।।আকাশ মারমা মংসিং,বান্দরবান।।
ব্যাপক অর্থে পদ্ধতিগতভাবে জ্ঞান লাভের প্রক্রিয়াকেই শিক্ষা বলা হয়ে থাকে। তবে শিক্ষা হল সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন। শিক্ষা শিশুর মৌলিক অধিকার গুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু যে অঞ্চলে শিশুর শিক্ষার জন্য তেমন কোন ব্যবস্থা নেই সেখানে শিক্ষার আলো কিভাবে ছড়াবে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের দুর্গম এবং গভীর পাহাড়ি অঞ্চল ঘুরে দেখলে তার বাস্তব উদাহরণ পাওয়া যাবে। এইসব দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়ি ও বাঙালীদের পরিবার গুচ্ছবদ্ধভাবে বসবাস করে থাকে। এসব এলাকার আশেপাশে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকা তো দূরের কথা, এই দুর্গম পাহাড়ি এলাকার সঙ্গে নগরায়নের কোন যোগাযোগ পর্যন্ত নেই। কিন্তু সেসব এলাকাতে শিক্ষা আলো ছড়াতে এলাকায় গিয়ে নিজ অর্থায়নের কাজ করে যাচ্ছেন বেসরকারি সংস্থা ব্রাক ও বিএনকেএস।
জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, বাইশারী ইউনিয়নের দূগর্ম পাহাড়ি জনপদের এলাকায় প্রি প্রাইমারি স্কুল ৮টি ও ৮ ব্রীজ স্কুলসহ ১৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে প্রান্তিক জনপদে নানান বাঁধা আর সীমাবদ্ধতা কারনে শিক্ষা থেকে পিছিয়ে থাকত। পড়ালেখা দুরের কথা প্রতিটি শিশুরাই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিল। দেখতে পেত নাহ শিক্ষার আরো। কিন্তু সেসব শিশুদেরকে শিক্ষার আলো পৌছে দিতে দুর্গম জনপদে গিয়ে কাজ করছেন বিএনকেএস। সেসব শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার কাতারে আনতে অর্থায়নের বাস্তবায়ন করছে এনজিও সংস্থা ব্রাক।
গ্রামবাসিরা জানিয়েছেন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ঘুমধুম সোনাইছড়ি আর বাইশারী ইউনিয়নের কিছু এলাকা এখনো গুণগত ও মানসম্মত শিক্ষা আলো থেকে শিশুরা বঞ্চিত রয়েছে। পরিবারের অভাব অনটনে ফলে শিশুরা পড়ালেখা থেকে ঝড়ে পড়ে যায়। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা শেখানো ইচ্ছে থাকলেও অর্থের অভাবে স্কুলে পাঠাতে পারত নাহ । কিন্তু এখন সেসব পরিবারের শিশুদের মাঝে ব্রাক ও বিএনকেএস হাত বাড়ানো পর সেসব গ্রামে শিক্ষার আলো ফুটেছে। ফলে ব্রাক ও বিএনকেএস এই উদ্যেগ নেয়াতেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন গ্রামবাসীরা।
বেসরকারী উন্নয়ন ব্রাক তথ্য মতে, এই দুটি ইউনিয়নের প্রায় ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে শিক্ষক রয়েছে ৮ জন। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশু শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় ১৬০ জন। তার মধ্যে প্রি-প্রাইমারি ও ব্রীজ স্কুলে মিলে ১৮০ জন রয়েছে। যেসব এলাকায় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রয়েছে সেসব শিশুদের শিক্ষা আলো জাগাতে এই উদ্যেগটি গ্রহন করে। এছাড়াও ঝড়ে পড়ার শিশুদের বিদ্যালয়মুখী ও বিদ্যালয়ের যাওয়ার উপযোগী করতে ১৬ টি স্কুল ব্রীজ ও প্রি-প্রাইমারি উন্নয়নের প্রকল্প চলমান রেখেছে বেসরকারি সংস্থা ব্রাক। তবে পরবর্তীতে সদর, দৌছড়ি
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দুর্গম এলাকা হওয়াতেই শিশুরা পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত ছিল। বিদ্যালয় থাকলেও পরিবার অভাব হওয়াতেই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল শিশুরা। কিন্তু ব্রাক অর্থায়নে ও বিএনকেএস সহযোগিতার ফলে সেসব বিদ্যালয়ে শিক্ষা-সামগ্রী পৌছে দিয়েছে। ফলে এখন শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ফুটতে শুরু করেছে। শিশুদেরকে মাঝে আরো শিক্ষার মান উন্নতি করতে শিক্ষকরা সর্বদা নিয়োজিত আছে বলে জানান শিক্ষকরা।
ঘুমধম মংজয় পাড়া প্রি-প্রইমারি স্কুলে শিক্ষক জুমেচিং তংচংগ্যা বলেন, দুর্গম এলাকা হওয়াতেই শিশুরা স্কুকে আসত নাহ। এছাড়াও পরিবার অভাবে কারণে শিশুদেরকে স্কুকে কম পাঠাতো। এখন ব্রাক আর বিএনকেএস পাশে দাঁড়ানো ফলে শিশু ও পরিবারও খুশি। শিশুরা প্রতিদিন নিয়মিত স্কুলে আসা যাওয়া করছে আর আমরা যতটুকু পারি শিশুদেরকে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছি।
এবিষয়ে নাইক্ষংছড়ি উপজেলা ব্র্যাক ব্রিজ শিক্ষা ও প্রি-প্রাইমারি শিক্ষা প্রকল্পের কর্মকর্তা মংএহ্লা মারমা বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি ৫টি ইউনিয়নের ১৬টি স্কুল (ঘুমধুম ও বাইশারি) রয়েছে। সেখানে স্কুল থাকলেও শিক্ষার্থীরা ক্লাসে কম আসে। তাই আমরা সেসব পিছিয়ে পড়া স্কুলের পাশে দাড়িয়েছি। সেই ৮টি স্কুলের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া ব্রাক ও বিএনকেস সহযোগীতায় শিশুদের মাঝে ব্যাগ,বই,খাতা ও কলমসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ দেয়া হয়েছে। আশা করছি ভবিষ্যতে এই শিক্ষাকে আরো বহুদুর নিয়ে যেতে পারব বলে আশা করছি।