বান্দরবানেও কঠিন চীবর দান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ

0
33

আকাশ মারমা মংসিং।।বান্দরবান।।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান কঠিন চীবর দান না করার পক্ষে মত দিয়েছেন বান্দরবানের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বৌদ্ধ ভিক্ষু, বৌদ্ধ ধর্ম গুরু এবং স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের নিয়ে আসন্ন প্রবারণা উৎসব ও কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিমূলক সভা আয়োজন করে বান্দরনবান জেলা প্রশাসন। বুধবার জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় আগের সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা জানান বান্দরবান পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের নেতারা।

সভায় জেলার প্রবারণা উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি মংচমং মারমা বলেন, ‘সাম্প্রতিক রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর দুই জেলায় আসন্ন প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব হচ্ছে না শুনেছি। আমাদের বান্দরবানে বিগত বছরগুলোতে যেভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে আনন্দপূর্ণভাবে উৎসব করা হয়- এ বছর সেভাবে হচ্ছে না। তবে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

সভায় উপস্থিত জেলা সদরে বিভিন্ন বৌদ্ধ ধর্মীয় উপাসনালয়, মন্দির ও প্যাগোডার বৌদ্ধ ভিক্ষুরা স্ব স্ব বক্তব্যে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলায় ঘটে যাওয়া ঘটনায়, বৌদ্ধ ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর, দান বাক্স লুটপাটসহ বৌদ্ধ মূর্তি ভেঙ্গে ফেলাটা আমাদের হৃদয়ে বিশ্বাসের জায়গায় আঘাত করেছে। সে জন্য আমরা ভিক্ষুসংঘ চরম মর্মাহত।

জেলার স্বর্ণজাদির বিহারাধ্যক্ষ গুনবর্ধণ মহাথের বলেন, ঘটনার পর থেকে অনেকটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তিন পার্বত্য জেলার বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘের শীর্ষস্থানীয় নেতারা এবারের কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান না করার জন্য যে ঘোষণা দিয়েছেন, সে ঘোষণার বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ নেই।

বান্দরবান পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক তিক্ষীন্দ্রীয় থের বলেন, ‘বৌদ্ধ ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী, সব বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও ভিক্ষুগণের এই তিন মাস হলো সাধনার মাস। এই তিন মাস ভিক্ষুরা নিজ নিজ বিহার, মন্দির, ক্যাং, প্যাগোডা বাহিরে অবস্থান করা নিষেধ। কেউ এক রাতের জন্যও বাইরে অবস্থান করলে তার তিন মাসের সব সাধনা বিফলে যাবে। কিন্তু খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির ঘটনায় এমনও হয়েছে যে, আমাদের ভিক্ষুরা নিজ বিহারে ঢুকতে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হয়েছে। অনেকে বাইরে রাত্রিযাপন করতে বাধ্য হয়েছে।

সভায় কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান ও প্রবারণা উৎসব পালনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসক অভয় দিলেও বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের নেতাদের সিদ্ধান্তের অনড় থাকেন। জেলা প্রশাসক আরও জানান, এ বছরে পুরো বান্দরবানে মোট ৫৪৩টি বৌদ্ধ বিহারে প্রবারণা পূর্ণিমা তথা প্রবারণা উৎসব উদযাপন করা হবে।

জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিনের সভাপতিত্বে বিজিবি সেক্টর কমান্ডার, পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার, অতিরিক্ত জেল প্রশাসক (সার্বিক) উম্মে কুলসুম, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা, সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলার স্বর্ণজাদির বিহারাধ্যক্ষ গুনবর্ধণ মহাথের, বান্দরবান পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক তিক্ষীন্দ্রীয় থের, বান্দরবান সার্বজনীন কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু ‘চন্দ্র জ্যোতি থের, সত্যজিত মহাথের, প্রবারণা পূর্ণীমা উদযাপন কমিটির সভাপতি অংচ মং মারমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here