।।আকাশ মারমা মংসিং বান্দরবান।।
কোটা সংস্কারের দাবিতে প্রথমে ‘বাংলা ব্লকেড’ ও পরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির জেরে দেশব্যাপী নাশকতা চালায় দুষ্কৃতকারীরা। এর ফলে সৃষ্টি হয় এক অরাজক পরিস্থিতি। জুলাইয়ের শুরুতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যেও পাহাড়ে গুটি কয়েক পর্যটকদের আনাগোনা ছিল। মাসের মধ্যবর্তী সময়ে আন্দোলন পরিস্থিতি উত্তাল ও সহিংসতার জের ধরে পাহাড়ের পর্যটনে বড় ধাক্কা লাগে। পর্যটন নগরী বান্দরবান পর্যটনখাতের বড় প্রভাব পড়াতে এখনো সামলিয়ে উঠতে পারেনি পাহাড়ের এই খাতসংশ্লিষ্টরা। উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে পাহাড়ে পর্যটকদের আগমন মোটাদাগ কমে গেছে। পুরো জুলাই মাস জুড়েই ভুগেছে পর্যটক খরায়।
পার্বত্য জেলার পর্যটনে অর্থনৈতিক বড় খাত হোটেল-মোটেল, কটেজ-রিসোর্ট ভাড়া। কিন্তু দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান না হলে পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড় বাড়ার সম্ভাবনা নেই। আশানুরূপ পর্যটক কমতে থাকায় নীলাচল, মেঘলাসহ প্রত্যেকটি পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের দেখা মিলছে না। অলস সময় পার করছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। ফলে পর্যটনশিল্প বড় ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। আগস্ট মাসেও পর্যটক না বাড়ার শঙ্কায় রয়েছে খাতসংশ্লিষ্টদের। একই অবস্থার কথা জানিয়েছেন পার্শ্ববর্তী জেলার খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি হোটেল-মালিকরাও।
বান্দরবানে হোটেল- মোটেল রিসোর্স এসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক মো.জসিম উদ্দিন বলেন, জেলা শহরসহ প্রতিটি এলাকায় কয়েকশত হোটেল-মোটেল রয়েছে। সমিতির বাহিরেও অন্যান্য রিসোর্ট-কটেজ রয়েছে। দেশের চলমান অবস্থাকে কেন্দ্র বান্দরবানে পর্যটকরা না আসায় কার্যত বেশিরভাগ হোটেলই বন্ধের পথে। তাছাড়া ইনকাম পথ বন্ধ থাকায় হোটেল-মোটেল বিক্রি করার কথা ভাবছেন অনেকেই। তাছাড়া প্রতিটি মাসে কয়েক কোটি টাকা লোকসান হওয়াতেই এখন আমরা আবার সেই ক্ষতির মুখে পড়েছি।
চারদিকে মেঘ আর পাহাড়ের সবুজ অরন্যে বেষ্ঠিত পর্যটন শহর বান্দরবানে কোণায় কোণায় বিভিন্ন পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র। জেলার সবচেয়ে নান্দনিক পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি মেঘ পাহাড়ের উপত্যকা নীলগিরি। এসব পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রে যাতায়াতে পর্যটক ও স্থানীয়রা একমাত্র অভ্যন্তরীণ যানবাহন চাদের গাড়ি ( মাহিন্দ্রা)। কিন্তু সেখানকার ব্যবসায়ীরা পর্যটক খরায় ভুগছেন। পর্যটক খরায় কারণে বান্দরবানে নান্দনিক নিলাচল-মেঘলা, প্রান্তিলেক, চিম্বুক ভিউ,টাইটানিক ভিউসহ প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে চলাচলরত চাদের গাড়ি কমেছে। নিরাপত্তাহীনতা ও সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কারণে পর্যটক কমে গেছে খোদ বান্দরবান শহরের পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে। পর্যটক না থাকায় চাদের গাড়ি কাজে নিয়েজিত মালিক- চালক-শ্রমিক-কর্মচারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। আর্থিক সংকটেও ভুগছেন তারা।
জেলা জীপ ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘জুলাই মাস সময় থেকে চাদের গাড়ি চলাচলকারী ট্যুরিস্টদের ওপর জীবিকানির্বাহে নির্ভরশীল মালিক-চালকরা অলস সময় পার করছেন। বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে চলাচলকারী আমাদের শতাধিক অধিক গাড়ি রয়েছে। আর মালিক-শ্রমিক মিলে আছেন পাচ শতাধিক মানুষ জন। বিগত দুই সপ্তাহ ধরে পর্যটক শূন্যতায় পেশার করুণ দশা হয়েছে। অনেকের ঘরে চুলা জ্বালানোর ব্যবস্থাও নেই।’
ব্যবসায়ী ও চালকরা জানিয়েছেন, বিগত তিন-চার মাস ধরে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দুর্দিন যাচ্ছে। কয়েকধাপে জেলা শহরর বন্যার পানি বৃদ্ধির পর জুলাইয়ে দেশে চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এখন বান্দরবান পর্যটন শূন্য বলা চলে। কটেজ-রিসোর্ট মালিকদের অনেকেই ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন। পর্যটক না থাকলেও কটেজ ভাড়া, স্টাফের মজুরি, পানিসহ আনুষাঙ্গিক সব খরচ বহন করতে হচ্ছে। পর্যটক না থাকায় খাবার দোকান, যানবাহন ও পর্যটকবাহী পরিবহনের সঙ্গে জড়িতরাও ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
বান্দরবানের ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, রাষ্ট্রীয় নাশকতার ফলে কিছুটা অস্থিরতা শুরু হওয়াই পর্যটক না আসার একটা ব্যাঘাত ঘটেছে। যার ফলে কোথাও কারফিউ আবার কোথাও শিথিল হচ্ছে। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত বান্দরবানে কোন সমস্যা নাই। তবে পর্যটকদের রাষ্ট্রীয় আইন মেনে পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরতে আসা অনুরোধ করার পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ বদ্ধ পরিকর।
তিনি বলেন, পুরোপুরি কারফিউ শিথিল হয়ে গেলে বান্দরবানে আবার পর্যটক আগমণ ঘটবে। নিবিঘ্নে যানবাহন চলাচল হলে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা সংকট কাটবে মৌসুম শুরুর আগেই সংকটের উত্তরণ হতে পারে বলছেন এই কর্মকর্তা।