

স্টাফ রিপোর্টার:
বান্দরবানের রুমা উপজেলার রেমাইক্রী ইউনিয়নের কেসপাই পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে চরম অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় পাড়াবাসীরা জানান—বিদ্যালয়ে নিয়োজিত দুই সহকারী শিক্ষক দেব জ্যোতি দাশ ও আসারফুর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত স্কুলে উপস্থিত না থেকেও নিয়মিত হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না করেই সরকার থেকে সম্পূর্ণ বেতন তুলে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, প্রায় দুই বছর ধরে বিদ্যালয়ের শিশুরা তাদের মুখও দেখেনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। কোনো ছাত্রছাত্রী শ্রেণিকক্ষে নেই—কেউ ঝিড়ির পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আবার কেউ পাড়ার মাঝখানে খেলাধুলা করছে। বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে ছাত্রছাত্রীরা জানায়, মাসে মাত্র কয়েকদিন বর্গা শিক্ষক ক্লাস নেন। মাঝে-মধ্যে প্রধান শিক্ষকও আসেন, তবে তা খুবই অনিয়মিত।
পাড়াবাসীদের অভিযোগ, ২৪-২৫ সালে দুই সহকারী শিক্ষক বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান না করে রুমা বান্দরবানে অবস্থান করছেন। এ সময়ে শিক্ষাদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একজন বর্গা শিক্ষক—হোপা খুমীকে,যিনি নিয়মিত পাঠদান করলেও তাকে কোনো সরকারি সম্মানী দেওয়া হয় না।
ছাত্ররা জানান, ওই দুই শিক্ষককে তারা সর্বশেষ মাত্র একদিন পাড়ায় দেখেছিলেন, তাও কোনো ক্লাস নেওয়া হয়নি। কত বছর ধরে তারা এভাবে অনুপস্থিত—এ প্রশ্ন করা হলে ছাত্ররা জানায়, ২–৩ বছর হয়ে গেছে, তারা আর বিদ্যালয়ে আসছেন না। ফলে তাদের মুখও আর দেখা যায় না বলে ছাত্ররা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন।
এইভাবে শিক্ষকের দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ের পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে ছাত্রদের বক্তব্য থেকে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক দেব জ্যোতি দাশ স্বীকার করেন যে বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত না থেকেও বেতন গ্রহণ করা ‘অবৈধ’ এবং তারা এই অনিয়ম করেছেন। তিনি আরও জানান, প্রায় দুই বছর ধরে স্কুলে পাঠদান করেননি তারা।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেপাই খুমী বলেন, “দেব জ্যোতি দাশ ও আসারফুর—এই দুই শিক্ষক জেলা পরিষদের নিয়োগ নিয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথমবার বিদ্যালয়ে যোগদান করতে এসেছিলেন। এরপর পুরো তিন বছরে তারা সর্বমোট দুই দিন স্কুলে উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান বন্ধ রেখেও নিয়মিত বেতন তুলছেন তারা।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আশিষ চিরানকে জিজ্ঞাসা করা হলে—কীভাবে একটি স্কুলের দুই সহকারী শিক্ষক গত ২–৩ বছর ধরে ক্লাস না নেওয়া এবং দৈনিক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত বেতন পেয়ে আসছেন—তিনি জানান, “আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না; প্রধান শিক্ষক আমাকে কখনোই এ বিষয়ে জানায়নি। যদি আমি আগে জানতাম, তাহলে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাউকে বেতন নেয়ার সুযোগ থাকত না। সরকারি আইনে এমনটির কোনো সুযোগ নেই।
রেমাইক্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিরা বম বলেছেন, পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় কেসপাই পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই সহকারী শিক্ষক নিয়মিত পাঠদান না করেও বেতন গ্রহণের সুযোগ পেয়েছে বহিরাগত শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষা অফিসারের তদারকির অভাবের কারণে। যদি সঠিকভাবে তদারকি হতো এবং স্থানীয়দের নিয়োগ দেওয়া হতো, তবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। স্কুলে না এসে বেতন নেওয়া—এটা কীভাবে সম্ভব?”
চেয়ারম্যান আরও জানান, এ ধরনের সমস্যা রোধ করতে স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
স্থানীয় জনগণ বিদ্যালয়ের এহেন অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের দ্রুত তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণে শিশুদের মৌলিক শিক্ষা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।
কেসপাই পাড়া স্কুলের সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটিতে মোট চারজন শিক্ষক রয়েছে। তবে বাস্তবে নিয়মিত ক্লাস পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রায়শই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষক জনাব জোনথুমা ত্রিপুরা-ই উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রকাশিত অভিযোগগুলো তদন্তে আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেওয়া হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ জসিম উদ্দিন
সম্পাদক: হ্লাথোয়াইচিং মারমা (ভদন্ত নাইন্দিয়া থের)
নির্বাহী সম্পাদক: মংহাইথুই মার্মা
প্রধান কার্যালয়ঃ রুমা বাজার, মসজিদ গলি,রুমা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।
অফিস হটলাইন নাম্বার: +8801606760388
ইমেইল : rumabarta23@gmail.com
নিউজ পোর্টালটি তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনে জন্য আবেদিত
rumabarta.com