বান্দরবানে চাহিদা বাড়ছে জুমের ধানি মরিচ; দামে অস্বস্তিতে ক্রেতারা

0
30

।।আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান।।

পাহাড়ে জুমে চাষ করা মরিচটি বিভিন্ন নামে ডাকা হয়ে থাকে। স্থানীয়ভাবে ধানি মরিচ, জুমের মরিচ, বাইট্টা মরিচ, ধান্য মরিচ, চিকন মরিচ নামেই চেনে। মরিচটি আকারে ছোট হলেও ঝাল কিন্তু প্রচুর। যেমনি ঝাল তেমনি দামেও আগুন। সেসব মরিচ দেখা মিলবে পার্বত্য এলাকা বান্দরবান,রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে। স্থানীয় বাজার গুলোতে বাজার দিনে কিংবা প্রতিদিন বিকালে হাটগুলোতে এসব ধানি মরিচে দেখা মিলে।জুমে উৎপাদিত কাঁচা মরিচের খাদ্যগুণ রয়েছে। কাঁচা মরিচে ভিটামিন সি থাকে। এ ছাড়া মরিচে ভিটামিন এ, বি-১, বি-২, ভিটামিন কে রয়েছে। মরিচে বিদ্যমান ক্যাপেসিয়াসিন শরীরে উচ্চ রক্তচাপ কমানো, মাথা, হাঁটু, কোমরব্যথা ও বাত রোগ উপশম করে। তাইত তিন পার্বত্য জেলার এই ধানি মরিচের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বাজারের এই জুমে উৎপাদিন ধানি মরিচে দাম বাড়ায় অস্বস্তিতে রয়েছে ক্রেতারা।

তিন পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়িদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় এই ধানি মরিচ। তাদের যাবতীয় রান্নায় এ মরিচের ব্যবহার প্রচুর প্রচলিত। মরিচটি আকারে ছোট হলেও প্রচুর ঝাল। মরিচটি যেমনি ঝাল তেমনি স্বাদও অন্য মরিচের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। ধানি মরিচটি তরকারি এবং সালাদে আলাদা স্বাদ তৈরি করে। ভর্তা ও চাটনি বানিয়েও খাওয়া হয়। স্থানীয় হোটেল বা খাবার রেষ্টুরেন্ট গুলোতে এইধানি মরিচ দিয়ে বেশি রান্না করা হয়। মরিচটি আকারে ছোট কিন্তু ভেতরে দানার পরিমাণ বেশি। ঝাল অন্য মরিচের চেয়ে প্রায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি। স্থানীয় বাজার গুলোতে এই সাধারণ মরিচের চেয়ে ধানি মরিচের কয়েকগুণ দাম বেশি থাকে। পাহাড়ী জুমিয়াদের অর্থকরী ফসলের মধ্যে ধানি মরিচ অন্যতম।

সাধারণত এপ্রিল-মে মাসের দিকে পাহাড়ে জুম ধানের বীজ বপনের সময় এই ধানি মরিচ লাগানো হয়। অধিকাংশ জুমিয়ারা বীজগুলোকে জুমে ছিটিয়ে দেয়। আবার অনেকেই নিশ্চয়তা থাকতে দা দিয়ে মাটি খুড়ে বীজ বপন করে থাকে। কেননা ছিটালে বৃষ্টির পানিতে ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ও মাটি খুড়লে অনেকটাই কম। জুমে ঝোপযুক্ত গাছে মরিচগুলো খাড়া অবস্থায় থাকে। জুমের ধান বাড়ানো সাথে সাথে ধানি মরিচে গাছও বাড়তে থাকে। তিন থেকে চার মাসের মাথায় ফলন আসতে শুরু করে ও কাঁচা অবস্থায় সাদা ও সবুজ হয়।সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে জুমের ধান ঘরে তোলার পর পরই ধানি মরিচ খাওয়ার উপযুক্ত হয়। এর ফলন নভেম্বর পর্যন্ত পাওয়া যায়। পাহাড়ী জুমিয়াদের অর্থকরী ফসলের মধ্যে ধানি মরিচ অন্যতম।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্য মতে, চলতি বছরে বান্দরবানে ২৫০ হেক্টর জুমে ধানি মরিচে আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ভালো ফলনের পাওয়ার আশা সংশ্লিষ্টদের।

