফুলের দেখা মিলে নাহ। আগষ্ট- সেপ্টেম্বর শুরুতেই জুমে দেখা মিলছে আদা ফুলে। জুমিয়ারা সংগ্রহ করে এসব হলুদ ফুল বাজারের বিক্রি করতে আসে। এই সময়ে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসে এসব হলুদ ফুল। মূলত এসব হলুদ ফুল পাহাড়ের জুমে দেখা মিলে। ফুল মনে হলেও প্রতিটি রান্নার তরকারি স্বাদে সুগন্ধি ভরপুর।
স্থানীয় ও পর্যটকরা জানিয়েছেন, স্থানীয় বাজার গুলোতে হলুদ ফুলের আটিগুলো সাজিয়ে রেখেছে নারীরা। দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি তরকারিতে কিংবা চাটনি করে খেতে বেশ সুস্বাদু। এসব ফুল দেখা মিলছে বান্দরবান ও রাঙ্গামটি জেলাতে। সন্ধায় গড়িয়ে আসলে পাহাড়ি নারীরা মাথা থ্রুং নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে আসেন।বেশ চাহিদা থাকলেও দামে একটু বেশী। তবে পরিশ্রম কথা চিন্তা করলে দাম সেসব পাহাড়ি নারী জন্য উপযুক্ত।
মারমা বাজারে বিক্রেতা উমেসিং,অংমেচিং মারমাসহ বেশ নারী বিক্রেতা সাথে কথা হয় ফুলের বিষয়ে। তারা জানিয়েছেন, এই ফুল সাধারণ জুমে পাওয়া যায়। এপ্রিল শেষের দিকে জুমের পাহাড়ের পাদদেশে হলুদ ফুল চাষ করা হয়। সেপ্টেম্বর মাসে শুরুতেই বাজারে আসতে শুরু করে। প্রতিটি আটি দাম ৩০ টাকা। যেমন দেখতে সুন্দর তেমনি খেতেও বেশ সুস্বাদু। তবে সব হলুদের গাছে এসব ফুল হয় নাহ বলেও জানান বিক্রেতারা।
বান্দরবান স্থানীয় মারমা বাজারসহ কয়েকটি বাজারে এই ফুলের বিক্রি করতে দেখা যায়। পাইকারীরা বিক্রি করে ৪টি ফুল বাধানো অবস্থায় ২০ টাকা করে। আর সেই ফুলের আটিকে গুছিয়ে বেধে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি ক্রেতাদেরব ভীর। এসব ফুল প্রায় ঘন্টাখানিকের বিক্রি শেষ হয়। পাহাড়িদের কাছে যেমন এই ফুলের চাহিদা রয়েছে তেমনি বাঙ্গালীরা ও থেমে নাই। তবে এসব ফুলের বাহার দেখা মিলবে প্রতিটি জুম পাহাড়ের। হরেক রকমে ফল চাষ করার মধ্যে হলুদের চাষ হয় পাহাড়ের। দূর থেকে তাকালে শুধু হলুদ গাছে ধবধবে সাদা।
কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক এস এম শাহ নেওয়াজ বলেন, হলুদ বিভিন্ন রকমে চাষ হয়ে থাকে। সব হলুদের গাছে ফুল আসে নাহ। পাহাড়ের পাদদেশে জুমে যেসব হলুদের গাছ রোপন করা হয় মূলত সেসব গাছে ফুল আসে। তাছাড়া স্থানীয়দের চাহিদা মেটাতে বাজার গুলোতে বিক্রি হয়। বড় ধরনে কোন চাষ হয় নাহ বলে জানান তিনি।