সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাঁ।।আলীকদম।।
বান্দরবানের আলীকদমে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ১ম ধাপের নির্বাচন আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের বিরামহীন প্রচার-প্রচারণা এখন জোরালো ভাবে চলছে।
প্রার্থীরা প্রতিদিন রাতে বিভিন্ন স্থানে পথসভা করছেন এবং তাদের কর্মীরা যাচ্ছেন ভোটারের দরজায়। প্রশাসনও নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণভাবে করতে প্রস্তুত। গত শুক্রবার নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রশিক্ষণও সম্পন্ন করা হয়েছে।
৮ মে সারাদেশে প্রথম ধাপের নির্বাচনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলীকদম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। দেশের ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণের তালিকায় যুক্ত হয়েছে বান্দরবানের আলীকদমে
উপজেলাও। এই উপজেলা এখন বাঙালি ভোটার সংখ্যাও বেশি,তবে পাহাড়ি ভোটারের সংখ্যাও অর্ধেকের কাছাকাছি এ উপজেলায়।
আলীকদম উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা রয়েছে ৩২ হাজার ৮০৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১৬ হাজার ৫২১ জন এবং নারী ভোটার ১৬ হাজার ২৮৪ জন।
ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২১ টি এবং ভোট কক্ষের সংখ্যা ৯৪টি। ২০১৯ সালের তুলনায় এ উপজেলায় ভোটার বেড়েছে ৩ হাজার ৭২১ জন।
আলীকদম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন দুই জন। তারা হলেন- বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম (আনারস) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন (দোয়াত-কলম)।
ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে প্রার্থী রয়েছে যথাক্রমে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন (টিউবওয়েল) ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ রিটন (তালাচাবি)।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও প্রার্থী রয়েছেন দুইজন। তারা হলেন- বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিরিনা আক্তার (প্রজাপতি) ও সাবেক ইউপি সদস্যা ইয়াছমিন আক্তার মণি (পদ্ম ফুল)।
তথ্যমতে, নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়াইয়ের হিসাব কষতেই ভোটাররা ব্যস্ত। ভাইস চেয়ারম্যান পদ দু’টির প্রার্থীদের হারজিত নিয়ে ভোটারদের তেমন চিন্তা-ভাবনা নেই।
দিন যতই যাচ্ছে ততই চেয়ারম্যান পদের দু’জন প্রার্থীর শিক্ষানুরাগ ও অতীত কৃতকর্ম নিয়েই বেশী আলোচনা হচ্ছে। বর্তমান চেয়ারম্যান টানা তিনবারের চেয়ারম্যান থাকলেও এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নে তার পশ্চাৎবিমুখ নীতি ভোটারদের কাছে পরিষ্কার হচ্ছে।
অপরদিকে, বাংলাদেশের একমাত্র কলেজবিহীন উপজেলা হিসেবে খ্যাত এই উপজেলায় ‘আলীকদম কলেজ’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি জামাল উদ্দিন। তিনি আলীকদম উপজেলায় এমএ ডিগ্রিধারী জনপ্রতিনিধি ও ধার্মিক হিসেবে তাঁর আলাদা একটা পরিচিতি আছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২১টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে বাঙ্গালী অধ্যুষিত ৫টি কেন্দ্রে আনারস প্রতীক সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও অবশিষ্ট ১৬টি কেন্দ্রে দোয়াত-কলম প্রতীক উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।
সর্বমোট ৩২ হাজার ৮০৫টি ভোটের মধ্যে পরিসংখ্যন অনুযায়ী অর্ধেকের কাছাকাছি পাহাড়ি-বাঙ্গালী ভোটের ব্যবধান রয়েছে। এরমধ্যে বাঙ্গালী ভোট ৭০% হিসেবে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার এবং পাহাড়ি ভোট ৫০% হিসেবে সাড়ে ৭ হাজার কাস্টিং হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কাস্টিং ভোটের হিসেবে আনারস প্রতীক বাঙ্গালী ভোট ৪৫% এবং দোয়াত-কলম প্রতীক ২৫% ভোট এবং পাহাড়ি ভোটের ১০% আনারস প্রতীক এবং ৪০% দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থীর পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ধারাবাহিকতায় ভোটের ফলাফল আনারস প্রতীক ৮ হাজারের সামান্য বেশী এবং দোয়াত-কলম প্রতীক সাড়ে ৯ হাজারের বেশী ভোট পেয়ে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দু’প্রার্থীর মধ্যে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার ভোটের ব্যবধান থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে ভোটের মাঠ বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলছে পক্ষ-বিপক্ষের প্রচারণা। এক্ষেত্রে থেমে নেই প্রার্থীরাও।
প্রতিপক্ষ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতাকে হেয় করে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী আবুল কালাম নিজে ‘দশ ক্লাস’ পড়েছেন, স্ত্রী, এবং ছেলে-মেয়ে মিলে মোট ৪১ ক্লাস পড়েছেন বলে দানু সর্দার পাড়ার পথসভায় বক্তব্য দিয়ে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, চেয়ারম্যান প্রার্থী জামাল উদ্দিন জনসমর্থনে এগিয়ে রয়েছেন। রাজনীতি, ব্যবসা ও ঠিকাদারীর মাঠ থেকে নির্বাচনের মাঠে এসে এর আগে তিনি দুইবার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এমএ ডিগ্রিধারী জনপ্রতিনিধি তিনি পুরো উপজেলার মধ্যে জামাল একজনই। এ কারণে তিনি শিক্ষিত প্রজন্ম ও যুবকদের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করেছেন। উচ্চশিক্ষিত ও মার্জিত আচরণের অধিকারী বলে জামালের সুনাম রয়েছে।
অপরদিকে, চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আবুল কালাম বিগত ৩ বারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এলাকায় তার সুনাম থাকলেও শিক্ষাবিমুখ এবং জনপ্রশাসনের সাথে কার্যকর যোগাযোগ না থাকায় এলাকার উন্নয়নে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেননি।
সাবেক এ বিএনপি নেতা উপজেলার বিএনপিপন্থী ভোটারদের আনুকুল্য পেয়ে থাকে। পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের ‘মুনাফেক’ হিসেবে পরিচিত কতিপয় পাতি নেতাও কালামের পক্ষে ‘দালালী’ করার অভিযোগ পুরনো।
তবে এবারের চিত্র ভিন্ন, মূলধারার বিএনপি এখন কালামের পক্ষে নেই। আওয়ামী লীগের ‘মুনাফেক’ হিসেবে চিহ্নিতরাও আওয়ামী লীগের উর্ধ্বতন নেতাদের নজরদারীতে রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের ০৩ মার্চ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিস্কৃত হয়েছিলেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ‘বিএনপি/বহিস্কার/৭৭/২০১৯/৮৯’ স্মারকের একপত্রে এ বহিস্কারের তথ্যটি জানা গেছে।
নির্বাচনী প্রচারণায় চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আবুল কালামের পথসভায় প্রতিপক্ষ প্রার্থীর ব্যক্তিগত চরিত্র হনন ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় এবং প্রচারণায় পিভিসি ব্যানারের অভিযোগে বান্দরবান জেলা নির্বাচন অফিসার গত ৪ মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।