বান্দরবানের স্থানীয় হাট মারমা বাজার, কালাঘাটা, বালাঘাটাবাজারসহ ছোটখাট হাটে ধানি মরিচের সমাহার। এসব মরিচ বেশীর ভাগই বিক্রি করছেন স্থানীয় নারীরা। প্রতি কেজি ধানি মরিচের ৮শত আবার কখনো ৬শত টাকা। যেমন দাম তেমন চাহিদা রয়েছে পাহাড়ের মানুষের কাছে। কিন্তু দাম নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন ক্রেতারা। এই ধানি মরিচ উৎপাদিন হয় চিম্বুক,রোয়াংছড়ি, আলীকদম থানচি ও রুমাতে। যেখানে পাহাড়ের জুমিয়ারা যারা জুম চাষ করে সেখান থেকে মরিচ সরবরাহ হয়। পাহাড়ের পাহাড়ের ঘুরে ধানি মরিচ সংগ্রহ করে থাকে খুচরা ক্রেতারাও। বেশীর ভাগই এই ধানি মরিচ চাষ করে ম্রো, চাকমা,বম ও মারমারা। ধানি মরিচ দিয়ে পাহাড়ের মানুষরা নানা পদে রান্নাবান্না করে থাকে। এই মরিচ ছাড়া তরকারী স্বাদ হয় না বলে অনেকেই জানিয়েছেন।

ক্রেতারা জানিয়েছেন, পাহাড়িদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় এই ধানি মরিচ। এই মরিচ ছাড়া অনান্য মরিচের তেমন ঝাল নাই থাকে নাহ। ছোট মরিচ হলেও ঝাল রয়েছে বেশী। কিন্তু ধানি মরিচের দাম বেশী হওয়ার কারণে কাছে যেতে পারছেন নাহ অনেক ক্রেতা। তবুও বাধ্য হয়ে কিনে ঘরে ফিরছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ স্বাধ্য না থাকায় ২৫০ গ্রাম অর্থ্যৎ এক পোয়া কিনছেন। বাজারের জুমে নতুন মরিচ না আসায় দ্বিগুন দামে কিনতে হচ্ছে। তবুও খাবারের এই ধানি মরিচ ছাড়া তরকারী স্বাদ হয়না বলে অনেকেই জানিয়েছেন।

মারমা বাজারের ধানি মরিচ বিক্রি করেছেন মারমা। তিনি বলেন, জম থেকে নতুন ধানি মরিচ না আসার কারণে দাম বাড়তি দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। কেননা যেখান থেকে মচির নিয়ে আসেন সেখানেও দাম বেশী। প্রতি বস্তায় তাদের কিনতে হয় হাজার টাকা দিয়ে আর গাড়ি ভাড়া সহ হিসাব করলে বিক্রি করতে হচ্ছে ৮শত কিংবা মাঝে মধ্যে কমে বিক্রি করে ৬শত টাকা করে। এতে লভ্যাংশ থাকে কিছুটা।

একই কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মসজিদ মার্কেটে ধানি মরিচের আরবদার শাহিকুল রহমান। তিনি জানান,পাহাড়ে ঘুরে ঘুরে মরিচ কিনতে হয়। তাছাড়া নতুন ধানি মরিচ না আসায় দ্বিগুন দামে কিনতে হয়েছে। অনেক সময় এই মরিচ খুজে পাওয়া যাই নাহ আর পানি ভিজলে পচন শুরু হয়। তবে জুমের নতুন ধানি মরিচ সরবরাহ আসলে মরিচ দাম কমবে বলে জানান তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক এস এম শাহনেওয়াজ বলেন, গত বছরের বন্যা হওয়াতেই ধানি মরিচের কম ফলন হলেও ভালো দাম পেয়েছে কৃষকরা। এই বছরে জুম থেকে কিছুটা ধানি মরিচ দেখা গেলেও পুরোপুরি অক্টোবর দিকে নতুন মরিচ সরবরাহ হবে। তবে দামের বিষয়ে বলতে গেলে জুমের নতুন মরিচ সরবরাহ না হওয়ার পর্যন্ত দামে বাড়তি থাকতে পারে। আমরা আশাবাদী গেল বছর চেয়ে চলতি বছরে ভালো ফলন হওয়ার আশ্বাস এই কর্মকর্তা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here