আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সেনাবাহিনীতে জোরপূর্বক নিয়োগ অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমার জান্তা। এজন্য যাকেই পাচ্ছে তাকেই ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কখনও রাস্থা থেকে আবার কখনও হানা দিচ্ছে বাড়িতে। এভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য শত শত তরুণ ও তরুণীকে অপহরণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতীর এক প্রতিবেদন মতে, চলতি বছরের শুরু থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সেনা নিয়োগ জোরদার করেছে। এরই অংশ হিসেবে রাজ্যে রাজ্যে অভিযান চালানো হচ্ছে। মন্দিরের শহরখ্যাত মান্দালয় ও বাগান এলাকা থেকে শত শত যুবক-যুবতীকে অপহরণ করা হয়েছে।
স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা মান্দালয় স্ট্রাইক কমিটি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জানুয়ারি মাসে মান্দালয়ের সাতটি টাউনশিপে শাসকগোষ্ঠী অন্তত ২৩৭ জনকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। ভুক্তভোগী এসব যুবক-যবতীর বয়স মূলত ২০ ও ৩০-এর কোঠায়।
মান্দালয় স্ট্রাইক গ্রুপের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যারা পালানোর চেষ্টা করেছিল এবং আদেশ অমান্য করেছিল, তাদের বন্দুকের মুখে জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়। জান্তা সেনারা তল্লাশির অজুহাতে রাতের বেলায় বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে, লোকজনকে মারধর ও গ্রেফতার করছে।’
চলতি বছরের শুরুর দিক থেকে জান্তা মান্দালয়ে অভিযান ও অপহরণ বৃদ্ধি করেছে। শহরের বিভিন্ন চেকপয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ, সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই নিরাপত্তা বাহিনী যানবাহনের লাইসেন্স, মোবাইল ফোন ও ভিপিএন ব্যবহার পরীক্ষা করে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই ঘটনাস্থলেই গ্রেফতার করছে।
মানবাধিকার সংস্থা আরও জানিয়েছে, তারা (জান্তা) মূলত কর্মক্ষেত্রে যাওয়া ও ফেরার পথে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করছে। তারা তরুণদের সশস্ত্র সংঘাতে টেনে আনছে। তীব্রতর অভিযানের ফলে সন্ধ্যা ৬টার পর মান্দালয়ের রাস্তাগুলো মূলত জনশূন্য হয়ে পড়ছে।
যোগ্য পুরুষদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা.....
যুদ্ধ করার জন্য যোগ্য এমন যেকোনো নাগরিকের বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জান্তা কর্তৃপক্ষ। এখন থেকে সরকারের অনুমতি ছাড়া কেউ বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায় এএফপি।
চার বছর আগে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটিতে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসার পর থেকে গৃহযুদ্ধ চলছে। তখন থেকে দেশজুড়ে জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠী ও অন্যান্যদের সঙ্গে লড়াইয়ে একের পর এক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে জান্তা সরকার।
সামরিক শাসনের বিরোধিতায় গড়ে ওঠা পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) ও জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো জান্তা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছে। এই লড়াইয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে জান্তা বাহিনী।
গত মাসের শেষের দিকে একটি আইন পাস করে জান্তা সরকার। এই আইনে সেনাবাহিনীতে নিয়োগের যোগ্য ব্যক্তিদের ওপর নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, যেসব পুরুষের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছর এবং নারীর ১৮ থেকে ২৭ বছর তারা সরকারের অনুমতি ছাড়া দেশত্যাগ করতে পারবে না।
আইনের ৫১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আদেশের আওতায় পড়বেন তাকে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে না।’ নতুন এই নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে, যারা সেনাবাহিনীতে ডাক পেয়েছেন অথবা সামরিক পরিষেবা থেকে ছাড়, বরখাস্ত বা নিয়োগ স্থগিতের ঘটনায় আপিলের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছেন।
জান্তা সরকারের এই আদেশ অমান্য করা হলে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। সেনাবাহিনীতে নিয়োগের এই আইন মিয়ানমারের সাবেক জান্তা সরকারের রচিত। তবে আইনটি গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কার্যকর করা হয়। সামরিক পরিষেবা আইনে বাহিনীতে নিয়োগের জন্য ডাক পাওয়া ব্যক্তিদের কমপক্ষে দুই বছর দায়িত্ব পালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
তবে জরুরি অবস্থা চলাকালীন বাহিনীতে কাজ করার এই বাধ্যবাধকতা পাঁচ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও আইনে বলা হয়েছে। কেউ এই আইন উপেক্ষা করলে তার একই মেয়াদের জন্য কারাদণ্ডের বিধানও রয়েছে আইনে।
চলছে নারী সেনা নিয়োগ....
দ্য ইরাবতীর পৃথক এক প্রতিবেদন মতে, ইয়াঙ্গুন অঞ্চলে নারীদের নিবন্ধন করে সামরিক চাকরির জন্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পুরনো সেনা নিয়োগ আইন বাতিল করা হয়। এরপর এখন পর্যন্ত পুরুষ নিয়োগপ্রাপ্তদের ৯টি ব্যাচকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহে (২৯ জানুয়ারি) ইরাবতীর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে মিয়ানমার জান্তা সরকার ইয়াঙ্গুন অঞ্চলে নারীদের তালিকা তৈরি শুরু করে, যার মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারের বৃহত্তম শিল্প অঞ্চল হ্লাইং থারিয়ার টাউনশিপ, যেখানে লাখ লাখ নারী কারখানায় কাজ করেন।
অন্যান্য শহরগুলির মধ্যে রয়েছে থানলিন, কিয়াউকতান, কায়ান, থংওয়া, সাউথ দাগন ও ডাগন সেইক্কান, ইয়াঙ্গুনের উপকণ্ঠে অবস্থিত তামওয়ে, থাকেতা, ইয়ানকিন, দাবন ও থিংগানইউন। বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে মিয়ানমার জান্তা সরকার তীব্র সৈন্য সংকটের মুখোমুখি হওয়ায় এবার নারীদের নিবন্ধন শুরু হয়েছে।
সম্পাদক: হ্লাথোয়াইচিং মারমা (ভদন্ত নাইন্দিয়া থের)
নির্বাহী সম্পাদক: মংহাইথুই মার্মা
প্রধান কার্যালয়ঃ রুমা বাজার, মসজিদ গলি,রুমা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।
অফিস হটলাইন নাম্বার: +8801606760388
ইমেইল : rumabarta23@gmail.com