পাহাড়ি অঞ্চলে বন্যার তাণ্ডব: রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ির কৃষিতে ১১১ কোটি টাকার ক্ষতি”

0
38

।।খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।। 

দেশজুড়ে চলমান বন্যার প্রভাব এবার পাহাড়ি অঞ্চল রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় মারাত্মকভাবে আঘাত হেনেছে। কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে এই দুই জেলা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দুই জেলার কয়েকটি উপজেলায় ৫ হাজার ২০৪ হেক্টর কৃষিজমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে, যার ফলে ২৪ হাজার ৭৩৫ টন ফসল নষ্ট হয়েছে। এই বিপুল ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান প্রায় ১১১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যমতে, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় মোট ১৪ হাজার ৮৪৫ হেক্টর কৃষিজমি বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৫ হাজার ২০৪ হেক্টর জমি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা দুই জেলায় ২৩ হাজারেরও বেশি।

ডিএই-এর রাঙ্গামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, ‘এই দুই জেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য প্রণোদনা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলায় ইতোমধ্যে দুই টন ধানের বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং রাঙ্গামাটি জেলায় শীতকালীন সবজি ও বোরো ধানের বীজ দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’

রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির ক্ষতির বিবরণ:

জেলাভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রাঙ্গামাটি জেলায় ২ হাজার ১০৩ হেক্টর জমির ফসল বন্যায় তলিয়ে গেছে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাঘাইছড়ি উপজেলায়। অন্যদিকে, খাগড়াছড়ি জেলায় ৩ হাজার ১০১ হেক্টর কৃষিজমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

খাগড়াছড়ি জেলার উপপরিচালক বাসিরুল আলম জানান, ‘এই জেলায় ১৩ হাজারের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দীঘিনালা ও মাটিরাঙ্গা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। দুই টন ধানের বীজ বরাদ্দ দেয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। আরো বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।’

আউশ ও আমন আবাদের ক্ষতি:
দুই জেলায় বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আউশ ও আমন ধানের খেত। খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে যথাক্রমে ৩ হাজার ৪৩৪ হেক্টর আমন ও ৮৪১ হেক্টর আউশ ধানখেত তলিয়ে গেছে। এছাড়াও, গ্রীষ্মকালীন সবজি, আদা, হলুদ, আখ ও ফলের বাগানেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
ডিএই রাঙ্গামাটি অঞ্চলের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে আমনের বীজ রোপণের সুযোগ না থাকায় কেবল খাগড়াছড়িতে দুই টন বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আসন্ন রবি মৌসুমে কৃষকদের শীতকালীন সবজি ও বোরো ধানের বীজ দেয়া হবে।’

কৃষি কর্মকর্তারা মনে করছেন, পার্বত্য অঞ্চলে কৃষিখাতে প্রণোদনা এবং বীজ বরাদ্দ আরো বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here