উপজেলা প্রতিনিধি।।বাঘাইছড়ি।।
সুপেয় পানির জন্য ভুগছেন রাঙ্গামাটির দুর্গম পাহাড়ি এলাকার মানুষ। পাহাড়ে বসবাসের কারণে সারাবছর এসব গ্রামবাসীকে স্থানীয় ঝিরি-ঝরনার পানির ওপর নির্ভর হয়ে জীবনধারণ করতে হয়। ঘরের সব কাজসহ পানি পানের জন্য এ ঝিরি-ঝরনার পানি ব্যবহার করা হয়।
সাধারণত বর্ষার সময় থেকে শীত মৌসুম পর্যন্ত ঝিরি-ঝরনা থেকে পানি সংগ্রহ করা গেলেও মাঘ-ফাল্গুন থেকে পাহাড়ে সুপেয় পানির সঙ্কট দেখা দেয়। সরকারের উদ্যোগে দুর্গম কিছু কিছু পাহাড়ি গ্রামে রিংওয়েল ও টিউবওয়েল স্থাপন করা হলেও শুকনো মৌসুমে এসব থেকে পানি পাওয়া যায় না। গ্রামবাসী আশপাশের নিচু জায়গায় কুয়া থেকে পানি সংগ্রহ করলেও শুকনো মৌসুমেও এসব কুয়া শুকিয়ে যায়। তার ওপর নভেম্বরের পর থেকে এবছর এখনো পাহাড়ি অঞ্চলে বৃষ্টি না হওয়ায় বিশুদ্ধ পানির জন্য ধুকছে এসব গ্রামের মানুষ।
গ্রীষ্মের এই দাবদাহে দুই তিনঘণ্টা হেঁটে পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে অনেকে কাচালং হ্রদ থেকে পানি সংগ্রহ করে আবার অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে পাশের গ্রাম কিংবা হ্রদ থেকে পানি সংগ্রহ করছে। এ যেন এক কলসির ঘামের দামে এক কলসি পানি সংগ্রহ করছে পাহাড়ি এসব মানুষ।
সাজেক ইউনিয়নের স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাঙামাটি ১০ জেলার মধ্যে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের পানির সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকার মানুষ বেশিরভাগই পাহাড়ের ওপর বসবাসের কারণে গভীর নলকূপও স্থাপন করা সম্ভব হয় না। কিছুটা নিচু জায়গায় পানির স্তর পাওয়া গেলেও সেখান থেকেও পানি সংগ্রহ করতে কষ্ট হয় এসব মানুষের। তারপরও শুকনো মৌসুমে ঝিরি-ঝরনা শুকিয়ে যাওয়ার কারণে পানির স্তরও পাওয়া যায় না। একসময় সারা বছরই এইসব গ্রামের মানুষ পার্শ্ববর্তী ঝিরি-ঝরনার পানির ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। তাই তো শুকনো মৌসুম শুরু হলে এসব গ্রামের মানুষের কাছে এক কলসি পানি যেন সোনার হরিণ। আর সেটা যদি সুপেয় পানি হয় তাহলে তো কথায় থাকে না।
স্থানীয় সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, মূলত সমতলের পদ্ধতি ব্যবহার করে পাহাড়ে সুপেয় পানির সংকট নিরসন করা সম্ভব না। পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সঠিক মতো পাওয়া যায় না। যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপনের মধ্য দিয়েও পুরোপুরি পানি সঙ্কট সমাধান সম্ভব নয়। এজন্য গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
বাঘাইছড়ির সাজেকের তারুম পাড়ার বাসিন্দা মিতা চাকমা। তার এলাকায় ২৫ পরিবারের বসবাস। গ্রামের নিচু জায়গায় রিংওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, শীতের পর থেকে গ্রামে পানির কষ্ট বেড়ে যায়। পাশের ঝিরি থেকে অন্যান্য সময় পানি পাওয়া গেলেও শুকনো মৌসুমে সেটাও থাকে না। ছড়া শুকিয়ে সড়কের মত হয়ে যায়। তাই তো ঘণ্টাখানেক পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে পাশের গ্রাম থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। প্রতিদিনের স্নানও হয় না বলে জানান তিনি।
সাজেকের শিয়ালদহ ১৬৯ নম্বর মৌজার হেডম্যান ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার জৈপুথাং ত্রিপুরা জানান, সাজেকের শিয়ালদহ, কংলাক, বেটলিং, লংকরসহ বেশ কয়েকটি মৌজায় খাবার পানির সংকট চলছে। এরমধ্যে পুরাতন জুপুই পাড়ায় ৪০ পরিবার, নিউ থাংনাং পাড়ায় ৫০ পরিবার, তারুম পাড়ায় ২৫ পরিবার, কমলাপুর পাড়ায় ১৯ পরিবার, লুংথিয়ান পাড়ায় ৬২ পরিবার, অরুণ পাড়ায় ৭০ পরিবার, খাইচ্যা পাড়ায় ৩০, শিয়ালদাহ ৬২ পরিবার, হাইস্কুল পাড়ায় ৩৫, খগড়াকিচিং পাড়ায় ২৬, নিউ লংকরে ২২ পরিবার, অলংকরে ১৮ পরিবার, হুাদুকপাড়ায় ১৪ পরিবার এবং আনন্দ পাড়ায় ২৮ পরিবার বসবাস করে। তাদের প্রত্যেকেই তীব্র পানির সঙ্কটে ভুগছেন।
সাজেক ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা জানিয়েছেন, সাজেকে সারা বছরই খাবার পানির সংকট থাকে। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় এবছর অন্যান্য বছরের চেয়ে পানির জন্য হাহাকার বেশি। এলাকাগুলো দুর্গম ও সীমান্তবর্তী হওয়ার কারণে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করাও খুব কঠিন। অনেককেই বসতবাড়ি থেকে ৭০-৮০ ফুট পাহাড়ি পথ বেয়ে নিচে নেমে কুয়া বা রিংওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করে। কিন্তু বর্তমানে সেগুলোও শুকিয়ে গেছে।
এদিকে কাচালং হ্রদেও পানি সঙ্কটের কারণে সুপেয় পানির সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। হ্রদ থেকে পরিষ্কার পানি নিয়ে ফুটিয়ে পান করার জন্যও বেগ পেতে হচ্ছে। শুকনো মৌসুম হওয়ায় পানির স্তর একেবারে নিম্নস্তরে রয়েছে। এজন্য অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে হ্রদের পানি দেখা মিলছে।
সম্পাদক: শৈমং মার্মা (শৈবং)
নির্বাহী সম্পাদক: মংহাইথুই মার্মা
প্রধান কার্যালয়ঃ রুমা বাজার, মসজিদ গলি,রুমা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।
ফোন:০১৬৭৭১৪২৯৪৫,০১৫৫৩১২২৩৮৮।
ইমেইল : rumabarta23@gmail.com
www.rumabarta.com