রাজস্থলী (রাঙ্গামাটি) প্রতিনিধি।।
রাঙামাটির রাজস্থলীর ৩নং বাঙালহালিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড নাইক্যছড়া এলাকা পাহাড়ি অঞ্চলে বন্য হাতির আক্রমণে ধ্বংস হয়েছে প্রায় ৪ টি কলা বাগান। গত শনিবার দিবাগত রাত ২ টার সময় বাজার থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাহাড় ও লোকালয়ে তাণ্ডব চালায় হাতির পাল। এতে কলা বাগানের মালিকের প্রায় ৫-৬ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে বাগান মালিকরা জানান।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়,গত শনিবার গভীর রাতে পাহাড় থেকে প্রায় ২০-৩০টি হাতি ফসলের মাঠে নেমে আসে। এ সময় তারা ফসলের মাঠে রাতভর ব্যাপক তাণ্ডব চালায়।
বাগান মালিকরা ও ধান রোপনের কৃষকরা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে হাতির পাল পাহাড়ি অঞ্চলে আমবাগান, কলাবাগান ও আমন ধানের খেতে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। কলা গাছ খেয়ে শত শত কলা গাছ উপড়ে ফেলেছে। ছাড়াও লিচুবাগান ও আম বাগানে আক্রমণ চালিয়েছে হাতির পাল।
নাইক্যছড়া পাড়ার কৃষক চিংবোইপ্রূ মারমা বললেন, আমার ৪/৫ একর কলাবাগানে তাণ্ডব চালিয়ে প্রায় দুই শতাধিক কলা গাছ ধ্বংস করে দিয়েছে হাতির পাল। অপর দিকে আমগাছ সবকটি গাছ উপড়ে ফেলেছে। গাছগুলো থেকে প্রতি বছর ৪-৫শ কেজি আম পেতাম। ফলন আরো ভালো হলে গাছ আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু হাতির আক্রমণে তা ভেস্তে গেছে। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন পরিশ্রমের ফলে তিল তিল করে গড়ে তুলেছি শখের কলাবাগান। বন্য হাতির আক্রমণে তা ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রায় ২০০উপরে কলাগাছ খেয়ে ফেলেছে বন্যহাতির পাল।
তিনি আরো জানান, ১৯৯৫ সাল থেকে জেলার রাঙ্গামাটি, রাজস্থলী উপজেলার পাহাড়ি নাইক্যছড়া গ্রামগুলোতে তখন থেকে শুরু হয় বন্য হাতির তাণ্ডব। বন্য হাতির দল দিনে পাহাড়ের গভীর অরণ্যে আশ্রয় নেয়। আর সন্ধ্যা নেমে আসার সাথে সাথে খাদ্যের সন্ধানে হাতির দল নেমে আসে লোকালয়ে। এ সময় হাতির দল বিভিন্ন ফল ফসল কলাবাগান থেকে শুরু করে ধানের চারা রোপণ, গাছপালা, বাঁশঝার, কলা ও সবজি বাগান, নষ্ট করে ফেলেছে।
এলাকাবাসী জানান, তাঁরা সারা রাত আগুন জালিয়ে, বাঁশ ফুটিয়ে, আতশ বাজি ফুটিয়ে বাগান-ক্ষেত পাহারা দিচ্ছে। অনেক সময় রাস্তার পাশে জঙ্গলে হাতির পাল অবস্থান করে। তাই দিনের বেলায়ও
রাস্তায় ভয়ে ভয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এবং রাতের অন্ধকারে এলাকাবাসীরা আতংকে দিনযাপন করছে।
রাঙামাটি , বান্দরবান ও রাঙ্গুনিয়ার কাপ্তাই পাহাড়ি অঞ্চল একই সীমা রেখায় অবস্থিত বিধায় ভৌগোলিক দিক থেকে রাজস্থলীর পাহাড়ি অঞ্চল হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাহাড় কেটে সড়ক ও নতুন বাড়িঘর নির্মাণের কারণে জনবসতি বেড়ে যাওয়ায় হাতির বিচরণক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বাগান ও লোকালয়ে এসে হাতি ক্ষয়-ক্ষতি করছে।
বাঙ্গালহালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আদোমং মারমা বলেন, অত্র ইউনিয়নের প্রতিবছর বন্য হাতি আক্রমন তান্ডবে এলাকার বিভিন্ন স্থানের ফসলী জমিসহ ক্ষেত খামার গাছপালা ঘরবাড়ি ক্ষয় ক্ষতি করছে, এ বন্য হাতি তান্ডব হতে সুরাহা পাওার জন্য সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমি এলাকাবাসী পক্ষে বিনীত ভাবে আনুরোধ করছি।
বন কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের বন্যহাতি তাড়ানোর একটি টিম রয়েছে। বনের হাতগুলো যখন লোকালয়ে এবং কোনো মানুষের বাড়ি বা ফলদ বাগান ও ফসলি জমিতে আক্রমণ চালালে এ কমিটির লোকজন হাতিগুলো গহিন অরণ্যে তাড়াতে কাজ করে।
তিনি আরো জানান, গহিন পাহাড়ে খাদ্যসংকট দেখা দেওয়ায় হাতিগুলো লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। তবে বন্যহাতির দল কোনো মানুষ বা কারো জমির ফসল ও বাগানের ক্ষয় ক্ষতি করে থাকলে বিধিমোতাবেক বন বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন এলাকাবাসী সতর্ক থেকে লোকালয়ে যখন হাতি প্রবেশ করবে সাথে সাথে আমাদের বন্যা হাতি তাড়ানোর টিমকে ফোন করার আহ্বান জানান।