আকাশ মারমা মংসিং।। বান্দরবান।।
উঁচু নিচু নয়নাভিরাম পাহাড় আর প্রকৃতির সবুজে ঘেরা পার্বত্য জেলা বান্দরবান। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানকে বলা হয় নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। জেলায় রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় ঝিড়ি-ঝর্ণা। শুধু তাই নয় পর্যটকদের আকৃষ্ট করে তুলতে রয়েছে নীলাচল, নীলগিরি, দেবতাকুম, আমিয়াকুম ও বড়পাথরসহ প্রাণজুড়ানো সব দর্শনীয় স্থান। । তাছাড়া মেঘের সাথে মিতালী বেঁধে ছেয়ে গেছে বগালেক, কেউক্রাডং, ডিমপাহাড়, তাহজিডংসহ আরো অসংখ্যা পাহাড়। প্রতিবছর হাজারও মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য্য উপভোগ ছুটে আসেন পর্যটন নগরী বান্দরবানে। একইসাথে ক্ষূদ্র নৃ গোষ্ঠীর বৈচিত্রময় জীবনও কাছে টানে অনেক পর্যটকদের। পর্যটনের পাশাপাশি বান্দরবানে পর্যটকদের জনপ্রিয়তা থাকায় দিন দিন বাড়ছে বাঁশ, কাঠ কিংবা ছনের আদলে তৈরি ইকো রিসোর্ট। এসব রিসোর্ট তৈরিতে ফুটে উঠছে পাহাড়িদের ঐতিহ্য মাচাং ঘর আর পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় রক্ষা পাচ্ছে প্রকৃতির প্রান বৈচিত্র্যময়। সবুজ প্রকৃতির সাথে মিল রেখে পরিবেশ বান্ধব এই রিসোর্টগুলি বেশ চাহিদাও রয়েছে পর্যটকদের কাছে।
জানা গেছে, দেশের পর্যটন শিল্পে বাড়ছে নতুন ধর্মী ইকো রিসোর্টের জনপ্রিয়তা। পাহাড়ের ও সাঙ্গু নদীর কোল ঘেষে তৈরী হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব এসব ইকো রিসোর্ট। বাঁশ, কাঠ ও ছনের আদলে তৈরী এই রিসোর্টে চাহিদা ও বাড়ছে দিনের পরদিন। এসব রিসোর্ট তৈরিতে ফুটে উঠছে পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘর। প্রকৃতির সাথে মিলিয়ে গড়ে উঠা এসব রিসোর্টে ফুটে উঠে স্থানীয় ঐতিহ্য আর নির্মান কারুকাজ। রিসোটের পাশে কোথাও কোল ঘেষে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদী আর কোথাও দিগন্ত বিস্তৃত লেকের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের। পাহাড়ের এসব ইকো রিসোর্টের নিরিবিলি পরিবেশে হারিয়ে যান ভ্রমণপিপাসুরা। পর্যটকদের কাছে যেমন জনপ্রিয়তা বাড়ছে তেমনি পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় রক্ষা পাচ্ছে প্রান বৈচিত্র্যময়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা শহর বান্দরবানে কাছেই পাহাড়ে চূড়ায় তৈরী করাহয়েছে প্রায় ২৫টি পরিবেশ বান্ধব ইকো রিসোর্ট। তং রিসোর্ট, লাবাতং, ইকো রিসোর্ট, ফানুস, মিরিঞ্জা ভ্যালী, গ্রীন পিকসহ অসংখ্য গড়ে তুলেছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশ ঘরে ডিজাইন পুরোপুরি মাচাং ঘরের মতন। ঘরের চারিদিকে বাশের বেড়া, ছন ও কাঠ দিয়ে তৈরী করা বারান্দা। আবার কোথাও কোথাও ব্যবহৃত খাবার প্লেট কিংবা গ্লাসও বাশের তৈরী। ঘরের চারিপাশে প্রকৃতি সবুজের সমারোহসহ সাঙ্গু পানিতে ছুটে চলা ইঞ্জিন চালিত নৌকা। এসব প্রকৃতিকে উপভোগ করতে দালান কোটা ছেড়ে এসব ইকো রিসোর্টের ছুটে আসেন ভ্রমনপিপাসুরা। আধুনিক মানের হোটেল মোটেল বাদ দিয়ে ক্লান্তি ভুলতে প্রকৃতির কোলো গড়ে উঠা এসব রিসোর্টকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন পর্যটকরা।
পর্যটকরা জানিয়েছেন, সমতলে যান্ত্রিক শহর ছেড়ে পাহাড়ের ঘুরাফেরা করতে পছন্দ করেন পর্যটকরা। আধূনিক মানের হোটেলের চাইতে প্রকৃতির সান্নিধ্যে গড়ে উঠা এসব রিসোর্ট ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয় নিমিষেই। পাওয়া যায় প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার এক ভিন্ন আমেজ। তাই ঘুরতে গেলে পছন্দের প্রথমেই এসব রিসোর্ট বেছে নিচ্ছেন ভ্রমনপিপাসূরা।
অন্যদিকে পর্যটনের ব্যবসায়ীরা বলছেন- পর্যটন এলাকাগুলোতে দিনে দিনে ইকো রিসোর্টের চাহিদা বাড়ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব ইকো রিসোর্টের চাহিদা এতোটাই বেড়েছে যে মৌসুমে বা ছুটির দিনে অনেকেই রুম পান না। তাই সরকারি বেসরকারি সংস্থাগুলো চাইলে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে। এতে করে দেশের পর্যটন এলাকায় যেমন দিন দিন বাড়ছে পরিবেশ বান্ধব ইকো রিসোর্টের জনপ্রিয়তা তেমনি বাড়ছে পর্যটন খাতে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ।
বান্দরবানে হোটেল মোটেল মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে দেশের পর্যটন এলাকাগুলোতে হোটেল মোটেলের বিপরীতে ইকো্ রিসোর্ট প্রায় ২০ শতাংশ । যার ফলে দেশীয় পর্যটকসহ বিদেশী পর্যটকদের কাছেও একমাত্র পছন্দ এই ইকো রিসোর্ট। বাশ,কাঠ ও ছন দিয়ে তৈরী করা পরিবেশ বান্ধব এসব ঘরগুলো যেমনি চাহিদা বাড়ছে তেমনি পরিবেশ বিপর্যস্ত থেকে রেহাই পাচ্ছে। তাই আরো সাস্টেইবল ভাবে পর্যটন শিল্পের পরিবেশ বান্ধব এসব ইকো রিসোর্ট বাড়ানো প্রয়োজন।